Post Updated at 12 Jun, 2023 – 12:58 PM

১. পুরুষের সতর নাভি থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। কিন্তু নামাজে মহিলাদের চেহারা হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীরই সতরের অন্তর্ভুক্ত। তাই নামাজ শুরু করার পূর্বে মেয়েদেরকে নিশ্চিত হতে হবে—চেহারা হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া পুরো শরীর কাপড়ে আবৃত করা হলো কি না।
মেয়েদের কেউ কেউ নামাজে চুল খোলা রাখে। কেউ কান খোলা রাখে। কেউ কেউ এমন ছোট ওড়না ব্যবহার করে, যার ফলে তার কাপড়ের নীচে ঝুলে থাকা চুল দেখা যায়। এসবই নাজায়েয। নামাজের মাঝে যদি কোনো মেয়ের চেহারা হাত ও পায়ের পাতা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ এতটুকু সময় খোলা থাকে, যাতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّـيَ الْعَظِيْمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম) পড়া যায়, তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি এর চেয়ে কম সময় খোলা থাকে, তাহলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে , তবে গোনাহ হবে।

২. মেয়েদের নামাজের শ্রেষ্ঠতম স্থান হলো নিজ নিজ ঘর। নিজ ঘরে নামাজ পড়া বারান্দায় নামাজ পড়া থেকে উত্তম। বারান্দায় নামাজ পড়া উঠানে নামাজ পড়া থেকে উত্তম। উঠানে নামাজ পড়া মসজিদে নামাজ পড়া থেকে উত্তম।

 

৩. হাত তোলার সময় তারা পুরুষের মতো কান পর্যন্ত নয়, কাঁধ পর্যন্ত তুলবে। তারা তাদের হাত দুটি চাদরের ভেতরেই রাখবে। চাদরের বাইরে বের করবে না।

৪. মেয়েরা হাত বাঁধবে বুকের উপর। বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের কব্জি রাখবে। পুরুষের মতো নাভির নীচে হাত বাঁধবে না।

৫. রুকুতে মেয়েদেরকে পুরুষের মতো কোমর ও পিঠ এক বরাবর করতে হবে না। বরং পুরুষের তুলনায় কম ঝুঁকবে।

৬. রুকুতে পুরুষকে তার হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখতে হয়। এর বিপরীতে মেয়েরা আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে। আঙ্গুলের মাঝে ফাঁক রাখবে না।

৭. রুকুতে মেয়েরা পা সম্পূর্ণ সোজা না রেখে হাঁটুকে সামনের দিকে হালকা বাঁকা করে রাখবে।

৮. পুরুষের হুকুম—তারা রুকুতে বাহু পার্শ্বদেশ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখবে। আর মেয়েরা এমনভাবে দাঁড়াবে যাতে বাহু শরীরের সাথে মিলে থাকে।

৯. রুকুতে নারীর দুই পা মিলানো থাকবে। বিশেষত দুই টাখনু থাকবে একটি অন্যটির খুব কাছাকাছি। পায়ের মাঝে ফাঁক রাখবে না।

১০. পুরুষের জন্যে বিধান হচ্ছে, তারা সেজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে হাঁটু রাখার আগে বুক সামনের দিকে ঝুঁকাবে না। মেয়েদের সেজদার পদ্ধতি এমন নয়। বরং তারা শুরুতেই বুক সামনে ঝুঁকিয়ে দিয়ে সেজদা করবে।

১১. সেজদার সময় তারা উরু পেটের সাথে, বাহু পার্শ্বদেশের সাথে মিলিয়ে রাখবে। পা দুটি খাড়া করে না রেখে ডানদিকে বের করে বিছিয়ে রাখবে।

১২. সেজদার সময় পুরুষের জন্যে কনুই মাটিতে লাগানো নিষেধ। অথচ মেয়েরা তাদের কনুইসহ পুরো হাত মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে।

১৩. দুই সেজদার মাঝে বসার সময় কিংবা আততাহিয়্যাতু পড়ার সময় নারীরা বাম নিতম্বের উপর বসবে। দুই পা ডানদিক দিয়ে বের করে দেবে।

১৪. পুরুষের জন্যে নিয়ম হচ্ছে—রুকুর মধ্যে আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখবে; সেজদার সময় মিলিয়ে রাখবে। অন্যান্য সময় আঙ্গুলগুলোকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দেবে। ইচ্ছা করে ফাঁক করেও রাখবে না, মিলিয়ে রাখবে না। পক্ষান্তরে মেয়েদের বিধান হচ্ছে—তারা সর্বাবস্থায় আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে। ফাঁক করে রাখবে না। রুকু, সেজদা, দুই সেজদার মাঝে, বৈঠকগুলোতে—সবক্ষেত্রেই তারা আঙ্গুল মিলিয়ে রাখবে।

১৫. মেয়েদের জন্যে জামাতে নামাজ পড়া মাকরুহ। তাদের জন্যে উত্তম হচ্ছে একাকী নামাজ পড়া। হ্যাঁ, যদি ঘরের মাহরাম পুরুষ কোনো কারণে ঘরে জামাত করে, তাহলে তারা সে জামাতে শরিক হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও তাদেরকে দাঁড়াতে হবে পুরুষের সম্পূর্ণ পিছনে। কখনোই তারা পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়াবে না।
[সূত্র : মুসনাদে আহমাদ, ইলাউস সুনান, রদদুল মুহতার, ফতোয়ায়ে আলমগীরী]

Comments
  1. অনেক ভালো লাগলো🥰

    1. আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

  2. মাশাআল্লাহ 🥰 অনেক কিছু শিখতে পারলাম ধন্যবাদ 🥰 আলহামদুলিল্লাহ ❤️

  3. Dhonnobad

  4. আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু জানলাম।

  5. 12 নাম্বার পয়েন্ট এর সোর্স এর নির্দিষ্ট রেফারেন্স গুলা যদি একটু কষ্ট করে দিতেন তাহলে খুব উপক্তৃত হতাম । নির্দিষ্ট রেফারেন্স বলতে কোন হাদীস এর বই এর কত নাম্বার হাদীস সেটা যদি একটু বলতেন ভালো হতো ।

    1. শুধু ১২ নম্বর পয়েন্ট নয়, পুরো লেখাটা নিয়েই কথা হলো, আমরা সকলেই জানি, ইসলামি শরিয়তের মৌলিক উৎস চারটি। কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এ চারটি বিষয় স্বীকৃত। যেখানে কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট দলিল থাকে, সেখানে তো সেটাই মানতে হয়। আর যেসব মাসআলায় কুরআন ও হাদীসের দলিল থাকে না, কিংবা দলিল থাকলেও তা অস্পষ্ট কিংবা বাহ্যত বিপরীতমুখী, সেখানেই মুজতাহিদ ইমামগণ ইজতিহাদ করে থাকেন। এ ইজতিহাদ সাহাবীগণও করেছেন। তাবেয়ীগণও করেছেন। পরবর্তী আলেমগণও করেছেন। সাধারণ মানুষের কর্তব্য, সে ইজতিহাদ অনুসারে আমল করা। তাই কোনো মাসআলার উপর আমল করার জন্যে তা কোন কিতাবের কত নম্বর হাদীস- এটা জানা কোনো জরুরি বিষয় নয়। অনেক সময় তা বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করে।

      কোন মাসআলা হাদীস থেকে আহরিত, আর কোনটি ইজতিহাদপ্রসূত, তা আলেমদের সামনে স্পষ্ট। এটা বিস্তারিতভাবে জানা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। তারা যে কোনো বিষয় তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আস্থাভাজন কোনো আলেমের কাছ থেকে জেনে নেবেন। তিনি কুরআন-হাদীস, সাহাবী-তাবেয়ীগণের ফতোয়া, গবেষক ইমামদের ইজতিহাদ, ফকীহগণের কিয়াস ইত্যাদির আলোকে মাসআলার সমাধান দেবেন। আর সাধারণ মানুষ সে সমাধান অনুসারেই আমল করবেন। দীন মানার এটাই সহজ ও সরল পদ্ধতি।

      নারী-পুরুষের নামাজের পার্থক্য বিস্তারিত জানার জন্যে গবেষক আলেম মাওলানা আবদুল মতীন সাহেব লিখিত ‘দলিলসহ নামাজের মাসায়েল’ বইটি পড়তে পারেন। গুগল প্লে স্টোরে এ নামে বইটির অ্যাপও রয়েছে। সেখান থেকেও পড়তে পারেন। অ্যাপের লিংক https://play.google.com/store/apps/details?id=com.abunayem.massailofprayerebook

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