
Post Updated at 27 Jan, 2025 – 7:51 PM
কয়েকটি লক্ষণীয় বিষয়
১. ফরয নামাযের জন্যে সর্বাবস্থায় কেবলা ঠিক রাখা জরুরি। কেবলামুখী না হলে নামায হবে না। অবশ্য সফরের সময় বাহনে আরোহী অবস্থায় কেবলামুখী হওয়া সম্ভব না হলে নফল নামায যে কোনো দিকেই ফিরে পড়া যায়।
২. ফরয-ওয়াজিব নামায দাঁড়িয়ে পড়াও ফরয। দাঁড়ানোর সক্ষমতা যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ বসে নামায পড়লে হবে না। তবে যানবাহনে আরোহী অবস্থায় যদি দাঁড়ানোর সুযোগ বা সামর্থ্য না থাকে, সে সময় ফরয-ওয়াজিব নামাযও বসে আদায় করলে হয়ে যাবে।
৩. যদি কারও স্বাভাবিক নিয়মে জমিনে সিজদা আদায় করার মতো শারীরিক সুস্থতা ও সক্ষমতা থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই সিজদা জমিনে স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করতে হবে। জমিনে সিজদা করতে সক্ষম হয়েও যদি ইশারায় সিজদা করে তাহলে নামায হবে না।
সুতরাং দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলে দাঁড়িয়ে, অন্যথায় বসে বসে যদি রুকু-সিজদা করে কেবলামুখী হয়ে নামায পড়া যায়, তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে। পরে আর তা পড়তে হবে না। কিন্তু যদি স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা করা না যায়, কিংবা কিবলামুখী হওয়া না যায়, তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামায পড়ে নেবে। পরবর্তীতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে সতর্কতামূলক সে ফরয নামায আবার পড়ে নেবে। [মাসিক আলকাউসার, আগস্ট ২০১৭, প্রশ্ন : ৪১৩৪]
ট্রেনে নামায
কোনো কোনো ট্রেনে নামাযের জন্যে পৃথক রুম থাকে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যায়। তবে যদি চলতি ট্রেনে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে অসুবিধা হয়, তাহলে অবশ্য বসেও নামায পড়া যেতে পারে।
যদি নামাযের জন্যে পৃথক রুম না থাকে, তাহলে দুই সিটের মাঝে কিংবা চলাচলের রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যেতে পারে। রাস্তায় নামায পড়লে সামনে সুতরা ব্যবহার করুন।
ট্রেন যদি উত্তর বা দক্ষিণ দিকে চলে তাহলেই সাধারণত (শোভন/কেবিন) সিটগুলো পূর্ব-পশ্চিমমুখী হয়ে যায়। তখন স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা করে সিটেও নামায পড়া যেতে পারে। কিন্তু ট্রেন যদি পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে চলতে থাকে, তখন সিটগুলো থাকে উত্তর-দক্ষিণমুখী। এ অবস্থায় সিটে নামায পড়লে স্বাভাবিক সিজদা করা সম্ভব হয় না।
ট্রেনের সিট যদি চেয়ারজাতীয় হয়, আর দুই সিটের মাঝের হাতল সরিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে কেবলামুখী হয়ে সিজদা করা যায় তাহলে এভাবেই নামায আদায় করতে হবে।
যে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা আদায় করে নামায পড়া সম্ভব হবে না, সে ক্ষেত্রে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই তখন নামায পড়তে হবে এবং পরবর্তীতে সতর্কতামূলক নামায কাযা করে নেবে।
বাসে নামায
চলন্ত বাসে সাধারণত স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা আদায় করে নামায পড়া সম্ভব হয় না। তাই যদি বাস থেকে নেমে নামায পড়া সম্ভব হয় তাহলে তা-ই করতে হবে। আর যদি চালকের অসহযোগিতা কিংবা এ জাতীয় কোনো কারণে নিচে নেমে নামায পড়া সম্ভব না হয় তাহলে চলন্ত বাসেই যেভাবে সম্ভব নামায আদায় করে নিবে এবং পরবর্তীতে সতর্কতামূলক এই নামায আবার কাযা করে নেবে।
উড়োজাহাজে নামায
কোনো কোনো উড়োজাহাজে নামাযের পৃথক জায়গা থাকে। এছাড়া সকল উড়োজাহাজে চলাচলের রাস্তা থাকে। তাই একটু সচেতন হলে কাউকে কষ্ট না দিয়ে যথানিয়মে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদা করেই নামায পড়া সম্ভব। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই পড়বে, পরে আবার সতর্কতামূলক কাযা করে নেবে।
নৌকা লঞ্চ স্টিমারে নামায
