Post Updated at 21 Feb, 2024 – 5:33 AM

মুসলিমস ডে অ্যাপে দৈনিক একটি কুরআনের আয়াত বা হাদীস নোটিফিকেশন আকারে পাওয়া যায়। এছাড়াও ইউজার চাইলে অ্যাপ ওপেন রেখে ফোন shake করলে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়। পাশাপাশি নোটিফিকেশনের পেজ থেকেও বাটন চেপে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়। নোটিফিকেশনে হাদীসের নম্বর, কিতাবের নাম ও প্রকাশনীর নাম উল্লেখ থাকে।

আমরা অনেকেই হয়তো জানি, হাদীসের নম্বরগুলো ইউনিভার্সাল নয়। অর্থাৎ মুসলিম শরীফের ১৫৫১ নাম্বার হাদীসের কথা বললে পৃথিবীর সকল মুসলিম শরীফের ১৫৫১ নম্বর হাদীস একই হবে না। প্রকাশনী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হাদীস ১৫৫১ নম্বরে উল্লেখ থাকতে পারে। তাই আমাদের হাদীসগুলো যদি কেউ মূল সোর্স থেকে ক্রস চেক করে নিতে চান, তাহলে রেফারেন্সে উল্লেখিত প্রকাশনীর মূল কিতাবের সাথে যাচাই করুন। অন্য কোনো অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা অন্য প্রকাশনীর সাথে হাদীসের নম্বর নাও মিলতে পারে।

 

হাদীসের নম্বরগুলো একেক প্রকাশনীতে একেক রকম কেন?

হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ যারা হাদীস সংকলন করেছেন, তারা হাদীসের পাঠদানও করতেন। উসতাযের সংকলিত হাদীসের কিতাব শিষ্যরা নিজ হাতে কপি করে নিতেন। তখন তো আর এখনকার মতো ফটোকপির ব্যবস্থা ছিল না। এভাবে মূল কিতাব অনুসরণে আরও কপি তৈরি করতে গিয়ে কারও কোনো একটি শব্দ ছুটে যেতে পারে, কোনো একটি হাদীসও ছুটে যেতে পারে। এভাবেই সৃষ্টি হয় হাদীসের কিতাবসমূহের নুসখা বা পাণ্ডুলিপির ভিন্নতা।

আবার এমনও হতে পারে, একজন উসতায হাদীস সংকলন করে তা একবার পাঠদান করেছেন। পরবর্তীতে সে সংকলনে তিনি আরও হাদীস যোগ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই যারা এ কিতাবটি সংকলক উসতাযের কাছে আগে পাঠগ্রহণ করেছেন, তাদের কপির সঙ্গে যারা পরবর্তীতে পাঠগ্রহণ করেছেন, তাদের কপি মিলবে না। নুসখার (পান্ডুলিপির) ভিন্নতাও এভাবেও হয়েছে।

আরেকটি ভিন্নতা কেবলই হাদীসের নম্বরের ক্ষেত্রে। মূল সংকলক তো হাদীসের শুরুতে কোনো নম্বর যোগ করেননি। এ নম্বর পরবর্তী কারও বসানো। এ নম্বর দিতে গিয়েও ইখতেলাফ হতে পারে। হাদীসের কিতাবের যারা মনোযোগী পাঠক তারা জানেন, কোনো কোনো হাদীসের শেষে কখনো ব্যাখ্যামূলক, কখনো সম্পূরক কিছু কথা থাকে। কেউ কেউ এগুলোকে ভিন্ন হাদীস হিসেবে গণ্য করেছেন, কেউ কেউ আগের হাদীসের অংশবিশেষ হিসেবে গণনা করেছেন। আর এভাবে সৃষ্টি হয়েছে হাদীসের নম্বরের ভিন্নতা।

