
Post Updated at 1 Jul, 2025 – 11:55 AM
হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মুহাররম। এ মাসের দশ তারিখকে বলা হয় আশুরার দিন। এ দিনটি আমাদের কাছে অনেক সম্মানিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ দিনে রোজা রাখতেন, অন্যদেরকেও রোজা রাখতে উৎসাহিত করতেন।
পরবর্তীতে হিজরি ৬১ সালের ১০ মুহাররম (আশুরার দিন) তাঁর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ হন। একে তো নবী-দৌহিত্র, এর সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্মমভাবে শাহাদাত—এসব মিলিয়ে ঘটনাটি নবীপ্রেমিক মুসলমানদেরকে এক গভীর শোকে আচ্ছন্ন করে। এ বিয়োগান্তক ঘটনাটির মধ্য দিয়ে হযরত হুসাইন রা. অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে হলেও সত্যকে উঁচিয়ে রাখার উপমা হয়ে রইলেন। ফলে অনেকের ধারণা, আশুরার দিনের সম্মান কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। অথচ একথা মানতেই হবে, মুসলমানদের ১০ মুহাররম তথা আশুরার উদযাপন হিজরি ৬১ সালের পর থেকে নয়, বরং বহু শতাব্দীকাল ধরে চলে আসা আশুরাকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি নিজেই রোজা রেখে আশুরা উদযাপন করেছেন। অনুসারী উম্মতকেও রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। এই হলো আশুরা। আশুরার সঙ্গে শোকের কোনো সম্পর্ক নেই।
কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে মুহাররম মাসকেই শোকের মাস মনে করা হয়। মুহাররম এলেই দেখা যায় ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’ শ্লোগান। সন্দেহ নেই, কারবালার ঘটনাটি অত্যন্ত শোকাবহ এবং তা আমাদেরকে বাতিলের মোকাবেলা করার প্রেরণা জোগায়। অন্যায়ের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত করতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু আশুরার দিনে যে ঘটনাটি ঘটল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ৫০ বছর পর, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা পালন করতে বলে যাবেন কী করে? এজন্যেই তো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশুরা শোকাবহ ছিল না, ছিল রোজা রাখার মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞতায় সিক্ত।
বাস্তবতা হলো, আশুরা উদযাপনের দুটি ভিন্ন ধারা বর্তমানে মুসলিম সমাজে চালু আছে। একটি হাদীসে বর্ণিত রোজা রাখার মধ্য দিয়ে, যেটি পালন করে দীনদার সাধারণ মুসলমানগণ। তাদেরকে আহলুস সুন্নত ওয়াল জামাত বা সংক্ষেপে সুন্নিও বলা যেতে পারে। আরেকটি হলো, শোকের ধারক হিসেবে তাজিয়া মিছিল বের করা, বুক-পিঠ রক্তাক্ত করা ইত্যাদি। তাদের পরিচয়—তারা শিয়া। নবীপরিবারের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে তারা এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, হযরত আলী ফাতেমা হাসান হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমের বাইরে সাহাবীগণের বিশাল জামাতকে তারা নির্দ্বিধায় কাফের বলে দিচ্ছে! তাদের নিকট আশুরা মানেই শোক, আর শোকের উদযাপন নিজ শরীর রক্তাক্ত করে আর ‘হায় হুসেন হায় হুসেন’ বলে বুক চাপড়িয়ে! সন্দেহ নেই, শিয়াদের এ উদযাপনের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক নেই মুহাররম মাসের সঙ্গে শোকেরও।
শিয়াদের প্রভাবই বলতে হবে, আমাদের সমাজে মুহাররম যে শোকের মাসে পরিণত হয়েছে, তা সাধারণ নিরক্ষর মানুষ থেকে উচ্চ শিক্ষিত সমাজের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ মানুষ মুহাররম মাসকে শোকের মাস মনে করে এ মাসে বিয়ে-শাদি কিংবা কোথাও বেড়াতে যাওয়াকে অশুভ মনে করে। আর শিক্ষিত মানুষেরা মুহাররম মাস এলেই কারবালার ঘটনার শোককে শক্তিতে পরিণত করার কথা বলে। এতটুকু বলা তো আর আপত্তিকর ছিল না, সংকট হলো তাদের কাছে আশুরা ও মুহাররমের মর্যাদা এর মধ্যেই সীমিত।
দৈনিক পত্রিকাগুলোতে আশুরার দিনে বিশেষ নিবন্ধ ছাপা হয়। আর এখনো অধিকাংশ নিবন্ধ জুড়ে থাকে কেবলই শোক। যেন আশুরা মানেই শোক! যেন কারবালা-ই আশুরার প্রাণ আর হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা এখানে প্রাসঙ্গিক মাত্র। ইসলামঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় একবারের আশুরায় প্রথম সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল তাৎপর্যময় অনন্য দিন পবিত্র আশুরা, চাই ইমাম হোসেনের ত্যাগের উদাহরণ অনুসরণ। সেদিনের দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তেও একইরকম শোকের ছায়া—পবিত্র আশুরা, ত্যাগের মহিমায় অন্তর আলোকিত হোক। শুধু হযরত হুসাইন রা.এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করেই নিবন্ধ রচিত হতে পারে, তাঁর বীরত্ব, আত্মত্যাগ, অন্যায়ের প্রতিবাদ এসব আলোচনা করে নিজেদের ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু এ ঘটনাটিকে আশুরার মূল বিষয় বানিয়ে দেয়া তো নির্ঘাত ইতিহাসের বিকৃতি!
এ বিষয়ে আরো জানতে নিচের লিংকগুলো ভিজিট করুন:
প্রবন্ধের লিংক:
- মুহাররম ও আশুরা – কিছু কথা ও কিছু প্রশ্নের উত্তর – মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
- মুহাররম ও আশুরা : গুরুত্ব ও ফযীলত – মাসিক আলকাউসার
- আশুরা ও মুহাররমঃ কিছু কথা – মাসিক আলকাউসার
- মুহাররমের প্রথম দশ দিন রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা
- আহলে বাইতের দৃষ্টিতে মাতম [শিয়াদের বর্ণনার আলোকে] – মাসিক আলকাউসার
- স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর শোক পালনের সময়কাল – মাসিক আলকাউসার
- একটি ভুল ধারণা : মুহাররম মাসে বিবাহ করা কি অশুভ
ইউটিউব ভিডিও এর লিংক:
- আশুরার দিনে যে কাজগুলো নিষিদ্ধ – মাওলানা তাহমীদুল মাওলা
- ইসলামে আশুরার আমল – মাওলানা তাহমীদুল মাওলা
- ইসলামে আশুরার এত গুরুত্ব কেন? – মাওলানা তাহমীদুল মাওলা
- মুহাররম ও আশুরা: করণীয় ও বর্জনীয় – মাওলানা মাসীহুল্লাহ হাসান
Comments (4)
(মাওলানা)মুহা ইকবাল সেখ কাসেমীsays:
July 8, 2024 at 8:44 PMমাওলানা শিব্বির সাহেবের বায়ান এবং রায়ের সাথে আমি একমত
মাসউদুর রহমানsays:
July 12, 2024 at 1:00 PMউক্ত বয়ানে আমি একমত
Akaid Hosen Zimsays:
June 24, 2025 at 12:00 PMThe app is great, but it will be better if there is a English translation.
Muslims Day Desksays:
June 25, 2025 at 10:23 AMwill do IngShaAllah