Press ESC to close

অসুস্থ ব্যক্তি কীভাবে নামায আদায় করবে

Post Updated at 30 Jan, 2025 – 11:27 AM

কেউ যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে না পারে তাহলে সে বসে বসে নামায আদায় করবে, যদি কেউ বসে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয় তাহলে শুয়ে শুয়ে হলেও তাকে নামায আদায় করে নিতে হবে।  তবুও নির্ধারিত সময়েই নামায আদায় করতে হবে। 

নামাযে দাঁড়ানোর সময় যারা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, রুকু-সিজদাও করতে পারে, তাদের জন্যে ফরয-ওয়াজিব নামায দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুকু-সিজদা করে আদায় করা জরুরি। যারা দাঁড়াতে পারে না, কিন্তু বসে বসে স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা করতে পারে, তারা বসেই স্বাভাবিক সিজদাসহ নামায পড়বে। স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা আদায় করতে যারা সক্ষম তাদের জন্যে ইশারায় সিজদা জায়েজ হবে না। আর যারা দাঁড়াতেও পারে না, সিজদাও করতে পারে না, তবে বসে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করতে পারবে, তারা বসে বসে নামায পড়বে এবং ইশারার মাধ্যমেই রুকু-সিজদা আদায় করবে। 

সাহরি, ইফতার ও নামাজের সময়সূচীর জন্য ডাউনলোড করুন মুসলিমস ডে অ্যাপ

কারও যদি দাঁড়ানোর সক্ষমতা থাকে, কিন্তু রুকু-সিজদা করতে সে অক্ষম, তাহলে তিনি দাঁড়ানোর সময় দাঁড়িয়ে থেকে রুকু-সিজদা বসে ইশারায় আদায় করবেন।

বসে নামায  আদায়ের পদ্ধতি

যদি সম্ভব হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে আত্তাহিয়্যাতুর অবস্থায় বসবে।  নাভির নীচে হাত বাঁধবে। রুকু করার সময় হাঁটুতে হাত রেখে মাথা একটু ঝুঁকিয়ে দেবে। এরপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে বসবে। যদি স্বাভাবিক সিজদা করতে পারে তাহলে করতে হবে। আর যদি স্বাভাবিক সিজদা করতে না পারে তাহলে রুকুর মতোই হাঁটুতে হাত রেখে মাথা ঝুঁকিয়ে দিতে হবে।  তবে সিজদার সময় অবশ্যই মাথা রুকুর চেয়ে একটু বেশি ঝুঁকাতে হবে  এবং স্বাভাবিক নামাযের মতোই দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসতে হবে। 

মাথা না ঝুঁকিয়ে কেবল চোখের ইশারা করলে নামায হবে না। যদি স্বাভাবিক নিয়মে কেউ বসতে না পারে, তাহলে যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই বসা যাবে। চারজানু হয়ে, এক হাঁটু উঠিয়ে কিংবা সামনের দিকে দুই পা ছড়িয়েও বসা যাবে। 

 

চেয়ারে নামাযের বিধান সম্পর্কে জানতে আমাদের ব্লগে প্রকাশিত এ লেখাটি পড়ুন- চেয়ারে বসে নামায আদায়ের বিধান

উঁচু কিছুতে সিজদা করা

যারা মাটিতে কপাল রেখে স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা করতে পারে না, তারা অনেকেই সিজদার জন্যে সামনে ছোট কোনো টেবিল, বালিশ বা উঁচু কিছু রেখে তার উপর সিজদা করে। এটার প্রয়োজন নেই। বরং এগুলো না রাখাই ভালো। মাটিতে (কিংবা বসার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ আধা হাত উঁচু কিছুতে) সিজদা করতে না পারলে ইশারায় সিজদা করাই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে রুকুর তুলনায় সিজদায় মাথা একটু বেশি ঝুঁকাতে হবে। 

শুয়ে নামায পড়ার পদ্ধতি

যারা বসে বসে নামায পড়তে না পারে তারা শুয়ে শুয়েই নামায পড়বে। শুয়ে নামায পড়ার প্রথম পদ্ধতি হলো, পশ্চিম দিকে পা এবং পূর্ব দিকে মাথা  রেখে চিৎ হয়ে শুবে। মাথা বালিশ বা এমন কিছু দিয়ে একটু উঁচু করে নেবে, যেন চেহারা কেবলামুখী থাকে। রুকুর সময় সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারা করতে হবে। সিজদার সময় আরেকটু বেশি ঝুঁকিয়ে ইশারা করতে হবে। এখানেও মাথা না নাড়িয়ে কেবল চোখের ইশারা করলে নামায হবে না। 