এসব যানবাহনে কেবলামুখী হয়ে সিজদা আদায় করে নামায পড়া তুলনামুলক সহজ। তবে দিক পরিবর্তনের বিষয়টি খেয়াল রাখবে। সুতরাং কেবলামুখী হয়ে নামাযে দাঁড়ানোর পর যদি যানবাহনের দিক পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে নামাযের মধ্যেই ঘুরে যেতে হবে এবং যেদিকে কেবলা সেদিকেই মুখ করতে হবে। অন্যথায় নামায হবে না। আর যদি নামায শেষ করার পর কেবলা পরিবর্তনের কথা জানতে পারে, তাহলে নামায হয়ে যাবে। যানবাহনের দিক পরিবর্তন হলে নামাযীকেও ঘুরে যেতে হবে- এ মাসআলাটি সকল যানবাহনের ক্ষেত্রেই প্রজোয্য।
নামাযের মধ্যে যদি বাহন ঘুরে যায়
কেউ কেউ মনে করেন, একবার কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর যদি বাহন ঘুরে যায় এবং কেবলার দিক পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলেও নামায হয়ে যাবে, নতুন করে কেবলা ঠিক করতে হবে না। এই ধারণাটি ভুল। নামাযে যতক্ষণ থাকবেন পুরো সময়ই কেবলামুখী হয়েই থাকতে হবে। তাই যানবাহন ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকেও সঠিক কেবলার দিকে ফিরে যেতে হবে। তাই সম্ভব হলে নামায শুরুর পূর্বে অভিজ্ঞ যাত্রীদের কাছ থেকে সামনের পথের কেবলা সম্পর্কেও জেনে নিন। অবশ্য নামাযের মধ্যে যদি কেবলা পরিবর্তনের বিষয়টি আঁচ করা না যায়, তাহলে ভুল কেবলার দিকে ফিরে আদায় করা নামাযও সহীহ হয়ে যাবে।
মুসাফিরের কসর নামাজের বিধান সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
কিবলা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে পড়ুন- নামাযে কিবলামুখী হওয়ার বিধান
[সূত্র : আদদুররুল মুখতার ও রদদুল মুহতার, ২/১১৬, ২/৫৭৩, আহসানুল ফতোয়া, ৪/৮৭]
Comments (27)
আবদুল আহাদsays:
July 8, 2023 at 2:11 PMঅনেক তথ্যবহুল পোস্ট।
দোআ করি আপনারা এভাবেই এগিয়ে যান।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
Ayeshasays:
October 28, 2024 at 5:38 AMআমার বিয়ে কিছুদিন পর আমি কিভাবে মাইক্রোতে নামাজ পড়ব সেখানে তো দারানো যায়না সেজদাও করা যায়না
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
October 30, 2024 at 11:09 AMমাইক্রোকে চাইলেই যে কোনো স্থানে থামানো যায়। সুবিধামতো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ পড়বেন।
sadiasays:
October 28, 2024 at 6:34 PMআমি খুঁজতে এসেছিলাম চলন্ত গাড়ির মাঝে নামাজ কিভাবে আদায় করবো, সেটা৷ যেহেতু তখন আমরা দাড়াতে পারি না৷ তখন কি বসে নামাজ পড়বো? আর স্বাভাবিক যে সেজদা, সেটাও তো দেওয়া যায় না সিটে বসে৷
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
October 30, 2024 at 11:06 AMগাড়ি বলে আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? বাস, না প্রাইভেট কার জাতীয় কিছু? যদি বাস হয়, তাহলে এর বিধান তো লেখা হয়েছে। ট্রেনের শোভন চেয়ার আর বাসের চেয়ার একই রকম হয় সাধারণত। যদি মাঝের হাতল সরিয়ে, কিবলামুখী হয়ে বসে এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদা করে নামাজ আদায় করা যায়, তাহলে এভাবেই পড়তে হবে। আর যদি কিবলামুখী হওয়া না যায়, কিংবা কিবলামুখী হওয়া গেলেও স্বাভাবিক সিজদা আদায় করা না যায়< তাহলে যেভাবে তখন সম্ভব সেভাবেই পড়ে নেবেন, পরবর্তীতে সতর্কতামূলক এ নামাজ আবার কাজা করবেন। পরবর্তীতে পড়তে তো হবেই, এখন আর পড়ে কী লাভ- এমনটা ভেবে নামাজ ছেড়ে দেবেন না। আর আপনি যদি প্রাইভেটকার জাতীয় কোনো গাড়ির কথা বলে থাকেন, তাহলে কথা হলো, প্রাইভেটকার যেহেতু সুবিধাজনক স্থানে দাঁড় করিয়ে নামাজ স্বাভাবিকভাবে আদায় করা সম্ভব, তাই গাড়িতে নামাজ না পড়ে গাড়ি থেকে পথিমধ্যে কোথাও নেমে নামাজ আদায় করুন। এ বিধান অবশ্য ফরজ-ওয়াজিব নামাজের ক্ষেত্রে। নফল নামাজ অবশ্য সফরের সময় গাড়িতে বসেও পড়া যাবে। সেখানে কিবলামুখী হতে না পারলে কিংবা সিজদা করতে না পারলেও অসুবিধা নেই।
আব্দুর রাকিবsays:
October 29, 2024 at 5:28 PMমাশা আল্লাহ!
