Post Updated at 8 May, 2024 – 9:46 AM

কসরের নামাজের পরিচয়

যিনি শরীয়তের শর্তসাপেক্ষে সফর করেন তিনি মুসাফির। মুসাফিরের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এখান থেকে। সফরের সময় জোহর আসর ও ইশার চার রাকাত ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত করে পড়তে হয়। একে কসর নামাজ বলে। ফজর মাগরিব ও বিতির নামাজে কোনো কসর নেই। যানবাহনে নামাজ আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন

হানাফী মাজহাব অনুসারে, মুসাফির ব্যক্তির জন্যে নামাজে এ কসর করা জরুরি। ইচ্ছাকৃত কসর নামাজ আদায় না করলে গোনাহগার হবে। তবে যদি কোনো মুসাফির কোনো মুকিম ইমামের পেছনে নামাজের ইক্তেদা করেন, তাহলে সেখানে অবশ্য ইমামের অনুসরণ করে পুরো নামাজই আদায় করতে হবে।

কসর শুধু ফরজ নামাজের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। সুন্নত নামাজে কসর নেই।

কতটুকু সফরে কসর পড়তে হয়

যদি কেউ নিজ গ্রাম বা শহর থেকে কমপক্ষে ৭৮ কিলোমিটার দূরে কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় তাহলে সে রাস্তায় কসর নামাজ পড়বে।

কসর কখন থেকে পড়তে শুরু করবে

নিজ গ্রাম কিংবা শহর ও শহরতলী অতিক্রম করার পর থেকে কসর নামাজ পড়তে হবে। এর আগে কসর পড়া যাবে না। নিজ এলাকার সীমা অতিক্রম করার পর পুরো নামাজ নয়, কসরই পড়তে হবে।

কসরের সময়সীমা

নিজ এলাকা থেকে কমপক্ষে ৭৮ কিলোমিটার দূরে কোনো এলাকায় গিয়ে যদি কেউ কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত করে তাহলে সেখানে সে মুকিম হিসেবে বিবেচিত হবে। তখন তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। আর যদি পনের দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর পড়তে হবে।

কেউ কোথাও গিয়ে প্রথমে পনের দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করল, কিন্তু পরবর্তীতে তার সেখানে আরও কয়েকদিন থাকার প্রয়োজন দেখা দিল, তখন আবার সে পনের দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করল, এমন হলে পুরো সময়ই সে কসর পড়বে। এমনকি যদি এভাবে সময় বাড়াতে বাড়াতে বছরও হয়ে যায় তবুও কসরই পড়তে হবে। আর যদি একসঙ্গে পনের দিন থাকার নিয়ত করে তাহলে কসরের হুকুম বাতিল হয়ে যাবে এবং তখন থেকে পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে।

নিজের বাড়ি কিংবা বাসস্থানে পনের দিনের কম সময় থাকলেও পূর্ণ নামাজই আদায় করতে হবে। একইভাবে লেখাপড়া চাকরিবাকরি কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে যদি কারও ভিন্ন কোনো নির্ধারিত থাকার জায়গা থাকে তাহলে সেখানে সে পনের দিনের কম থাকলেও পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে।

কোনো একটি গ্রামে বা একটি শহরে সফরে গিয়ে সেখানকার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মিলিয়েও যদি কেউ একনাগাড়ে পনের দিন থাকার নিয়ত করে তাহলে তাকে পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে।
আর যদি দুই গ্রাম বা দুই শহর কিংবা গ্রাম-শহর মিলিয়ে পনের দিন থাকার নিয়ত করে তাহলে কসর করতে হবে।

বিয়ের পর বাবার বাড়িতে মেয়েদের বিধান

বিয়ের পর মেয়েদেরকে যখন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন থেকে শ্বশুরালয়ই তার মূল নিবাস হিসেবে গণ্য হয়। তাই যদি কারও পিতৃলয় এবং শ্বশুরালয়ের মাঝে সফর পরিমাণ দূরত্ব থাকে, তাহলে বাবার বাড়িতে ১৫ দিনের কম সময়ের জন্যে গেলে কসর করতে হবে।

