Press ESC to close

সাওম (রোজা) ভঙ্গের কারণসমূহ

Post Updated at 7 Apr, 2023 – 11:58 AM

সাওম ভঙ্গের কারণসমূহ দুই প্রকার। (১) যে সব কারণে শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হয়। (২) যে সব কারণে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়। হাদীসের আলোকে হানাফী ফিকহের মতানুসারে নিচে কারণগুলো তুলে ধরা হলো। লেখাটি নেয়া হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম নামক প্রসিদ্ধ কিতাব থেকে।

যে সব কারণে রোযার কাযা ও কাফফারা উভয় ওয়াজিব হয় – রোজা ভঙ্গের কারণ

  1. সাওম পালনকারী ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক সহবাস করলে তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়। এতে বীর্য নির্গত হওয়া শর্ত নয়। এ ব্যাপারে মহিলাও যদি ইচ্ছুক ও অনুগত থাকে তবে তার উপরও কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। অনিচ্ছুক মহিলার সাথে জোরপূর্বক সহবাস করা হলে এরূপ মহিলার উপর কেবল কাযা ওয়াজিব হবে।
  2. সাওম পালনকারী ব্যক্তি যদি খাদ্যদ্রব্য বা ঔষুধ ইচ্ছাপূর্বক গ্রহণ করে তবে তার উপর কাফফারা ও কাযা ওয়াজিব হবে। অনিচ্ছাপূর্বক খাদ্য বা ঔষধ গ্রহণ করলে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। সুতরাং সাওম পালনকারী ব্যক্তিটি যদি রুটি, খাদ্যজাত দ্রব্যাদি, ফল-ফলাদি, পানি ও পানীয় বস্তু, তেল, দুধ, মিশক, জাফরান বা কর্পূর খেয়ে ফেলে তবে তার উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।
  3. কেউ রক্ত পান করলে যাহিরী রিওয়ায়েত মতে, কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু রক্ত পানে অভ্যস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
  4. সুবহে সাদিক না হওয়ার পূর্ণ বিশ্বাসের উপর কেউ সাহরি খেল অথচ তখন সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছে অথবা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্ণ বিশ্বাসের উপর ইফতার করল কিন্তু আসলে তখন সূর্য অস্ত যায়নি এ অবস্থায় এ লোকের উপর কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না। সুবহে সাদিক হওয়ার প্রবল ধারণা সত্ত্বেও কেউ সাহরি খেয়ে নিলে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। আর সূর্য অস্ত না যাওয়ার প্রবল ধারণা সত্ত্বেও কেউ ইফতার করে ফেললে তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
  5. একটি সাওম ভেঙে ফেলার পর কেউ যদি এর কাফফারা আদায় করার পূর্বে আরেকটি সাওম ভেঙে ফেলে তবুও তার উপর একটি মাত্র কাফফারা ওয়াজিব হবে। কেউ যদি দুই রমাদানে দুটি সাওম ভঙ্গ করে তবে তার উপর প্রতি সাওম ভঙ্গের জন্য একটি করে কাফফারা ওয়াজিব হবে।