তৌহিদুল ইসলামsays:
October 30, 2024 at 6:18 AMজাযাকাল্লাহু খাইরান
আল আমিনsays:
October 31, 2024 at 5:39 PMআলহামদুলিল্লাহ
Md Abdul Maleksays:
November 5, 2024 at 7:41 AMI’m very glad to your narration. Jajakallah khairan.
রবিউস সানিsays:
August 4, 2025 at 5:38 AMহুজুর ওযু করার যদি ব্যবস্থা না থাকে তাহলে অজু ছাড়াই কি যানবাহনে নামাজ পড়বো
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
August 15, 2025 at 7:28 AMতায়াম্মুম করতে হবে। তাও যদি করার সুযোগ না থাকে, তাহলে ওজু ছাড়াই নামায পড়বেন। পরবর্তীতে সে নামায আবার কাযা করে নিতে হবে।
Wasimasays:
August 4, 2025 at 5:52 PMনারীরা কীভাবে যানবাহনে নামায আদায় করবে?
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
August 15, 2025 at 7:20 AMযানবাহনে নারীদেরও নামায আদায় করতে হবে যথানিয়মে। তবে সেখানে পরপুরুষ থাকলে তারা চেহারা ঢেকে রেখেই নামায আদায় করবে। পর্দা লঙ্ঘন যেন না হয়।
মোহাম্মদ আল আমিনsays:
August 5, 2025 at 10:53 AMআলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ। অনেক জরুরী বিধান।
জয়নাব সুলতানাsays:
August 5, 2025 at 4:52 PMশুকরিয়া সুন্দর লেখার জন্য, আমি উপরে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী সফরে নামাজ আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ
::Ayesha siddikasays:
August 7, 2025 at 8:06 PMAlhamdulillah for everything
সাঈদsays:
August 8, 2025 at 5:54 AMখুব সুন্দর ব্যাখ্যাসহ লিখার জন্য শুকরিয়া
Laboni Aktersays:
August 8, 2025 at 4:35 PMসুতরা মানে কি?
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
August 15, 2025 at 7:00 AMনামায আদায়রত কারও সামনে দিয়ে যেতে হলে সামনে কিছু একটা রেখে যেতে হয়। এটাই সুতরা।
Fariha Islam 🇧🇩says:
August 8, 2025 at 4:41 PMআলহামদুলিল্লাহ।
labonisays:
August 8, 2025 at 4:42 PMআলহামদুলিল্লাহ।
মোঃ হোসেনsays:
August 9, 2025 at 5:54 AMমাশাআল্লাহ খুব সুন্দর আলোচনা।
জাযাকাল্লাহু খাইরান
মোঃ মাইনুল ইসলামsays:
August 10, 2025 at 6:12 AMআসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
বাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যদি যাত্রা বিরতি এতটুকু পাওয়া যায় যে শুধু ফরজ নামাজ টুকু আদায় করা যাবে সেক্ষেত্রে সুন্নত না পড়লে কি গুনাহ হবে।
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
August 15, 2025 at 6:56 AMওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
মুসাফিরের জন্যে তো সুন্নত না পড়ারও সুযোগ আছে। সে হিসেবে যাত্রাবিরতিতে আপনি যদি শুধু ফরয পড়েন, সুন্নত না পড়েন, তাহলে গোনাহ হবে না। অবশ্য ফজরের সুন্নত যতটা সম্ভব আদায় করা উচিত। আর ইশার বিতির নামায সফর অবস্থায়ও আদায় করা ওয়াজিব।
মোঃ শামীমsays:
August 14, 2025 at 6:04 AMকোন কোন সময় ফজরের নামাজে উঠতে দেরি হয়ে যায়, এমত অবস্থায় সূর্য উঠার সময়ও কি ফজরের নামাজ পড়া যাবে কি,,
Muslims Day Desksays:
August 14, 2025 at 8:36 AMজ্বি না। পরিপূর্ণ ভাবে সূর্যোদয় হওয়ার পর ফজরের নামাজ পড়তে হবে।
Umme Habibasays:
August 14, 2025 at 11:19 PMমাশা-আল্লাহ এউ নিয়মটা আগে জানতাম না এখন জেনে খুবই উপকার হলো. জাজাকাল্লাহ খাইরান ☺️