সফর অবস্থায় সুন্নত নামাজ

সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজগুলোর মাঝে ফজরের দুই রাকাত সুন্নতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সফর অবস্থায়ও সম্ভব হলে এই দুই রাকাত নামাজ যথারীতি আদায় করবে। তবে জোহরের ছয় রাকাত, মাগরিবের দুই রাকাত ও ইশার দুই রাকাত সুন্নতের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদি পড়ার সুযোগ থাকে তাহলে পড়াই উত্তম। আর যদি সফরের কারণে সুন্নত নামাজ পড়া কষ্টকর হয় তাহলে না পড়া উত্তম।

মুসাফিরের নামাজের জামাত

জামাতে ইমাম-মুক্তাদি সকলেই যদি মুসাফির হন তাহলে সবাই মিলে কসর করবে। যদি ইমাম মুকিম হয়, মুক্তাদি মুসাফির হয় তাহলে সবাই মিলে পুরো নামাজই পড়বে। আর যদি ইমাম মুসাফির হয় আর মুক্তাদি মুকিম হয় তাহলে মুসাফির ইমাম কসর করবেন এবং দুই রাকাত পড়েই সালাম ফেরাবেন, তবে মুকিম মুক্তাদিকে পুরো নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম সাহেব যখন সালাম ফেরাবেন, তখন মুক্তাদি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং অবশিষ্ট রাকাতগুলো আদায় করবেন, তবে এতে তিনি কোনো কেরাত পড়বেন না।

সূত্র : সহীহ বুখারী ৩৫০; মুসনাদে আহমদ ১৮৬২; আদদুররুল মুখতার ও রদদুল মুহতার ২/৫৯৯৯, ৬০৩-৬০৭, ৬১৩ ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪৫৫

Comments
  1. আপনাদের পেজে মাউসের বল দিয়ে স্ক্রল করা যায় না।

  2. আমি সকালে অফিসে আসি, আছর এর সময় বাসায় যাই৷ মধ্যবর্তী সময় অফিসে জোহর এর ওয়াক্ত আসে, এখন আমি কি অফিসে বসে কসর পড়বো জোহর এর নামাজ? নাকি পুরো নামাজ পড়বো??? দয়া করে জানাবেন

    1. আপনার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব কি ৭৮ কিলোমিটারের বেশি?

  3. পড়ালেখার জন্য যারা পৈত্রিক বাড়ি থেকে দূরে থাকে (লম্বা সময়ের জন্য যেমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী) , তারা বাড়িতে গেলে কছর হবে কিনা? যেহেতু তার বর্তমান আবাসস্থল তার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।

    1. নিজের বাড়িতে কখনোই কছর করা যায় না। যখনই বাড়িতে যাবে, তখনই পূর্ণ নামাজ পড়বে।

  4. আসসালামু আলাইকুম।
    আমি আমার হাজব্যান্ড এর সাথে হাজব্যান্ড এর পোস্টিং এলাকায় থাকি। যেখান থেকে আমার বাবার বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি ২৫০ কিলোমিটার দূরে। এক্ষেত্রে আমি কি করবো?
    শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার বাবার বাড়ি প্রায় ৯ কি.লো।

    আমি যদি এখন বাবার বাড়ি কিংবা শ্বশুর বাড়ি যাই তবে কী কসর পড়তে হবে? সেখান থেকে কোনো আত্নীয় স্বজনের বাড়ি গেলে সেক্ষেত্রে কী করণীয়? আত্নীয় স্বজনদের বাসা এরাউন্ড ৩০/৩২ কিলোমিটার এর মধ্যে?

    1. ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
      আপনার স্বামীর কর্মস্থল থেকে যখন আপনি তার সঙ্গে আপনার শ্বশুড় বাড়িতে যান, তখন আপনি মুকিম হয়ে যাবেন, যদি সেখানে আপনাদের থাকার নিজস্ব ব্যবস্থা থেকে থাকে। আর সেখানে মুকিম হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে আপনার বাবার বাড়ি কিংবা অন্য আত্মীয়দের বাড়িতে গেলেও আপনি মুকিমই থাকবেন।

  5. অনৈতিক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ৪৮কিলোমিটারের বেশী দুরত্বে ভ্রমনে গেলে তাকে কি মুসাফির বলা যাবে?বা সে কি কসর নামাজ আদায় করবে?

