Post Updated at 7 Apr, 2023 – 11:56 AM

রমযান মাসের ফরজ রোজা রাখার পর কেউ যদি তা ভেঙ্গে ফেলে, তবে কখনো এক রোজার পরিবর্তে একটি রোজা কাযা করলেই চলে। আবার কখনো কাযাও করতে হয়, এর সঙ্গে কাফফারাও আদায় করতে হয়। অবশ্য রমযানের রোজা ছাড়া অন্য কোনো রোজা রাখার পর কেউ ভেঙ্গে ফেললে কেবল কাযাই করতে হয়, কাফফারা আদায় করতে হয় না। নিচে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :

 যেসব কারণে শুধু কাযা করতে হয়

  1. অযু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা আদায় করতে হবে। তাই রোযা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৩ সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৮৫ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৩৮০
  2. যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। -সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা’লীক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০
  3. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬
  4. হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য।
  5. মুখে বমি চলে আসার পর  ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫
  6. রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাস শুরু হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। পরে তা কাযা করতে হবে।
  7. পেটের এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোযা ভেঙ্গে যাবে, যা দিয়ে ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে পরে সে রোযার কাযা করে নিতে হবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২
  8. নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
  9. মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
  10. সুবহে সাদিকের পর সাহরীর সময় আছে ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোযা  ভেঙ্গে যাবে। তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে   সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১
  11. রোজা রাখা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে পরবর্তীতে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করা জরুরি হবে।
  12. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোজা ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে।

যেসব কারণে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি

  1. রমযানে রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। সহীহ বুখারী ৬৭০৯; জামে তিরমিযী ৭২৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৪৫৭; মুসনাদে আহমদ ২/২৪১
  2. রোজা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১, মাবসূত, সারাখসী ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬
  3. বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে।-রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫
  4. সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আযান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাযা-কাফফারা দু’টোই জরুরি হবে।-সূরা বাকারা : ১৮৭; মাআরিফুল কুরআন ১/৪৫৪-৪৫৫

কাফফারা আদায়ের নিয়ম

একটি রোজার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখতে হবে। এটাই রোজার কাফফারা। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোজা রাখতে হবে। পেছনের রোজাগুলো কাফফারার রোজা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই। -আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬

 

উপরোক্ত মাসআলাগুলোসহ রোজার আরও মাসআলা দলিলসহ জানতে মাসিক আলকাউসার পত্রিকার এই লেখাটি পড়তে পারেন।

Comments
  1. অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