Post Updated at 29 Feb, 2024 – 11:30 PM

ওজুর ফরজসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এ  লেখাটি পড়ুন ওজুর ফরজসমূহ

ওজুর সুন্নতসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

 

ওজুতে কয়েকটি মাকরুহ বিষয়

  1. চেহারা বা অন্য কোনো অঙ্গ ধোয়ার সময় জোরে পানি মারা,
  2. বাম হাতে কুলি করা কিংবা নাকে পানি দেয়া,
  3. ডান হাতে নাক ঝাড়া ও পরিষ্কার করা,
  4. একবারের বেশি মাথা মাসেহ করা,
  5. পানি অপচয় করা।
  6. যে অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়া সুন্নত সেগুলো এর চেয়ে বেশি পরিমাণে ধোয়া।

[সূত্র : আদদুররুল মুখতার, ১/২৫৭-২৫৮]

ওজুর বিবিধ মাসায়েল

পানির অপচয় না করা

মাসআলা : বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওজুতে পানির অপচয় হয়। পানির অপচয় যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

মাসআলা : সরাসরি পানির টেপ ছেড়ে কিংবা টিউবওয়েল চেপে ওজু করলে পানির অপচয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে কোনো পাত্রে, যেমন বদনা মগ বালতি ইত্যাদিতে পানি নিয়ে সেখান থেকে ওজু করলে এ অপচয় থেকে বাঁচা যায়।

পাত্রের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ওজু করলে …

মাসআলা : মগ বা বালতি থেকে বারবার হাতে পানি নিয়ে ওজু করলে অবশিষ্ট পানি ‘ব্যবহৃত পানি’ হয়ে যায় না। এমন এক পাত্র থেকে একসঙ্গে একাধিক মানুষ কিংবা একজন ওজু করার পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে আরেকজন ওজু করতে কোনো সমস্যা নেই।

ওজুর পর গামছা ব্যবহার করা

মাসআলা : ওজুর শেষে গামছা তোয়ালে ইত্যাদি দিয়ে শরীরের ভেজা অঙ্গগুলো মোছা জায়েজ। এতে কোনো সমস্যা নেই। সওয়াব কমে যাওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের থেকেও ওজুর পর কাপড় দিয়ে পানি মোছার বিষয়টি প্রমাণিত। [সুনানে তিরমিযী, 1/74, আদদুররুল মুখতার, 1/229]

এক ওজু দিয়ে একাধিক নামাজ

মাসআলা : একবার ওজু করে নামাজ পড়ার পর পরবর্তী নামাজের সময় যদি ওজু থাকে তাহলে আগের ওজু দিয়েও নামাজ পড়া যাবে। এতে সমস্যা নেই। তবে প্রত্যেক নামাজ নতুন নতুন ওজু দিয়ে পড়া ভালো।

ওজু কখন মাকরুহ, কখন মুসতাহাব

মাসআলা : একবার ওজু করার পর সেই ওজু দিয়ে যদি এমন কোনো ইবাদত করা না হয় যা ওজু ছাড়া আদায় করা যায় না, যেমন নামাজ, তওয়াফ ইত্যাদি, তাহলে সেই ওজু থাকাবস্থায় দ্বিতীয়বার ওজু করা  মাকরুহ। আর যদি প্রথম ওজু দিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজও পড়া হয় তাহলেও দ্বিতীয়বার ওজু করায় কোনো সমস্যা নেই। বরং ওজু করলেই বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

ওজুর শুরুতে পা ভিজিয়ে নেয়া

মাসআলা : অনেকেই ওজুর শুরুতে যদি পা ভিজিয়ে নেন কিংবা ওজুর অঙ্গগুলোতে তেল জাতীয় কিছু মেখে নেন। এতে সহজেই ভালোভাবে পুরো অঙ্গে পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়। বিশেষত শীতের মৌসুমে এর প্রয়োজন হতে পারে। এ উদ্দেশ্যে যদি কেউ এভাবে শুরুতে পা ভিজিয়ে নেয় কিংবা তেল মেখে নেয়, তবে এতে কোনো অসুবিধে নেই। বরং হানাফী মাযহাবের কোনো কোনো ফকীহ এর পরামর্শও দিয়েছেন। তবে একে ওজুর আদাব বা কোনো নিয়ম মনে করা যাবে না। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/৯ ]

