Press ESC to close

নবজাতকের জন্যে ইসলামের উপহার

Post Updated at 24 Apr, 2024 – 1:07 PM

বাবা হতে পারা, মা হতে পারাÑ প্রতিটি নারী-পুরুষের কাছেই এক পরম কাক্সিক্ষত বিষয়। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় যখন নবজাতক সন্তান আলোর মুখ দেখে। সন্তানের মধ্য দিয়েই টিকে থাকে মানুষের বংশধারা, রক্ষা পায় মানবসভ্যতাও। সন্তান জন্মের আনন্দ ব্যক্তি কেবল অনুভবই করতে পারে। এ আনন্দের যথার্থ প্রকাশ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। চারদিক থেকে শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকে। বাবা-মায়ের এ খুশিতে শরিক হয় আশপাশের সকলেই।

কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, চারপাশকে আলোকিত করে খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে যে সন্তানের আগমন, কয়েক বছরের ব্যবধানে সে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। এর সবচেয়ে বড় কারণ উপযুক্ত শিক্ষা দীক্ষা যতœ ও পরিবেশের অভাব। সন্তানকে তাই উপযুক্ত পরিবেশে গভীর যত্নে উপযুক্ত শিক্ষা ও দীক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাবা-মায়ের, অভিভাবকের। এ দায়িত্বের শুরুটা সন্তান জন্মলাভের পর থেকেই শুরু হয়। সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়, তার প্রতি বাবা-মায়ের দায়িত্বও বাড়তে থাকে।

সন্তানের জন্মের পর আনন্দঘন সময়টাতেই অভিভাবকের জন্যে রয়েছে কিছু নির্দেশনা। আমরা এখানে সেগুলোই তুলে ধরছি :

১. আজান-ইকামত

শিশুর ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত বলা। নবজাতকের প্রতি এটি প্রথম উপহার। তার জন্মের পরপরই তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামতের শব্দগুলো বলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে পবিত্র হাদীস শরীফে। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা হযরত ফাতেমা রা.এর প্রথম পুত্র হযরত হাসান রা. যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত বলেছিলেন, ঠিক যেভাবে নামাজের জন্যে আজান ও ইকামত দেয়া হয়। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৪]

এই আজান ও ইকামতের শব্দগুলো শুনিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার জগতে প্রবেশের মুহূর্তেই একটি শিশুকে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্বের কথা জানিয়ে দেয়া হয়, ইসলামের শিক্ষার প্রতি তাকে আহ্বান জানানো হয়, আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের ঘোষণা তাকে শুনিয়ে দেয়া হয়। হয়তো সে আজান ও ইকামতের এ বাক্যগুলো কিছুই বুঝবে না, কিন্তু জীবনের একেবারে শুরুতে এ শব্দগুলো শোনার একটি প্রভাব তার অন্তরে থেকে যাওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। এর পাশাপাশি আজান ও ইকামতের সময় শয়তান দূরে সরে যাওয়ার কথাও হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। শয়তানকে দূরে সরিয়ে, তার চক্রান্তকে দুর্বল করে দিয়ে এবং শিশুর স্বভাবজাত শুদ্ধতাকে শয়তান পরিবর্তন করার পূর্বেই এ আজানের মাধ্যমে তাকে ইবাদতের দিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

২. তাহনিক

তাহনিক করানো। তাহনিক হচ্ছে খেজুর বা এ জাতীয় কোনো মিষ্টিদ্রব্য চিবিয়ে আঙ্গুলে করে মুখের মিষ্টি লালা শিশুর জিহ্বায় লাগিয়ে দেয়া। সাহাবায়ে কেরামের যখন সন্তান জন্ম নিত, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে তাহনিক করিয়ে নিতেন। উদ্দেশ্য, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লালার বরকত লাভ করা। তাই নবজাতক সন্তানকে কোনো নেককার মানুষকে দিয়ে তাহনিক করিয়ে নেয়া উত্তম।

৩. আকিকা

আকিকা করা। সন্তান জন্মের পর আকিকা করা সুন্নত। যদি সামর্থ থাকে তাহলে ছেলে শিশুর জন্যে দুটি ছাগল আর মেয়ে শিশুর জন্যে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করা সুন্নত।  আকিকা করার পর এর মাংস নিজেও খাওয়া যাবে, অন্যকেও খাওয়ানো যাবে। এর বিধান অনেকটাই কুরবানির মতো। চাইলে এ মাংস রান্না করে আত্মীয়স্বজনসহ অন্যদেরকে দাওয়াত করেও খাওয়ানো যাবে, আবার অন্যদেরকে বণ্টন করে কাঁচা মাংসও দিয়ে দেয়া যাবে। জামে তিরমিযী শরীফের হাদীস, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করেছেন, তারা যেন ছেলে শিশুর জন্যে (কুরবানি করা যায় এমন) দুটি কাছাকাছি রকমের ছাগল আকিকা করে, আর মেয়ে শিশুর জন্যে একটি। [হাদীস : ১৫১৩]

অনেকে মনে করে, মেয়ে শিশুর জন্যে হয়তো মাদি ছাগল জবাই করতে হয়। আসলে এমন কোনো কথা নেই। সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, মাদা-মাদি যে কোনো ছাগলই আকিকা করা যায়।

