Post Updated at 28 Oct, 2023 – 8:03 PM
যানবাহনেও নামাজের সময় কেবলামুখী হওয়া জরুরি
ফরজ নামাজের জন্যে সর্বাবস্থায় কেবলা ঠিক রাখা জরুরি। কেবলামুখী না হলে নামাজ হবে না। অবশ্য সফরের সময় নফল নামাজ যে কোনো দিকেই ফিরে পড়া যায়। আর যদি কারও স্বাভাবিক নিয়মে সেজদা আদায় করার মতো শারীরিক সুস্থতা ও সক্ষমতা থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই সেজদা স্বাভাবিক নিয়মে আদায় করতে হবে। সেজদা করতে সক্ষম হওয়ার পরও ইশারায় সেজদা করলে নামাজ হবে না।
ট্রেনে নামাজ পড়ার পদ্ধতি
কোনো কোনো ট্রেনে নামাজের জন্যে পৃথক রুম থাকে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যায়। তবে যদি চলতি ট্রেনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে মাথা ঘুরতে থাকে, তাহলে অবশ্য বসেও নামাজ পড়া যেতে পারে।
যদি নামাজের জন্যে পৃথক রুম না থাকে, তাহলে দুই সিটের মাঝে কিংবা চলাচলের রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া যেতে পারে। রাস্তায় নামাজ পড়লে সামনে সুতরা ব্যবহার করুন। বসার সিট যদি কেবলামুখী অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি হয় তাহলে সিটেও নামাজ পড়া যেতে পারে। ট্রেন যদি উত্তর বা দক্ষিণ দিকে চলে তাহলেই সাধারণত (শোভন) সিটগুলো পূর্ব-পশ্চিমমুখী হয়ে যায়। কিন্তু ট্রেন যদি পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে চলতে থাকে, তখন সিটগুলো থাকে উত্তর-দক্ষিণমুখী। এ অবস্থায় সিটে নামাজ পড়লে কেবলামুখী হয়ে স্বাভাবিক সেজদা করা সম্ভব হয় না। তাই তখন সিটে নামাজ পড়া যাবে না।
মুসাফিরের কসর নামাজের বিধান সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
ট্রেনের সিট যদি চেয়ারজাতীয় হয়, তাহলেও কেবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া এবং স্বাভাবিক নিয়মে সেজদা করা জরুরি। যদি দুই চেয়ারের মাঝের হাতল সরিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে কেবলামুখী হয়ে সেজদা করা যায় তাহলেই নামাজ হবে, অন্যথায় এ চেয়ারে নামাজ হবে না।
বাসে নামাজ পড়ার পদ্ধতি
বাসের সিট যেহেতু সাধারণত ট্রেনের শোভন চেয়ারের সিটের মতোই, তাই এখানে উপরের বিধান অনুসারেই নামাজ পড়তে হবে। যেভাবে নামাজ পড়লে কেবলামুখী হয়ে স্বাভাবিক সেজদা করে নামাজ পড়া যায় সেভাবেই সেজদা করে নামাজ পড়তে হবে। অন্যথায় নামাজ হবে না।
নৌকা লঞ্চ স্টিমার বা জাহাজে নামাজ পড়ার পদ্ধতি
এসব যানবাহনে কেবলামুখী হয়ে সেজদা আদায় করে নামাজ পড়া তুলনামুলক সহজ। তবে এগুলোতে দিক পরিবর্তন হয় ঘন ঘন। তাই কেউ যদি কেবলামুখী হয়ে নামাজে দাঁড়ানোর পর যানবাহনের দিক পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে নামাজের মধ্যেই ঘুরে যেতে হবে এবং যেদিকে কেবলা সেদিকেই মুখ করে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় নামাজ হবে না। আর যদি নামাজ শেষ করার পর কেবলা পরিবর্তনের কথা জানতে পারে, তাহলে নামাজ হয়ে যাবে। দিক পরিবর্তনের এ মাসআলাটি সকল যানবাহনের ক্ষেত্রেই প্রজোয্য।
বিমানে নামাজ পড়ার পদ্ধতি
বিমানে সাধারণ যাত্রীদের সিটগুলোর মাঝেও কিছু কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। একটু সচেতন হলে তাই বিমানেও যথানিয়মে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে এবং সেজদা আদায় করেই নামাজ পড়া সম্ভব।
যদি সেজদা করার সুযোগ না পাওয়া যায়
কোনো বাহনে যদি অতিরিক্ত ভিড়, কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা কিংবা অব্যবস্থাপনার কারণে কেবলামুখী হয়ে স্বাভাবিক সেজদা করে নামাজ পড়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই তখন নামাজ আদায় করতে হবে এবং পরবর্তীতে সেই নামাজ আবার সতর্কতামূলক কাজাও করতে হবে।
যদি কেবলা জানা না থাকে তাহলে নামাজের পদ্ধতি
