
Post Updated at 22 Apr, 2025 – 4:26 PM
আগের লেখাটিতে আমরা কয়েকটি নগদ পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেছিলাম। এখানে আলোচনা করছি দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ
উপরোক্ত নগদ পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপও আমাদের নিতে হবে। সংকটটি নতুন নয়, অনেক পুরোনো। আবার কাছাকাছি সময়ে এ সংকট যে পুরোপুরি মিটে যাবে—তেমনটা আশা করাও বাহ্যত অসম্ভব। তাই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। ইহুদি ও তাদের দোসরদের শত্রুতা মোকাবেলা করার জন্যে প্রয়োজন পরিকল্পিত পদক্ষেপ। তবেই আমরা মুক্তি পেতে পারি শত্রুদের যাবতীয় আক্রমন থেকে। কয়েকটি পদক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো :
ক. ঈমানি ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা
আমাদের দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের মধ্যে ঈমানি ভ্রাতৃত্ববোধের এখন বড়ই অভাব। কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে—মুমিনরা পরস্পর ভাইভাই। হাদীসে বলা হয়েছে—মুমিনরা সকলে একটি দেহের মতো। কিন্তু এ বোধটুকু আমাদের মধ্যে এখন জাগ্রত না থাকার কারণে এক এলাকার মুসলমানদের আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পেয়েও অন্য এলাকার মুসলমানরা নিজেদের আক্রান্ত মনে করছে না। অথচ ঈমানের দাবি তো ছিল এই—দুনিয়ার কোনো প্রান্তে যদি একজন মুসলমান ঈমানের পরিচয় বহন করার দায়ে আক্রান্ত হন, তবে সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠবে পুরো মুসলিম দুনিয়া।
এ ভ্রাতৃত্ববোধটুকু না থাকার কারণেই এখন একের পর এক আগ্রাসন চালানোর সুযোগ পায় আমাদের শত্রুরা। আরও দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আগ্রাসনের মুহূর্তেও আমরা নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে আক্রান্ত মাজলুম মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়াই না। কেউ কেউ আবার কখনো শত্রুদের পক্ষেও থাকে।
মুসলমানদের অবস্থা পরিবর্তন করতে চাইলে এ ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার বিকল্প নেই।
খ. সচেতনতা তৈরি করা
আমাদের শত্রু যারা, সুযোগ পেলেই আমাদের গলা টিপে ধরতে চায় যারা, তাদের সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে আমাদের সমাজে। সমাজের প্রতিটি সদস্য যেন শত্রুদের সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকে, সে বিষয়ে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের আজকের প্রতিটি শিশু যেন আগামী দিনে শত্রুদের সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা ও সতর্কতা ধারণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে এখন থেকেই। সমাজের মানুষকে যদি শত্রুদের সম্পর্কে সচেতন করে তোলা না যায়, তাহলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি-স্বল্পমেয়াদি কোনো পদক্ষেপই সফলতার মুখ দেখবে না।
অফলাইনে, অনলাইনে, পত্রিকা-ব্লগ-সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচনা চলমান থাকতে হবে—পাশবিক ইসরাইল আমেরিকা ও তাদের দোসরদের নির্মমতা নিয়ে। মিছিল-র্যালি-মানববন্ধন-সভাসমাবেশ ও মার্চ—যা যখন যেভাবে সম্ভব, সবই করতে হবে। এগুলোর ভেতর দিয়েই সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইলে এ সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।
গ. বিকল্প প্রস্তুত করা
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যে কোনো পক্ষের জন্যেই একটি অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এ সমৃদ্ধির জোরেই ঘটে যত অন্যায় আগ্রাসন। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, একইভাবে শত্রুর অস্ত্রের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মোকাবেলাও করতে হবে।
এখন যখন শত্রুদের পণ্য বয়কটের প্রসঙ্গ আসে, তখন দুটি অভিযোগ আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়।
এক. ওদের পণ্যগুলো তো গুণে-মানে সেরা। এগুলোর তো বিকল্প নেই। এ অভিযোগটা আংশিক সত্য। কিছু পণ্য এমন, যেখানে তারা আসলেই অতুলনীয়। সে ক্ষেত্রে গ্রাহক যারা, তারা মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা করতে গিয়ে একটু নিম্নমানের পণ্যই ব্যবহার করবেন—সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু যারা মুসলিম ব্যবসায়ী, তাদের উচিত, এ শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসা। ভালো মানের পণ্য যদি তারা বাজারে আনতে পারেন, তাহলে আমাদের বয়কটের অস্ত্র অনেক বেশি শানিত হয়ে উঠবে, সন্দেহ নেই।
দুই. আমরা ওদের কত দূর পর্যন্ত বয়কট করতে পারব! ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি সবই তো তাদের। তাহলে আমরা কি এগুলোর ব্যবহার ছেড়ে দেব? না, ওটা জরুরি না। ওগুলোকে আমরা আমাদের পক্ষে কাজে লাগাতে পারি। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধিতেও কাজে লাগাতে পারি। তবে এর চেয়েও জরুরি করণীয় হলো, সাধারণ পণ্যের মতো এ ডিজিটাল সেবাগুলোর বিকল্প নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। যতটুকু না ব্যবহার করলেই নয় এর চেয়ে বেশি ফেসবুক-ইউটিউব ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারি আমরা।
অনেকেই ফেসবুক-গুগলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। চেষ্টা করতে হবে, ফেসবুক-গুগলে বিজ্ঞাপনের জন্য টাকা খরচ না করে বিকল্প মাধ্যম খুঁজে বের করার। বিকল্প মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করার। আল্লাহ পাকের মেহেরবানিতে ইতিমধ্যেই স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে ‘কাহফ’।
গুগল ব্রাউজারের বিকল্প হিসেবে কাহফ ব্রাউজার, ইউটিউবের বিপরীতে মাহফিল অ্যাপ, ফেসবুকের বিপরীতে হিকমাহ অ্যাপ , বাচ্চাদের জন্যে কাহফ কিডস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কাহফ পরিবার। স্ক্রিনে যাতে অশালীন কোনো দৃশ্য না আসে, সেজন্যে রয়েছে কাহফ গার্ড। কাহফ একদিকে কাজ করে যাচ্ছে শত্রুদের জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর বিপরীতে, আবার তাদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে হালাল ইন্টারনেট ও হালাল ইন্টারটেইনম্যান্ট নিশ্চিত করা। কাহফের সবগুলো অ্যাপ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ব্যবহারিক পণ্যগুলো বর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল পণ্যের ক্ষেত্রেও একই পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। আর যারা এগিয়ে আসছেন, আসতে চাইছেন, যথাসম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সহযোগিতা করা উচিত।
Comments (1)
গাজায় গণহত্যার প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় (১) - Muslims Daysays:
April 21, 2025 at 8:41 PM[…] পরবর্তী অংশ পড়তে এখানে ক্লিক […]