যে সব কারণে শুধু রোযার কাযা ওয়াজিব হয় – রোজা ভঙ্গের কারণ

  1. কামভাবের সাথে কোনো মহিলাকে চুম্বন অথবা স্পর্শ করার পর বীর্য নির্গত হলে সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কেবলমাত্র ঐ পুরুষের উপর কাযা ওয়াজিব হবে। জোরপূর্বক কেউ খাইয়ে দিলে কিংবা সাবধানতা সত্ত্বেও হঠাৎ কিছু গলার ভেতর চলে গেলে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে (ভঙ্গ হয়ে যাবে) এবং এতে কাযা ওয়াজিব হবে। পানীয়ের ব্যাপারে একই হুকুম।
  2. ঘুমন্ত বা পাগল মহিলার সাথে তার স্বামী সহবাস করলে তাদের উপর কাযা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
  3. মুখে পান নিয়ে ঘুমিয়ে সুবহে সাদিকের পর জাগ্রত হলে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে এবং তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে।
  4. মুখ দিয়ে, নাক দিয়ে বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধ ঢুকালে কিংবা কান দিয়ে ঔষধ ঢাললে সাওমের কাযা ওয়াজিব হবে। কানের ভিতর তেলের ফোঁটা ঢাললে সাওম ভঙ্গ হয় আর পানির ফোঁটা ঢাললে সাওম ভঙ্গ হয় না।
  5. পেটে বা মাথার ক্ষতস্থানে ঔষধ ঢাললে তা পেটে বা মাথায় পৌঁছে গেলে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে এবং এর কাযা ওয়াজিব হবে।
  6. অনিচ্ছাকৃত বমি মুখ ভরে হলেও তাতে সাওম ফাসিদ হয় না। মুখ ভরে বমি হলে তা যদি পুনঃ পেটে ঢুকানো হয় তবে সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি এমনিতেই ঢুকে যায় তবে সাওম ফাসিদ হবে না। মুখ ভরে বমি হলে যদি তা পেটে এমনিতেই ফিরে যায়, তবে সাওম ফাসিদ হবে না। আর যদি তা ইচ্ছা করে ফিরানো হয় তবে ইমাম আবু ইউসূফ (রহ) এর মতে সাওম ফাসিদ হবে না, এটাই শুদ্ধ মত। যদি ইচ্ছা করে কেউ বমি করে এবং তা মুখভরে হয় তবে তার সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে।
  7. লোবান ইত্যাদির ধোঁয়া শুকলে সাওম ভঙ্গ হয়ে যায়। হুক্কা পান করলেও সাওম ভঙ্গ হয়। আতর গোলাপ ইত্যাদি যেগুলোর মধ্যে ধোঁয়া নেই সেগুলোর সুগন্ধি শুকলে সাওম ভঙ্গ হয় না।
  8. কোনো লোক যদি সাওম পালনকারীর প্রতি কিছু নিক্ষেপ করে আর তা গলায় প্রবেশ করে তবে এতে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে। অনুরূপ গোসলের সময় যদি গলায় পানি ঢুকে যায় এতেও সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে।
  9. দাঁতের ভিতর আটকে থাকা জিনিস খেয়ে ফেললে যদি তা বুট পরিমাণ হয় তবে সাওম ফাসিদ হবে আর এর চেয়ে ছোট হলে সাওম ফাসিদ হবে না। তবে যদি তা মুখ থেকে বের করে আবার খেয়ে ফেলে তবে ফাসিদ হয়ে যাবে।
  10. রোগের কারণে কোন লোকের মুখ হতে পানি বের হয়ে আবার তা মুখের ভিতর প্রবেশ করে গলায় চলে গেলে তার সাওম ফাসিদ হয় না।
  11. দাঁত হতে রক্ত বের হয়ে গলায় চলে গেলে যদি রক্ত হতে থুথু বেশি হয় তবে সাওমের কোন ক্ষতি নেই, আর যদি রক্তের পরিমাণ বেশি বা সমান হয় তবে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে।
  12. বৃষ্টির পানি ও বরফ গলার ভিতর চলে গেলে সাওম ফাসিদ হয়। এক দুই ফোঁটা চোখের পানি মুখের ভিতর প্রবেশ করলে সাওম ফাসিদ হয় না। অনেকগুলো মুখের ভিতর জমে গেলে যদি সারা মুখ লবণাক্ততা অনুভব হয় আর তা জমা করে গিলে ফেলে তবে সাওম ফাসিদ হবে।
  13. ইসতিনজার সময় যদি অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের ফলে যদি পানি পায়খানার রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে তবে সাওম ফাসিদ হয়ে যাবে।

রেফারেন্স

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠাঃ ৩০৯ (প্রকাশকালঃ জুন ২০০০)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

(হানাফী ফিকহ এর অনুসরণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ থেকে প্রকাশিত কিতাব থেকে মাসআলাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। উপরের লেখা থেকে কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের থেকে বিষয়টা বুঝে নিতে হবে। অ্যাপের ডেভেলপারদের থেকে মাসআলাগত বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া সঠিক হবে না। কারণ ডেভেলপারগণ ইসলামের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন)

Comments (2)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ১,৯৩৯,৯২৮

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন