
Post Updated at 5 Aug, 2025 – 9:44 AM
আমাদের সমাজে পাগড়ি পরিধান করে সালাত আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। তা হলো:
পাগড়ি বিশিষ্ট দুই রাকাত সালাত, পাগড়িহীন সত্তর রাকাতের চেয়েও উত্তম।
এটি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। ইমামগণ ও মুহাদ্দীসগণ এই কথাটিকে মিথ্যা, জাল ও বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
পাগড়ি আরবের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও আরব দেশে পাগড়ির প্রচলন ছিল। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের যুগেও পাগড়ির ব্যাপক ব্যবহার পাওয়া যায়।তাঁরা এই পাগড়ি অভ্যাসগত ও কেবল পোশাক হিসাবেই পরিধান করতেন। তারা পোশাকের অংশ হিসাবে প্রায় সবসময়ই পাগড়ি পরা অবস্থায় থাকতেন। সালাতের সময়ও তাদের মাথায় পাগড়ি থাকত। বিশেষ করে কোনো মজলিস বা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময় তাঁরা পাগড়ির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায় শুধু সালাতের সময়ই পাগড়ি পরা হয়। আবার অনেকে আছেন যারা শুধু ফরজ সালাতের সময়েই পাগড়ি পরেন। ফরজ সালাত শেষ হলে পাগড়ি খুলে বাকি সুন্নত-নফল সালাত আদায় করেন। পাগড়িকে সালাতের সাথে এভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া, মূলত এর স্বাভাবিক ব্যবহাররীতির পরিপন্থি। সাহাবায়ে কেরাত, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িগণ পাগড়িকে সালাতের সাথে এভাবে নির্দিষ্ট করে নিতেন না।
পাগড়ি ব্যবহারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ফজিলতপূর্ণ হাদীসের উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে “পাগড়ি বিশিষ্ট দুই রাকাত সালাত, পাগড়িহীন সত্তর রাকাতের চেয়েও উত্তম” এ হাদীসটি অন্যতম। সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে এ হাদীসের যথেষ্ট চর্চাও রয়েছে। মূলত তা রাসূল (সা) এর হাদীস নয়; বরং মিথ্যুকদের বানানো জাল হাদীস।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ) পাগড়ির ফজিলত সংক্রান্ত উল্লেখিত বক্তব্যটির ব্যাপারে বলেনঃ “এটা একটা মিথ্যা এবং বাতিল কথা”। [- শরহে জামেয়াত তিরমিযি, ইবনে রজব (রহ) – ২/৮৩ (পান্ডুলিপি)]
হাফেজ সাখাবী (রহ) সালাতে পাগড়ি বাঁধার ফজিলতের ব্যাপারে যে তিনটি হাদীস প্রমাণিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে পুর্বোক্ত হাদীসটিও রয়েছে। [- আল মাকাসিদুল হাসানাঃ ৩৪৬]
তাই পাগড়িকে আমরা পোশাকের অংশ হিসাবে পরব। পাগড়ি পরে সালাত আদায় করলে বেশি সওয়াব হবে এমন ধারণা পোষণ করব না। কারণ এ বিষয়টি নবীজি (সা) কর্তৃক সত্যায়িত নয় যে, পাগড়ি পরে সালাত আদায় করলে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব হবে। বরং এই কথাটি মিথ্যাবাদী জালিয়াতগণ নবীজি (সা) এর নামে মিথ্যারোপ করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এরকম জাল ও বানোয়াট কথাগুলো থেকে হেফাজত করুন। এসকল জাল ও মিথ্যা কথার উপর আমল করা থেকে বিরত রাখুন। আমীন।
তথ্যসূত্রঃ
প্রচলিত জাল হাদীস (পৃষ্ঠাঃ ১২৯, ১ম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২০০৩)
মাওলানা মুতীউর রহমান
তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায়
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
প্রকাশকঃ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
Leave a Reply