ওজু করার সময় কোনো অঙ্গ পূর্ণ বা আংশিক শুকনো থেকে গেলে

মাসআলা : ওজু করার সময় যদি ভুলবশত কোনো অঙ্গ ধোয়া না হয়, কিংবা কোনো অঙ্গের আংশিক শুকনো থেকে যায়, এবং এ বিষয়টি পরবর্তীতে নজরে আসে, তাহলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে নিলেই হবে। নতুন করে পূর্ণ ওজু করতে হবে না। অবশ্য নতুন ওজু করে নেয়াটা ভালো। আর যদি এ ওজুতে কোনো নামাজ পড়া হয়ে থাকে, তাহলে সে নামাজ আবার আদায় করতে হবে। [শারহুল মুনয়া, পৃ. ৫০]

ওজুর সময় নখের ভেতর আটা বা ময়লা লেগে থাকলে

মাসআলা : ওজুর সময় যদি নখের ভেতর আটা, ময়লা বা এ জাতীয় কিছু লেগে থাকে, তবে সে আটা বা ময়লা ভিজে তার নিচে পানি পৌছালেই হবে। সেখানে পানি প্রবাহিত করা জরুরি নয়। [ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ১/৪]

হাতে টিউব মেহেদি লাগিয়ে ওজু করা

মাসআলা : গোল্ড মেহেদী বা টিউব মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয। এবং এগুলো ব্যবহার করে প্রলেপ উঠিয়ে ফেলার পর অযু-গোসল সবই সহীহ হবে। কেননা এ মেহেদী লাগানোর পর শরীরে যে রঙ অবশিষ্ট থাকে যার কোনো কোনোটিতে পরবর্তীতে আবরণের মতো উঠে তা আমাদের জানামতে চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই এগুলো ব্যবহার করতে সমস্যা নেই। [রদ্দুল মুহতার ১/২৮৮, মাসিক আলকাউসার, এপ্রিল ২০১৬, প্রশ্ন নং ৩৬৫৬]

ওজুতে অন্যের সহযোগিতা নেয়া

মাসআলা : ওজুর সময় কেউ যদি পানি এনে দেয় কিংবা পানি ঢেলে দেয়, তবে অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি নিজের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অন্য কেউ অঙ্গসমূহ ডলে ডলে ধুয়ে দেয় তবে তা মাকরুহ হবে। আর যদি সক্ষমতা না থাকে, কিংবা অত্যধিক কষ্ট হয়, তবে এ সহযোগিতা নিতেও অসুবিধা নেই। [সূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮১, ১৮২; রদ্দুল মুহতার, ১/২৪১]

এটাস্ট বাথরুমে ওজু করা

মাসআলা : এটাস্ট বাথরুমে টয়লেট ও গোসলখানা একসঙ্গে থাকে। এ ধরনের গোসলখানায় ওজু করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে ওজুর সময় দুআ পড়া যাবে কিনা—এ বিষয়ে কথা হলো, গোসলখানা যদি বড় হয় এবং টয়লেটের কমোড ওজুর ট্যাপ থেকে কিছুটা দূরত্বে থাকে, তবে ওজুর সময় দুআ পড়া যাবে। আর যদি একই জায়গায় থাকে, তবে মুখে উচ্চারণ করে দুআ পড়া যাবে না, সে ক্ষেত্রে মনে মনে দুআ পড়া যাবে। [মাআরিফুস সুনান, ১/৭৭; আলকাউসার, ফেব্রুয়ারি ২০০৯, প্রশ্ন নং ১৫৫৩]

নামাজে ওজু ভেঙে গেলে

মাসআলা : নামাজে যদি ওজু ভেঙে যায় তাহলে নতুন করে ওজু করে নিতে হবে। ওজু ভেঙে যাওয়ার পর যদি কেউ তৎক্ষণাৎ ওজু করতে চলে যায় এবং পরবর্তীতে নামাজ ভাঙার মতো কোনো কাজ না করে, যেমন, কারও সঙ্গে কথা বলা, পানাহার করা, প্রস্রাব-পায়খানা করা ইত্যাদি, তাহলে ওজু করে এসে নামাজের অবশিষ্টটুকু আদায় করে নিলেও চলবে। অবশ্য নতুন ওজু করার পর নতুনভাবে নামাজ শুরু করাই ভালো।

যদি জামাতে নামাজ আদায়রত অবস্থায় এমনটা ঘটে, তাহলেও একই বিধান। জামাতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মুসল্লিদের সামনে দিয়ে হেঁটে আসতেও সমস্যা নেই। আর বের হতে না পারলে আপন স্থানে বসে পড়বে। জামাত শেষ হওয়ার পর ওজু করে নামাজ পড়বে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