শুয়ে নামায পড়ার দ্বিতীয় পদ্ধতি : ডান কিংবা বাম কাতে শুবে। তবে চেহারা থাকবে কেবলামুখী। এরপর রুকু-সিজদাগুলো উপরোক্ত নিয়মে ইশারায় আদায় করবে। তবে শুয়ে নামায পড়ার প্রথম পদ্ধতিটিই উত্তম। 

যারা উপরোক্ত দুই পদ্ধতিরে কোনো পদ্ধতিতেই শুতে পারে না, তারা যেভাবে পারে সেভাবেই শুয়ে নামায আদায় করবে এবং মাথা নাড়িয়ে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা আদায় করবে।

যারা মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারা করতে অক্ষম

অধিক অসুস্থতার কারণে যদি কেউ মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারাও করতে না পারে তাহলে সে ব্যক্তি নামায পরে কাযা আদায় করবে। আর যদি এমন অবস্থা একনাগাড়ে ছয় ওয়াক্ত হয় তাহলে এ নামাযগুলো কাযাও আদায় করতে হবে না। 

 

যে অসুস্থতায় নামায মাফ হয়ে যায়

অসুস্থতা কখনো এমনও হয় যে মাথা ঝুঁকিয়ে ইশারা করেও নামায পড়া সম্ভব হয় না, কিংবা স্মৃতিশক্তি এতই দুর্বল হয়ে পড়ে যে সে একাকী নামায শুরু করে আর শেষ করতে পারে না, অথবা নামাযে কোথায় কী পড়তে হবে তা বারবার ভুলে যায়, কেউ মনে করিয়ে না দিলে নামায পড়া তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে, এমন পরিস্থিতি যদি একনাগাড়ে কমপক্ষে ছয় ওয়াক্ত পর্যন্ত স্থায়ী হয়, অর্থাৎ ছয় ওয়াক্ত নামায তার কাযা হয়ে যায়, তাহলে এ নামাযগুলো মাফ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে যদি সে সুস্থ হয় তাহলে এ নামাযগুলো আর কাযাও করতে হবে না। আর যদি ছুটে যাওয়া নামায ছয় ওয়াক্তের কম হয়, তাহলে ছুটে যাওয়া নামাযগুলো কাযা করতে হবে। [ফাতহুল কাদীর, ২/৯; আলমুহীতুল বুরহানী, ২/৩৪৫; ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৭]

বেহুঁশ হয়ে গেলে

বেহুঁশ হওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান। যদি একনাগাড়ে ছয় ওয়াক্তের বেশি সময় কেউ বেহুঁশ থাকে, তাহলে এ নামাযগুলো মাফ হয়ে যাবে। আর যদি ছয় ওয়াক্ত কাযা হওয়ার আগেই হুঁশ ফিরে আসে, তাহলে ছুটে যাওয়া নামাযগুলো কাযা আদায় করতে হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৭]

অসুস্থ ব্যক্তির যদি নামাযে রুকু-সিজদা ইত্যাদি মনে না থাকে

অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা যদি এমন হয়- তিনি একাকী নামাযের ভেতরকার বিধানগুলো মনে রাখতে পারেন না, নামায কত রাকাত হলো, কোথায় কী পড়তে হবে ইত্যাদি মনে থাকে না, এমতাবস্থায় তার জন্যে নামায পড়া ফরয নয়। তবে যদি কারও সহযোগিতায় নামায আদায় করা হয় তাহলেও নামায আদায় হয়ে যাবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৮]

সক্ষমতা-অক্ষমতার মানদণ্ড

সক্ষমতা-অক্ষমতার মানদণ্ড হলো, যদি স্বাভাবিকভাবে কোনো প্রকার কষ্ট ছাড়াই কিংবা সামান্য ও সহনীয় পরিমাণ কষ্টের সাথে কোনো বিধান পালন করা যায়, অথবা এ কারণে তার রোগবৃদ্ধির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তাকে সেক্ষেত্রে সক্ষম বিবেচনা করা হবে। আর যদি কোনো বিধান পালনে কারও অসহনীয় পর্যায়ের কষ্ট হয়, কিংবা রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে তাকে অক্ষম বিবেচনা করা হবে। যেমন, দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সামর্থ্য কারও আছে, কিন্তু এতে তার রোগ বেড়ে যেতে পারে অথবা তার অসহনীয় পর্যায়ের কষ্ট হতে পারে, তাহলে এ ক্ষেত্রে তাকে দাঁড়িয়ে নামায আদায়ে অক্ষমই বিবেচনা করা হবে। তার জন্যে বসে নামায পড়া জায়েয। উল্লেখ্য, রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি কেবলই ব্যক্তির ধারণার ভিত্তিতে সাব্যস্ত হবে না। বরং নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক বা অভিজ্ঞ ব্যক্তি আশঙ্কা ব্যক্ত করতে হবে।