কেবলা জানা না থাকলে কেবলা জানে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করে সঠিক কেবলা জেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপের সহযোগিতাও নিতে পারেন। আর যদি কেবলা জানে এমন কেউ সেখানে না থাকে, তাহলে নিজেই মনে মনে চিন্তা করবে। মন যেদিকে সায় দেবে সেদিকে ফিরেই নামাজ পড়তে হবে। এমন পরিস্থিতিতে যদি নামাজ শেষ করার পর জানা যায়—কেবলাটি ভুল ছিল, তাহলে এই নামাজ আর পড়তে হবে না। আর নামাজে থাকা অবস্থায় যদি কেবলার ভুল জানা যায় কিংবা অন্য কোনো দিককে সঠিক কেবলা মনে হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ সঠিক কেবলার দিকে ঘুরে যেতে হবে এবং অবশিষ্ট নামাজ আদায় করতে হবে। সঠিক কেবলা জানার পরও দিক পরিবর্তন করতে যদি কেউ তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিলম্ব করে তাহলে নামাজ হবে না।
আর কেবলা জানে এমন কেউ থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ তাকে জিজ্ঞেস না করে নিজে নিজে চিন্তা করে একদিকে ফিরে নামাজ শুরু করে দেয়, যদি তার কেবলাটি ঠিক হয় তাহলে তো তার নামাজ হয়ে যাবে; কিন্তু যদি কেবলাটি ভুল হয় তাহলে তাকে নামাজ নতুন করে পড়তে হবে।
কেউ কেউ মনে করেন, একবার কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করার পর যদি বাহন ঘুরে যায় এবং কেবলার দিক পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে, নতুন করে কেবলা ঠিক করতে হবে না। এই ধারণাটি ভুল। নামাজে যতক্ষণ থাকবেন পুরো সময়ই কেবলামুখী হয়েই থাকতে হবে। তাই যানবাহন ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকেও সঠিক কেবলার দিকে ফিরে দাঁড়াতে হবে। তাই সম্ভব হলে নামাজ শুরুর পূর্বে অভিজ্ঞ যাত্রীদের কাছ থেকে সামনের পথের কেবলা সম্পর্কেও জেনে নিন।
[আদদুররুল মুখতার ও রদদুল মুহতার, ২/১১৬, ২/৫৭৩, আহসানুল ফতোয়া, ৪/৮৭]
Comments (8)
আবদুল আহাদsays:
July 8, 2023 at 2:11 pmঅনেক তথ্যবহুল পোস্ট।
দোআ করি আপনারা এভাবেই এগিয়ে যান।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
Ayeshasays:
October 28, 2024 at 5:38 amআমার বিয়ে কিছুদিন পর আমি কিভাবে মাইক্রোতে নামাজ পড়ব সেখানে তো দারানো যায়না সেজদাও করা যায়না
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
October 30, 2024 at 11:09 amমাইক্রোকে চাইলেই যে কোনো স্থানে থামানো যায়। সুবিধামতো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে নামাজ পড়বেন।
sadiasays:
October 28, 2024 at 6:34 pmআমি খুঁজতে এসেছিলাম চলন্ত গাড়ির মাঝে নামাজ কিভাবে আদায় করবো, সেটা৷ যেহেতু তখন আমরা দাড়াতে পারি না৷ তখন কি বসে নামাজ পড়বো? আর স্বাভাবিক যে সেজদা, সেটাও তো দেওয়া যায় না সিটে বসে৷
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
October 30, 2024 at 11:06 amগাড়ি বলে আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? বাস, না প্রাইভেট কার জাতীয় কিছু? যদি বাস হয়, তাহলে এর বিধান তো লেখা হয়েছে। ট্রেনের শোভন চেয়ার আর বাসের চেয়ার একই রকম হয় সাধারণত। যদি মাঝের হাতল সরিয়ে, কিবলামুখী হয়ে বসে এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদা করে নামাজ আদায় করা যায়, তাহলে এভাবেই পড়তে হবে। আর যদি কিবলামুখী হওয়া না যায়, কিংবা কিবলামুখী হওয়া গেলেও স্বাভাবিক সিজদা আদায় করা না যায়< তাহলে যেভাবে তখন সম্ভব সেভাবেই পড়ে নেবেন, পরবর্তীতে সতর্কতামূলক এ নামাজ আবার কাজা করবেন। পরবর্তীতে পড়তে তো হবেই, এখন আর পড়ে কী লাভ- এমনটা ভেবে নামাজ ছেড়ে দেবেন না। আর আপনি যদি প্রাইভেটকার জাতীয় কোনো গাড়ির কথা বলে থাকেন, তাহলে কথা হলো, প্রাইভেটকার যেহেতু সুবিধাজনক স্থানে দাঁড় করিয়ে নামাজ স্বাভাবিকভাবে আদায় করা সম্ভব, তাই গাড়িতে নামাজ না পড়ে গাড়ি থেকে পথিমধ্যে কোথাও নেমে নামাজ আদায় করুন। এ বিধান অবশ্য ফরজ-ওয়াজিব নামাজের ক্ষেত্রে। নফল নামাজ অবশ্য সফরের সময় গাড়িতে বসেও পড়া যাবে। সেখানে কিবলামুখী হতে না পারলে কিংবা সিজদা করতে না পারলেও অসুবিধা নেই।
আব্দুর রাকিবsays:
October 29, 2024 at 5:28 pmমাশা আল্লাহ!
তৌহিদুল ইসলামsays:
October 30, 2024 at 6:18 amজাযাকাল্লাহু খাইরান
আল আমিনsays:
October 31, 2024 at 5:39 pmআলহামদুলিল্লাহ