পরবর্তীতে একেক প্রকাশনী একেক পাণ্ডুলিপি ছাপায়। একেকজন একেক গণনা অনুসরণ করেন। আর এতেই একই কিতাবের ভিন্ন ভিন্ন কপিতে হাদীস নম্বরে ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। বিষয়টি বোঝার জন্যে যে কেউ দীনি আরবি কিতাবাদির ডিজিটাল লাইব্রেরি ‘আলমাকতাবাতুশ শামেলা’ দেখতে পারেন। এখানে হাদীসের অনেক কিতাবেরই একাধিক নুসখা রয়েছে। সবগুলোতে হাদীসের নম্বর এক রকম নয়। একটি উদাহরণ দিই।

হাদীসের এক প্রসিদ্ধ সংকলন ‘মুসনাদুল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.’। শামেলায় এ কিতাবের একাধিক নুসখা রয়েছে। একটির প্রকাশক কায়রোর মুয়াসসাতু কুরতুবা। এ নুসখা অনুসারে এ কিতাবের মোট হাদীস সংখ্যা ২৭৬৮৮। শামেলার আরেক নুসখায় এ কিতাবের দুই রকম নম্বরকে একত্রিত করা হয়েছে। বৈরুতের আলামুল কুতুব এবং মুয়াসসাতুর রিসালাহ- এ দুই প্রকাশনী ভিন্ন নুসখা প্রকাশ করে মুসনাদে আহমাদের। শামেলার এ নুসখাটিতে এ দুই প্রকাশনীর নম্বরকেই উল্লেখ করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। এখানে দেখা যাচ্ছে, ৭১৯৩ নম্বর পর্যন্ত উভয় প্রকাশনীর দেয়া নম্বর অভিন্ন। কিন্তু এর পর থেকে একটু একটু করে ভিন্নতা শুরু হয়েছে। এক গণনায় যে হাদীসকে ৭১৯৪ হিসাব করা হয়েছে, আরেক গণনায় সেটিকে ৭১৯৩ এর অংশ হিসাব করা হয়েছে। এক গণনায় কিতাবের মোট হাদীসের সংখ্যা ২৭৬৪৭, আরেক গণনায় ২৮১৯৯।

তাই হাদীসের নম্বরের ভিন্নতা দেখে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এ অ্যাপে যে সোর্স থেকে হাদীস সংকলন করেছি, নোটিফিকশনের শেষে তা বিস্তারিত উল্লেখিত রয়েছে। হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনুদিত গ্রন্থ থেকে সংকলন করেছি। সেখানে যে নম্বর দেয়া আছে, তা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত কিতাবের নম্বর। এ নম্বর অন্য গণনাগুলোর সঙ্গে নাও মিলতে পারে। তাই এতটুকু ভিন্নতা নজরে আসলেই, আশা করি, কেউ আমাদেরকে ভুল সাব্যস্ত করবেন না। আশা করব, আমরা যে রেফারেন্স উল্লেখ করেছি, আপনারা সে রেফারেন্সের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন।

হ্যাঁ, মানুষ হিসেবে আমরাও তো ভুলের উর্ধ্বে নই। ভুল তো আমাদের হয়ই। আমাদের উল্লেখকৃত রেফারেন্সের সঙ্গে যদি বাস্তবতার মিল না থাকে, তবে তা অবশ্যই ভুল এবং  মেহেরবানি করে তা আমাদের জানাবেন। আমরা সংশোধন করে নেব ইনশাআল্লাহ।

 

Comments
  1. “আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
    যখন তোমাদের কেউ জুতা পরবে, তখন প্রথমে ডান পায়ে পরবে। আর যে সময় খুলবে, সে সময় আগে বাম পায়ের জুতা খুলবে। আর হয় দুটিই পায়ে দিবে, অথবা দুটিই খুলে ফেলবে।
    (বুখারী ৫৩৮৮)”

    এই হাদিস রেফারেন্স তো খুঁজে পেলাম না। অনেক খুঁজে পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু হাদিস নং বুখারী ৫৮৫৫ তে পেয়েছি।

    1. জ্বি, রেফারেন্স কেন মিলে না সে বিষয়েই এই পোস্টে বলা হয়েছে। আশা করি বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