নামাযের ভেতর অসুস্থ (বা সুস্থ) হয়ে গেলে

কেউ সুস্থ অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে নামায শুরু করল। কিন্তু এক-দুই রাকাত পড়ার পর হঠাৎ এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ল যে, এখন আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, কিংবা স্বাভাবিক নিয়মে সিজদা আদায় করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সে বসে বসে, ইশারায়- যেভাবে সম্ভব সেভাবেই অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে। নতুন করে নামায শুরু করতে হবে না। 

একইভাবে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি বসে বসে নামায শুরু করল এবং স্বাভাবিক নিয়মেই সিজদা আদায় করছিল। এক-দুই রাকাত পড়ার পর সে এতটুকু সুস্থতা অনুভব করল যে, এখন দাঁড়িয়ে বাকি নামাযটুকু আদায় করতে পারবে। এমতাবস্থায় সে দাঁড়িয়ে বাকি নামায আদায় করবে। নতুন করে নামায শুরু করতে হবে না। 

তবে যদি রোগীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয় যে, স্বাভাবিকভাবে সিজদা করাই সম্ভব নয়, ফলে সে ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করছিল। এমতাবস্থায় এক-দুই রাকাত পড়ার পর সে স্বাভাবিকভাবে সিজদা করার মতো সুস্থতা অনুভব করল। তাহলে তার আগের নিয়ত বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে আবার নতুন করে নামায শুরু করতে হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৭]

অসুস্থ অবস্থায় কাযা আদায়

সুস্থ অবস্থায় কিছু নামায কাযা হয়েছিল। সেগুলো পরে আর আদায় করা হয়নি। পরবর্তীতে অসুস্থ অবস্থায় সেগুলো কাযা করতে চায় এবং যদি অসুস্থতার দরুণ বসে বসে কিংবা শুয়ে শুয়েও নামায আদায় করতে হয়, তবুও এভাবেই নামাযগুলো আদায় করে নেবে। সুস্থ হয়ে কাযা আদায় করব- এমন ভেবে কাযা নামাযগুলো আদায়ে বিলম্ব করা জায়েয হবে না। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৮]

সিজদা বা দাঁড়ানোতে যদি ওজু ভেঙ্গে যায়

কারও যদি অসুস্থতার কারণে এমন কোনো সঙ্কট থাকে যে, তিনি নামাযের ভেতরের কোনো একটি ফরয বিধান পালন করতে গেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, তাহলে সে বিধানটি ইশারায় আদায় করবেন। যেমন, কারও চোখে বা কপালে যদি এমন ক্ষত থাকে যে, সিজদায় গেলে সেখান থেকে রক্ত ঝড়তে পারে, তাহলে তিনি ইশারায় সিজদা আদায় করবেন। একইভাবে কেউ প্রস্রাব ঝড়ার সমস্যায় আক্রান্ত, দাঁড়ালে প্রস্রাব বেরিয়ে যাবে, তাহলে তিনি না দাঁড়িয়ে বসে বসেই নামায আদায় করবেন।

নামায শুরু করার জন্যেই যদি কারও সহযোগিতা প্রয়োজন হয়

অসুস্থতার কারণে কেউ নিজে নিজে কিবলামুখী হতে পারছে না, কিংবা তার নাপাক পোশাক বা বিছানা নিজে পরিবর্তন করতে পারছে না, এমন পরিস্থিতিতে যদি সেখানে তাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ থাকে, তাহলে তাকে বলতে হবে। তাকে না বলে যদি নাপাক কাপড়ে বা নাপাক বিছানায় নামায আদায় করে, তাহলে তা যথেষ্ট হবে না। আর সে ব্যক্তিকে বলার পর যদি সে সহযোগিতা না করে, কিংবা সেখানে সহযোগিতা করার মতো কেউ না থাকে, তাহলে যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই নামায আদায় করে নিতে হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১৩৭]

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ২,২১০,১৮২

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন