Post Updated at 7 Apr, 2023 – 10:40 AM

ফিতরা সম্পর্কিত সকল পোস্ট একত্রে পাওয়া যাবে এখান থেকে। ফিতরা বিষয়ে যে পোস্টগুলো করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

  1. ২০২৩ সালের ফিতরার পরিমাণ ও মাসআলা
  2. ফিতরা কাকে দেয়া যাবে? কোন সময়ে ফিতরা আদায় করতে হয়?
  3. ফিতরা কেন আমাদের উপর ওয়াজিব হয়েছে? ফিতরা কার উপর ওয়াজিব? (আপনি এখন এটি পড়ছেন)
  4. ফিতরা খাদ্য দিয়ে আদায় করতে হবে? নাকি টাকা দিয়েও আদায় হবে?

সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেন ওয়াজিব?

হাদীস শরীফ থেকে যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পিছনে বেশ কিছু হিকমতের উল্লেখ পাওয়া যায়। সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবার পিছনে হিকমতগুলো নিম্নরূপঃ

 

ফিতরা ওয়াজিব হবার প্রথম কারণ

একজন রোজাদার ব্যক্তির রোজা পালন করতে গিয়ে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, যার কারণে রোজা তার ভঙ্গ হয়ে যায় না, কিন্তু রোজার ত্রুটি হয়। রোজার এ ত্রুটি মার্জনার জন্যই সাদাকাতুল ফিতর। যেমন একজন রোজাদার ব্যক্তি দিনের বেলায় পানাহার করেনি, স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় নি; যার কারণে তার রোজা নষ্ট হয়নি। কিন্তু পরনিন্দা বা গিবত করেছে, অশ্লীল কথাবার্তা বলেছে, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলেছে, এতে রোজা ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। এ থেকে রোজাকে পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ করার জন্যই সাদাকাতুল ফিতর।

ফিতরা ওয়াজিব হবার দ্বিতীয় কারণ

গরীব-দরিদ্র মানুষগুলো এই সমাজেরই মানুষ। তারা সারা বছরই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে থাকে। তারা কমপক্ষে ঈদের দিনের একদিন যাতে ঈদ আনন্দে সকলের সাথে শরীক হতে পারে। এজন্য তাদের কিছু খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেয়া।

ফিতরা ওয়াজিব হবার তৃতীয় কারণ

দীর্ঘ এক মাস উপবাস থাকার পর আল্লাহ মেহেরবাণী করে ঈদের দিনে পানাহারের অনুমতি দিয়েছেন। তারই শুকরিয়া স্বরূপ সাদাকাতুল ফিতর।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাকে অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথাবার্তা ও কার্যকলাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য এবং মিসকীনদের কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন।

(আবু দাউদ, ইবনে মাজা, বায়হাকী)

অন্য হাদীসে রয়েছেঃ “তাদের আজকের দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরা থেকে অমুখাপেক্ষী রাখ” (বায়হাকী, দারু কুতনী)

সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কার উপর ওয়াজিব?

যাকাত, কুরবানী ও সাদাকাতুল ফিতিরের নিসাবের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলঃ কারও মালিকানায় যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা থাকে, তবে তিনি নিসাবের মালিক, তার ওপর এসব ইবাদত আবশ্যক হবে। যদি কারও কাছে এ দুটোর কোনোটিই নিসাব পরিমাণ না থাকে, অথবা স্বর্ণ-রূপা নেই কিন্তু নগদ টাকা আছে কিংবা ব্যবসায়িক সম্পদ আছে, অথবা প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদ আছে, তবে এ ক্ষেত্রে সবকিছুর মূল্য মিলিয়ে যদি কোনো একটির নিসাব হয়ে যায়, তবে সেও ‘নিসাবের মালিক’ বলে বিবেচিত হবে।

তবে নিসাবের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে যাকাত আর সাদাকাতুল ফিতরের মধ্যে পার্থক্য হলো, স্বর্ণ-রূপা, নগদ টাকা আর ব্যবসায়িক সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়। কোনো প্রকার স্থাবর সম্পদ ও নিজের ব্যবহারের আসবাবপত্রের যাকাত দিতে হয় না। আর সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে স্বর্ণ-রূপা, নগদ টাকা আর ব্যবসায়িক সম্পদের পাশাপাশি প্রয়োজন-অতিরিক্ত স্থাবর সম্পদ ও প্রয়োজন-অতিরিক্ত আসবাবপত্রেরও হিসাব করতে হবে। এসব মিলিয়ে যদি কেউ স্বর্ণ বা রূপার নিসাবের সমমূল্যের মালিক হয়  তবে তার ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। কুরবানির নিসাব আর সাদাকাতুল ফিতরের নিসাব একই।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। তাহল, গরীবদের জন্য উপকারী বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হয়। সে হিসেবে যদি কারও কাছে শুধুই স্বর্ণ থাকে, তবে তিনি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মালিক হলে যাকাত-কুরবানি ও সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবেন। আর যার কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু রূপা আছে, অথবা কিছু স্বর্ণের সঙ্গে কিছু টাকা আছে, কিংবা শুধু টাকা আছে, কিংবা ব্যবসায়িক সম্পদ আছে, এ সবক্ষেত্রেই সাড়ে বায়ান্ন রূপার মূল্যই নিসাব। তার সম্পদের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ হয় তবে তিনি নিসাবের মালিক।

তবে আমাদের কাছে এই পরিমাণ সম্পদ না থাকলেও যাদের ফিতরার পরিমাণ টাকা সাদাকা করার তাওফিক আছে তাদের জন্যেও উচিত হবে ফিতরা আদায় করা। বর্তমানে জনপ্রতি ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ যদি ১১৫ টাকা হয়, তবে যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তাদেরও উচিত হবে, সামর্থ্য থাকলে এ সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।

পরিবারের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর কে আদায় করবেন?

পরিবারের কর্তা তার নিজের ও তার অধীনস্থ নাবালেগদের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবেন। স্ত্রীর ফিতরা আদায় করা স্বামীর জন্য আবশ্যক নয়। তবে যদি স্বামী আদায় করেন তাহলে স্ত্রীর পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং স্বামীও এজন্য সাওয়াবের অংশীদার হবেন। স্ত্রী ব্যতীত কর্তার অধীনস্থ নাবালেগ ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকেও তিনি ফিতরা আদায় করবেন। যাদের উপর রোজা ফরজ নয়, অথবা ফরজ হলেও যারা রমজানের রোজা রাখতে পারে না তাদের পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করতে হবে।

Comments
  1. হুজুর আমার হাজবেন্ডের ইনকাম কম অনেক সময় নিজেদের এই অনেক অভাব যায় সংসারে।
    আমার স্বামি রাজমিস্ত্রী কাজ করে তো যখন কাজ পায় তখন ওনি করে নয়ত বেকার ঘুরেঘাড়ে।।
    আমার ছোট বাচ্চা তিনজন।
    একজনে বয়স ১১ আরেকজন ৬ আরেকজন ৫ মাস।
    এরা তো রোজার বয়স হয় নি এদের ও কি ফিতরা আসবে এদের ও কি দিতে হবে।
    জানতে চাই।

    1. ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্যে নগদ টাকা থাকা জরুরি নয়। বরং প্রয়োজন অতিরিক্ত স্থাবর সম্পদ (জমি, বাড়ি ইত্যাদি)ও যদি নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও ফিতরা দেয়া ওয়াজিব হয়। আর যার ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব হয়, তিনি নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করবেন, তার নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করবেন। সন্তান বালেগ হয়ে যাওয়ার বাবা/মা তাদের ফিতরা আদায় করলে তো অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে তা ওয়াজিব নয়।
      তাই আপনার কিংবা আপনার স্বামীর ওপর যদি ফিতরা ওয়াজিব হয়ে থাকে, তবে তো আপনার নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করতে হবে। আর যদি ফিতরা ওয়াজিব না হয়, তবে সবটাই ঐচ্ছিক। সুযোগ হলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় করলেন। যদি কষ্ট হয় তবে না করলেও অসুবিধা নেই। করলে সওয়াব হবে এবং এটা নফল হবে।
      সামর্থ যদি আপনাদের কম থাকে, তবে সর্বনিম্ন পরিমাণ অনুসারে ফিতরা আদায় করতে পারেন। এমনকি আপনার এলাকায় যে দামে আটা বিক্রি হয়, আপনি যদি সে অনুসারে ফিতরা দিতে চান, অর্থাৎ জনপ্রতি ১কেজি ৬৫০ গ্রাম আটার মূল্য, তবে তাও করতে পারেন। এতে ফিতরার পরিমাণ হয়তো ১১৫ টাকার চেয়েও কম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