Post Updated at 22 Oct, 2023 – 12:52 PM
ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র গ্রহণযোগ্য দীন । আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দীন হচ্ছে ইসলাম”।[1] এছাড়া অন্যান্য দীন ও ধর্ম বাতিল। তাহলে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের প্রতি আমাদের আচরণ-ব্যবহার কেমন হবে?
কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট করেই আমাদের নিষেধ করেছেন- আমরা যেন অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রভুদের গালি না দিই।[2] তাদেরকে গালি দিলে তারা মনে কষ্ট পাবে এবং আমাদের প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলাকেও গালি দিবে। এজন্য অন্য ধর্মের দেবতা, ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে গালি দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
তাহলে আমরা কি তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাব? তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাব? সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়! আজকের এই লেখায় আমরা জানার চেষ্টা করব- পূজা দেখতে যাওয়ার বিধান বা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব দেখতে যাওয়ার বিধান সম্পর্কে।
পূজা, বড় দিন ইত্যাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব দেখতে যাওয়ার হুকুম – পূজা দেখতে যাওয়ার বিধান
আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষকে বলতে শোনা যায়- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এটা একটা অমানবিক ও অযৌক্তিক কথা। কোনো বিবেকবান ও মানবিক লোক এটা বলতে পারে না। ধর্মীয় বিশ্বাস যেই উৎসবের সাথে জড়িত থাকে সেই উৎসবকে সকলের জন্য সাধারণ করতে চাওয়া একটা হঠকারিতা। কারণ এক ধর্মের উপাসনা বা ধর্মীয় উৎসব আরেক ধর্মের অনুসারীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই একমাত্র ধর্মহীন বা নাস্তিক ব্যক্তির পক্ষেই বলা সম্ভব- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন, তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকো।[3] অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন- কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।
কোনো মুসলিম জাস্ট দেখার জন্য বা মজা করার জন্য অন্য কোনো ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিতে পারে না। এটা তার জন্য বৈধ নয়।
পূজা, বড়দিন বা অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ নয়। কারণ আমরা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বলে স্বীকার করি না। তাই আমরা যদি অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানাই, তাহলে প্রকারান্তরে তাদের করা শিরকের উৎসবে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তাদের কাছে যেটা তাদের ধর্মের উপাসনা, আমাদের কাছে সেটা আল্লাহর সাথে শিরক করা। আর শিরক হচ্ছে ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে গুরুতর পাপকাজ। তাই অন্য ধর্মের উপাসনায় আমাদের উপস্থিত থাকা বা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ নেই।
আমরা কোনো হারাম কাজ হতে দেখলে কোনো মুমিন কি তা সেলিব্রেট করতে পারি? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোথাও মদ খাওয়া হচ্ছে বা সুদের কারবার হচ্ছে বা কোথাও শুকরের মাংস খাওয়া হচ্ছে। আমরা মুমিনরা কি বলতে পারি “হ্যাপি ড্রিংকিং”? বা বলতে পারি “আপনাদের সুদ খাওয়া বা শুকর খাওয়া শুভ হোক”? কখনোই না! কারণ এগুলো আমাদের কাছে হারাম। আমরা কোনো হারামের ব্যাপারে শুভকামনা জানাতে পারি না।
একই ভাবে আমরা অন্য ধর্মের কাউকে বাধ্য করতে পারি না আমাদের নামাজ, আমাদের ঈদে একাত্মতা জানাতে। হিন্দু ধর্মে গরু হত্যা করা নিষেধ। আমরা ঈদুল আজহার সময় গরু কুরবানি করি। তাদের ধর্মীয় অনুসাশনে কিন্তু এটা সাপোর্ট করবে না আমাদের কুরবানির ঈদে আমাদের গরু জবাইয়ের সময় সামনে থাকা বা শুভেচ্ছা জানানো। কারণ আমাদের কাছে এটা ইবাদত, কিন্তু তাদের কাছে এটা পাপ। তাই বলা হয় এক ধর্মের ইবাদত অন্য ধর্মের পাপ হিসাবে গণ্য হতে পারে। এজন্য আমরা বলবো “ধর্ম যার, উৎসবও তার”।
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব পালনে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব
অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনা ও উৎসব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে তারা যেন তাদের ধর্ম-কর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। তাদের প্রতি কটুক্তি বা অসহযোগিতামূলক কোনো আচরণ করাও কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, যেমনিভাবে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ ও শুভেচ্ছা জানানোও বৈধ নয়।
এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। ইসলামি রাষ্ট্রেও নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং ইসলামি খেলাফতের সময়গুলোতে অমুসলিমদেরকে তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে তাদের ধর্মীয় উপাসনাগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।[4] কিন্তু কোনো মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের কোনো উৎসবে যোগদান করা, সেগুলোকে পছন্দ করা, সেসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো, সেগুলোকে নিজেদের উৎসব মনে করা ইত্যাদির কোনো সুযোগ নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র
- সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯
- সূরা আন’আম, আয়াত ১০৮
- আসসুনানুল কুবরা, হাদীস ১৮৮৬২
- এক ধর্মের উৎসব অন্য ধর্মের জন্য নয় – মাসিক আলকাউসার
- দূর্গাপুজার অনুষ্ঠান দেখা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)
- দূর্গা পূজা দেখতে যাওয়া ও শুভেচ্ছা জানানো কি উদারতা? – শায়খ আহমাদুল্লাহ
Umma ruhani sonda
October 23, 2023 at 2:36 pmAsslamualykum..onno dhormer manus der sathe melamesa,tader basay giye kicu khawa(jdi tara khawer jonno onurodh kore),tader sathe ghonisthotar bisoye Islam ki bole?plz ektu janaiyen
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
October 24, 2023 at 4:44 pmকোনো মুসলমানের জন্যে একজন অমুসলমানকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবে অমুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক সামাজিক ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে। তাদের কোনো খাবার যদি হারাম হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।
পারভেজ
October 23, 2023 at 7:15 pmখুব ভালো পোস্ট অনেক কিছু জানলাম
Mohona
October 24, 2023 at 11:00 amMashaAllah
মোহাম্মাদ আরফাত উদ্দিন সাগর
October 24, 2023 at 6:06 pmঅনেক গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
Md. Rakib Islam Yalid
October 25, 2023 at 5:11 pmসম্পুর্ণ পড়লাম খুবই ভালো লাগল মাশাল্লাহ 🤍🌸
ইমাম হোসেন
October 26, 2023 at 4:46 amঅনেক কিছু জানলাম,
আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।।।
মোঃ রেজাউল করিম
October 26, 2023 at 9:22 amমাশা আল্লাহ। অত্যন্ত যুগোপযুগি ও বস্তুনিষ্ঠ লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।