৪.মাথা মুণ্ডানো

মাথা মুণ্ডানো। মাথার চুল ফেলে দেয়াও একটি সুন্নত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশু সন্তানের আকিকা করার পাশাপাশি তার মাথার চুল মু-িয়ে দেয়ার আদেশ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৪৭২]

৫. চুল পরিমাণ সদকা

চুল মেপে সদকা করা। চুল মুণ্ডানোর পর চুল ওজন করে সে পরিমাণ রূপা সদকা করাও সুন্নত। নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা. তার দুই ছেলে হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রা. এর চুল মেপে সে পরিমাণ রূপা সদকা করেছিলেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ১০৬৭, ১০৬৮]

৬. নাম রাখা

নাম রাখা। নাম রাখা শিশুর জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ নাম তার সারা জীবনের পরিচয়। নাম ধরেই মানুষ তাকে ডাকবে, নাম দিয়েই তাকে মানুষ চিনবে। এজন্যে বাবা-মায়ের উচিত, সন্তানের জন্যে ভালো ও সুন্দর নাম রাখা। অনেককেই দুটি নাম রাখতে দেখা যায়। একটি ‘সুন্দর’ নাম, আরেকটি ‘ডাক’ নাম। কাউকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে যদি ডাক নাম বলে দেয় তাহলে তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হয় : তোমার কোনো সুন্দর নাম নেই? তাই নাম যত অংশেই হোক, সবগুলোই সুন্দর হওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। [জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৮৩৩]

বড়দের নামেও নাম রাখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নবীদের নাম, সাহাবীদের নাম, তাবেয়ী-তাবেয়ীদের নাম এবং বুজুর্গ মনীষীদের নাম অনেকেই রেখে থাকেন। কেউ কেউ আবার সুন্দর অর্থ দেখে নাম বাছাই করেন। তবে যেমনই হোক, নাম যেন সুন্দর হয়, ইসলামি আকিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনো নাম না হয়Ñ সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

কেউ কেউ আবার কোনো আরবি শব্দ হলেই মনে করেÑ তা নাম রাখা যেতে পারে। আর যদি সেটা পবিত্র কুরআনের কোনো শব্দ হয় তাহলে তো কথাই নেই! অথচ কুরআন শরীফে তো ফেরাউন আর কারুনের নামও আছে, শয়তানের নামও আছে। তাই পবিত্র কুরআনের কোনো শব্দ বা কোনো আরবি শব্দ দিয়ে নাম রাখতে চাইলে অবশ্যই তার অর্থ জেনে নেয়া উচিত। অনেকে আবার ইন্টারনেট ঘেটে কিংবা কোনো নামের বই থেকে নাম রাখে। কখনো দেখা যায়, একটি নাম আরবি থেকে প্রথমে ইংরেজি হয়, এরপর ইংরেজি থেকে হয় বাংলা। এরপর যা হয় সেটার সঙ্গে আরবির কোনো সম্পর্ক থাকে না। তাই নাম রাখার আগেই নামের সঠিক উচ্চারণ কী হবে তাও জেনে নিন।

শুরুতেই আমরা যে শিশুর কানে আজান ও ইকামতের কথা বলেছি, সেটা তো জন্মের পরপরই করতে হবে। তাহনিকও যত দ্রুত সম্ভব করিয়ে নেবে। আর বাকিগুলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিনের আমল। শিশুর আকিকা, চুল মুণ্ডানো, সদকা করা এবং নাম রাখা—এগুলো সপ্তম দিনে পালন করা সুন্নত। আকিকা সপ্তম দিনে করতে না পারলে ১৪ বা ২১ তম দিনেও করা যেতে পারে।

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Comments (12)

  • MD SHAHAB UDDINsays:

    June 27, 2025 at 11:48 AM

    আলহামদুলিল্লাহ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় এখান থেকে জানা যায়।

  • মাহমুদুলsays:

    June 27, 2025 at 5:32 PM

    জাযাকাল্লাহু খাইরন ।।সত্যিই অনেক উপকারী একটা অ্যাপ ।আল্লাহ সকলকে কবুল করি নিক ‌🌸

  • আসমা হালিমsays:

    June 29, 2025 at 6:49 PM

    আমার বাবা মারা গেছেন।আমার বাবার টাকা না থাকার কারণে আমার আকিকা দিতে পারে নাই আমি কি আমার আকিকা করলে আমার বাবার কাছে সাওয়াব পৌঁছাবে।

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      July 1, 2025 at 2:47 PM

      আপনি আপনার আকিকা করে যদি আপনার বাবার জন্যে তা ঈসালে সওয়াব করার নিযত করেন, (অর্থাৎ এ নিয়ত করেন, আল্লাহ তাআলা যেন এর সওয়াব আপনার বাবাকে পৌছে দেন) তাহলে তিনি সওয়াব পাবেন।

  • মোঃ নূর হাসানsays:

    June 30, 2025 at 8:40 PM

    মাশাআল্ল-হ! ইসলামিক জীবন বিধান কতই না উত্তম!

  • Mahbuba Shirinsays:

    July 3, 2025 at 5:59 AM

    আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামিক জীবন বিধান কত সুন্দর! আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামিক বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমীন।

  • Rakibul islamsays:

    July 3, 2025 at 8:33 PM

    দোয়া করবেন আল্লাহ যেন বিয়ে করার তাওফিক দেন এবং নেক্কার স্ত্রী দান করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ৩,৫৯০,৫১৫

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন