
Post Updated at 9 Aug, 2025 – 6:35 AM
পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। জুতা-স্যান্ডেল পরার ক্ষেত্রেও আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেকগুলো হাদীস। সে হাদীসগুলো থেকে জুতা পরার ৩ টি নির্দেশনা দলীলসহ নিম্নে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ আমাদেরকে এগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
জুতা পরার সময় ডান পা আগে পরা, খোলার সময় বাম পা আগে খোলা
জুতা-স্যান্ডেল পরার ক্ষেত্রে ডান পায়ের জুতা প্রথমে পরা ও পরে বাম পায়ের জুতা পরা সুন্নাহ আর জুতা খোলার সময় প্রথমে বাম পায়ের জুতা খোলা ও পরে ডান পায়ের জুতা খোলা সুন্নাহ। মনে রাখার জন্য এভাবে চিন্তা করতে পারি যে, ডান পা যত বেশি সময় ধরে জুতা পরিহিত অবস্থায় রাখা যায়।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
যখন তোমাদের কেউ জুতা পরবে, তখন প্রথমে ডান পায়ে পরবে। আর যে সময় খুলবে, সে সময় আগে বাম পায়ের জুতা খুলবে। আর হয় দুটিই পায়ে দিবে, অথবা দুটিই খুলে ফেলবে।
(বুখারী ৫৩৮৮)
আরেকটি হাদীস, ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা পরা, চুল আচঁড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন।
(বুখারী ১৬৮ )
এ থেকে বোঝা যায়, জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো সহ অন্যান্য কাজও ডান দিক থেকে শুরু করা সুন্নাহ।
এক পায়ে জুতা পরিধান করে না হাঁটা
এক পায়ে জুতা পরিধান করতে রাসূল (সা) নিষেধ করেছেন। তাই আমরা এক পায়ে জুতা পরে চলাফেরা করব না। উপরে সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, জুতা হয়তো দুটোই পরবে কিংবা দুটোই খুলে রাখবে।
আরেকটি হাদীস। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন লোকের বাম হাতে খাবার খাওয়া, এক পায়ে জুতা পরিধান করে চলাফেরা করা, এক কাপড়ে সারা শরীরে জড়িয়ে রাখা ও লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে- এক কাপড়ে গুটি মেরে উপবিষ্ট হতে বারণ করেছেন।
(মুসলিম ৫৩৯২)
এমনকি যদি জুতার একটি ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন সেটি ঠিক করে পরার পূর্বে এক পায়ে ভাল জুতাটি পরতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনটা হতে পারে যে, এক পাটির ফিতা ছিঁড়ে গেছে। যেটি ভাল আছে সেটি এক পায়ে পরলাম। ছেঁড়া জুতাটি হাতে নিয়ে মুচির কাছে সারাই করতে গেলাম। এই অবস্থাতেও এক পায়ে জুতা পরিধান করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি,
যখন তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন সেটি ঠিক না করা পর্যন্ত সে যেন অন্য জুতাটি পায়ে দিয়ে চলাচল না করে।
(মুসলিম ৫৩৯০)
অনেক সময় এমন হতে পারে যে, আমরা মসজিদ থেকে বের হয়েছি। জুতা জোড়ার একটা দরজার কাছে, অপরটি মানুষের পায়ের ধাক্কায় খানিকটা দূরে চলে গিয়েছে। এমন অবস্থায় আমরা কাছের জুতাটি এক পায়ে পরে নিয়ে ২-৩ কদম হেঁটে অপর পায়ের জুতাটি পরি। তা না করে আমরা যদি এমন করি- একটি জুতা প্রয়োজনে হাতে করে অপরটির পাশে নিয়ে দুটি একসঙ্গে পরলাম কিংবা পা দিয়ে একটিকে একটু ধাক্কা দিয়ে দুটিকে একত্রিত করে প্রথমে ডান পা পরে বাম পায়ের জুতা পরলাম, তবে আমাদের এ আমলটিও হাদীসের শিক্ষানুযায়ী হলো।
যে জুতা পরতে হাতের সাহায্য লাগে, সেগুলো দাঁড়িয়ে না পরা
কেডস, লোফার বা বেল্টযুক্ত অনেক জুতা আমরা পরে থাকি। যেগুলো পরার ক্ষেত্রে হাতের সাহায্য প্রয়োজন হয়। যে জুতা পরতে হাতের সাহায্য লাগে, সেসব জুতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পরতে নিষেধ করেছেন। এমন জুতা দাঁড়িয়ে পরতে গিয়ে কেউ পড়ে যেতে পারে, ব্যাথা পেতে পারে। কিন্তু যেই জুতা-স্যান্ডেল দাঁড়িয়ে অনায়াসে পরা যায়, কোনো সমস্যা হয় না (যেমন ২ ফিতাযুক্ত স্যান্ডেল) সেসব জুতার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন।
(আবু দাউদ ৪১৩৫)
আসুন জুতা পরার ক্ষেত্রে প্রতিদিন হাদীসের এ নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করি। হতে পারে এই সুন্নাহের প্রতি ভালবাসা ও আমলের উসিলায় আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত দিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহের অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমীন।
Leave a Reply