    1. ৪৮ কিলোামিটার নয়, ৪৮ মাইল (যা কিলোমিটারের হিসাবে প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) বা এর বেশি দূরত্বের সফর করলে কসর করা যাবে। যদি কেউ অনৈতিক বা অবৈধ কোনো উদ্দেশ্যে সফর করে তবে সেও কসর করবে। অবৈধ কোনো উদ্দেশ্যে সফর করলে যে গোনাহ হবে তা তো বলাবাহুল্য।

  6. আমি সরকারি কাজে আমার পোস্টিং যেই জাগায় সেই জায়গা থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সরকারি কাজে আছি,,,,,এই জাগায় কতো দিন থাকা লাগবে তা নিধারিত না,,,,আমি কি তাহলে কছর পরবো নাকি,,,,,আমি ১ মাস এর এর বেশি আছি

    1. কসর পড়ার জন্যে একনাগারে কমপক্ষে পনের দিন এক এলাকায় থাকার নিয়ত করা যাবে না। আপনি যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত করে থাকেন, তাহলে আপনি কসর করতে পারবেন না। কোনো এলাকায় সফরে গিয়ে কেউ যদি পাঁচ-সাত দিন করে থাকার নিয়ত করে এবং এভাবে ওখানে থাকা দীর্ঘায়িত হয়, বছরও অতিক্রান্ত হয়ে যায়, কিন্তু কখনোই সে একনাগারে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করেনি, তবে সে মুসাফির, নামাজ কসর করবে।

  7. সফরের সময় অনেকে জোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এক সঙ্গে আদায় করেন। এ ক্ষেত্রে বিধানটি জানতে চাই।

    1. সফরের সময় জোহর-আসর এবং মাগরিব-ইশা একত্রে আদায় করতে চাইলে এর নিয়ম হলো, জোহরের শেষ ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের শুরুর ওয়াক্তে আসর পড়া। একইভাবে মাগরিবের শেষ ওয়াক্তে মাগরিব ও ইশার শুরুর ওয়াক্তে ইশা পড়া। এভাবে এ নামাজগুলো একত্রে পড়া যেতে পারে। জোহরের সময়ই জোহরের সঙ্গে আসর, মাগরিবের সময় মাগরিবের সঙ্গে ইশা কিংবা জোহরের সময় জোহর না পড়ে আসরের সময় জোহর-আসর একত্রে পড়া, মাগরিবের সময় মাগরিব না পড়ে ইশার সময় মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়া- এগুলো করা যাবে না।

  8. আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন। মেসেজ টা খুব জরুরী দ্রুত রিপ্লাই দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

    আমি একজন নাবিক, আমি জাহাজে চাকরিতে আসলে দুই – তিন মাস থাকতে হয়।
    কিন্তু বাংলাদেশে দশ দিন থাকলে ইন্ডিয়া দশ দিন থাকা লাগে এবং বাকি সময় নদী বা সাগর পথে থাকতে হয়।
    আমাদের স্বাধীন ভাবে চলতে পারি নামাজ পড়তে কোন সমস্যা নেই, যথেষ্ট সময় আছে।
    নিজের বাড়ির মতোই চলতে পারি।
    সে ক্ষেত্রে আমরা কি মুকিম না মুসাফির জানালে হাজার হাজার নাবিক উপকৃত হব।

    1. জাহাজ যখন চলতে থাকবে তখন জাহােজের যাত্রীগণ মুসাফির হবেন। তখন যুহর, আসর ও ইশার সালাত কসর করতে হবে। যদি কোনো পেরেশানি বা অসুবিধা না থাকলে তাহলে সুন্নত নামাজগুলোও পড়তে পারলে ভালো।

      জাহাজ যখন কোনো বন্দরে নোঙ্গর করবে তখন সেখানে ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়তে থামলে সেখানেও কসর করবে। যেমন ভারতে ১০ দিন থাকার নিয়তে বন্দরে থামা হলো। তখন সেখানে কসর করবে। ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়ত থাকা অবস্থায় যদি কোনো কারণে ১৫ দিনের বেশি থাকার প্রয়োজন দেখা যায় তাহলেও মুসাফির থাকবে, কসর করবে। কিন্তু ১৫ দিনের বেশি অবস্থানের নিয়ত থাকলে তখন আর মুসাফির থাকবে না।

      বন্দর থেকে আবার জাহাজ চলা শুরু করলে তখন আবার মুসাফির হবে।

      উত্তর প্রদানে:
      মাওলানা শিব্বীর আহমাদ
      উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