Post Updated at 17 Apr, 2023 – 9:28 AM
বর্তমান সময়ে যেসকল বিধান নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই টপিক। ফিতরা কি খাদ্যদ্রব্য দিয়েই আদায় করতে হবে নাকি টাকা দিয়ে আদায় করলেও আদায় হবে এ নিয়ে ফকীহ বা ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
ফিতরা সম্পর্কিত সকল পোস্ট একত্রে পাওয়া যাবে এখান থেকে। ফিতরা বিষয়ে যে পোস্টগুলো করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
- ২০২৩ সালের ফিতরার পরিমাণ ও মাসআলা
- ফিতরা কাকে দেয়া যাবে? কোন সময়ে ফিতরা আদায় করতে হয়?
- ফিতরা কেন আমাদের উপর ওয়াজিব হয়েছে? ফিতরা কার উপর ওয়াজিব?
- ফিতরা খাদ্য দিয়েই আদায় করতে হবে? নাকি টাকা দিয়েও আদায় করা যাবে? (আপনি এটি এখন পড়ছেন)
যে ইমামদের মতে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ নয়
ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ (রহ.) এর মতে নগদ অর্থ দেয়া বৈধ হবে না। কারণ হাদীসে স্পষ্টভাবে খাদ্যবস্তু দ্বারা ফিতরা আদায় করার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সময়ের প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে ফিতরা আদায় করার প্রমাণ হাদীস দ্বারা পাওয়া যায় না। তাই তাদের মত হচ্ছে, খাদ্যবস্তু দ্বারাই ফিতরা দিতে হবে, টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ই হবে না।
যে ইমামদের মতে টাকা দিয়েও ফিতরা আদায় বৈধ
অপরপক্ষে ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরী, আতা, হাসান বাসরী, ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহ. প্রমুখের মতে, নগদ অর্থ দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা বৈধ। কেননা সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো দরিদ্র মানুষকে ঈদের আনন্দে শরীক হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। দরিদ্র মানুষের যেমন প্রয়োজন খাদ্যের, তেমনি প্রয়োজন কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রীর।
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) লিখিত বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীর যাকাত অধ্যায়ের বাবে আরযি ফিয যাকাত পরিচ্ছদে এসেছে:
সাহাবী হযরত মুয়াজ (রাঃ) ইয়েমেনবাসীদের লক্ষ্য করে বলেছেনঃ
তোমরা যব এবং ভুট্টার পরবর্তে পোশাক সদকা (যাকাত কিংবা ফিতরা) দাও। কেননা তা তোমাদের জন্য সহজ এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবীদের জন্য কল্যানকর।
সকলেই যদি শুধু খাদ্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে, তাহলে হয়তো তার ঘরে জমা হয়ে যাবে অঢেল খাদ্য। অথচ তার এত খাবারের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন তার কাপড়-চোপড়, সেমাই, চিনি ও অন্যান্য সামগ্রী। এ অবস্থায় তার প্রয়োজন পূরণের জন্য তাকে অতিরিক্ত খাবার বিক্রি করতে হবে। এতে যেমন রয়েছে বিক্রি করার বিড়ম্বনা, তেমনি বিক্রি করতে হবে তুলনামূলক কম মূল্যে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র মানুষটি। তাই অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম।
এছাড়াও টাকা দিয়ে আদায় করার পক্ষে সাহাবী (রা) ও তাবেয়ীদের (রহ.) আমল রয়েছে। ইমাম বুখারীর উস্তাজ ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা রহঃ তার পৃথিবীবিখ্যাত হাদীসের কিতাব “মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা” এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫০৭ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম এনেছেন فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ তথা টাকার বিনিময়ে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করা। এর অধীনে তিনি একাধিক আছার উল্লেখ করেছেন।
ফিতরার মূল্য দিয়ে চাল-ডাল-তেল ইত্যাদি কিনে দিলে কি ফিতরা আদায় হবে?
জ্বি, আদায় হবে। আমরা যদি হাদীসে বর্ণিত ৫টি খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বের করে সেই টাকা দিয়ে চাল-ডাল-তেল-দুধ-সেমাই ইত্যাদি কিনে গরিবদের দেই। তাহলেও ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। যেমন: কেউ খেজুর দিয়ে ফিতরা দেয়ার নিয়ত করে এর মূল্য পাওয়া গেল ৪৫০ টাকা। এরপর সেই টাকা দিয়ে বা এর সাথে কিছু টাকা যোগ করে, কোনো একজন দরিদ্র ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বাজার করে দেয়। তাহলেও ফিতরা আদায় হবে।
উপসংহার
তাই আমরা খাদ্যদ্রব্য ও টাকা উভয়টি দিয়েই ফিতরা আদায় করতে পারি। এটা নিয়ে অহেতুক কুট-তর্কে আমরা না জড়াই। খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা সাহাবীদের (রা) আমল দ্বারা প্রমাণিত। যে বিষয়টি সাহাবীগণ (রা) আমল করে গিয়েছেন সে বিষয়টিকে অবৈধ, নাজায়েজ, হাদীসের বিরোধী ইত্যাদি ট্যাগ না দেই। সাহাবীগণের (রা) চেয়ে নিজেদেরকে বা পছন্দের শায়খদেরকে বেশি ইসলাম বুঝনেওয়ালা মনে না করি। আল্লাহ আমাদেরকে কট্টরপন্থিতা পরিহার করার তাওফিক দান করুন।
আলমগীর
April 17, 2023 at 8:58 amহাদিস গুলোর সনদ দিলে সবচেয়ে ভালো হতো