Post Updated at 17 Aug, 2023 – 8:52 AM
প্রত্যেক সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা সুন্নত ও মুস্তাহাব। সপ্তাহে এই দুইদিন রোজা রাখা ছিল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আমল। আর এই দুই দিন আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন এর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই আসুন, সাধ্য মত নিজেরা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরকে সাথে নিয়ে, সপ্তাহে এই দুই দিন নফল রোজা রাখি।
আমাদের চাকুরির ক্ষেত্রে যখন স্যালারি রিভিউ বা প্রোমোশনের সময় আসে। অথবা যখন বসের কাছে আমাদের কাজের রিপোর্ট সাবমিট করা হয়। কিংবা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ যখন অফিস ভিজিটে আসেন।
তখন আমরা চেষ্টা করি সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে সিরিয়াসলি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার। সচেষ্ট থাকি যেন আরোপিত দায়িত্বের পাশাপাশি আরো কিছু বাড়তি কাজ করে অন্যান্যদের থেকে একটু এগিয়ে থাকতে পারি। যেন রিপোর্টিংয়ের দিন বা এরকম বিশেষ কোনো দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ লেভেলের ডেডিকেশন প্রকাশ পায়।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত ও হাদীস
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তা’আলার দরবারে বান্দার) আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ রোযা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটাই আমার নিকট পছন্দনীয়।” (তিরমিযি ৭৪৭)
বান্দার আমলনামা সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। এই দুই দিন সাপ্তাহিক রিপোর্টিংয়ের দিন। তাই নবীজি (সা) এই দুই দিন এমন একটি আমলের মাঝে সারা দিন অতিবাহিত করতেন, যেই আমলটি শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। যেই আমলের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায়। যেই আমলটি মানুষকে মুত্তাক্বী হতে সহায়ক। যে আমলের ব্যাপারে আল্লাহ নিজেই তার প্রতিদান দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সেই মহিমান্বিত আমলটি হচ্ছে সিয়াম বা রোজা। রাসূল (সা) আমলনামা পেশ করার এই দুই দিনের রোযার ব্যাপারে ছিলেন বিশেষ যত্নবান।
আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতেন।” (তিরমিযি ৭৪৫)
সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসূমহ খুলে দেয়া হয়
সোম ও বৃহস্পতিবার আরো কয়েকটি কারণে বিশেষায়িত। যেমনঃ এই দুই দিনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য শর্তসাপেক্ষে সাধারন ক্ষমার ঘোষণা দেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যারা আল্লাহর সাথে শিরক (অংশীদার স্থাপন) করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য অবকাশ দাও, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য সুযোগ দাও, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য সুযোগ দাও।” (মুসলিম ৬৪৩৮)
সোমবার রোজার আরো দুটি কারণঃ নবীজির (সা) জন্মলাভ ও কুরআন নাযিল
আরো একটি কারণে সোমবারের রোজা রাখা নবীজির (সা) বিশেষ গুরুত্বের ছিল। তা হচ্ছে সোমবার নবীজি (সা) জন্মলাভ করেছিলেন এবং এদিন কুরআন নাযিল হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
“ঐদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং ঐদিন আমার উপর (কুরআন) নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম ২৬৪০)
নফল রোজার নিয়ত
ফরজ বা নফল রোজার জন্য বিশেষ নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরি নয়। আপনি সোমবার বা বৃহস্পতিবার রোজা রাখার জন্য সাহরিতে উঠেছেন। সেটিই আপনার নিয়তের জন্য যথেষ্ট। নিয়ত অর্থ অন্তরের ইচ্ছা বা চাওয়া। অর্থাৎ আপনার ইন্টেনশন। আপনার মনে কী ইন্টেনশন আছে সেটা মুখে উচ্চারণ করা এক্ষেত্রে জরুরি নয়। রোজার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
আইয়ামে বীজ ও প্রতি মাসে তিনটি রোজা
প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা হলে তাতে সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই তিনটি রোজা আমরা মাসের যে কোনো তিন দিন রাখতে পারি। সোমবার, বৃহস্পতিবার রাখতে পারি। এছাড়াও প্রতি মাসে আইয়ামে বীজের রোজা রাখার মাধ্যমেও আমরা সারা মাস রোজা রাখার সওয়াব পেতে পারি।
এ মাসের আইয়ামে বীজের রোজার তারিখ, আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত এবং প্রতি মাসে তিনটি রোজার ফজিলত ও মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে নিচের লিংক থেকে।
আইয়ামে বীজের রোজার তারিখ, ফজিলত, বিধান ও মাসআলা
তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করি। প্রতি সপ্তাহে রোজা রাখা কষ্ট হয়ে গেলে অন্তত এক সপ্তাহ পরপর রাখি। সপ্তাহে দুটি রাখতে কষ্ট হলে অন্তত একটি রাখি। বুঝাতে চাচ্ছি যে, এই আমলটি একেবারে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে অন্তত কিছু পালন করার চেষ্টা করি। আমাদের ফরজ আমলের ত্রুটিবিচ্যুতি বা ঘাটতি হলে আল্লাহ তায়ালা নফল আমলের দ্বারা সেই ঘাটতি পূরণ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। এজন্য ফরজ-ওয়াজিবকে ঠিক রেখে নফল আমলের দিকেও বিশেষ যত্নবান হওয়া একান্ত কাম্য।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
Comments (4)
আখেরী চাহার সোম্বা ও সফর মাসের অন্যান্য বিদআত - Muslims Daysays:
August 18, 2023 at 11:32 AM[…] প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখা (বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন) […]
Sk kolimoddinsays:
November 26, 2023 at 6:39 PMমাশাআল্লাহ
মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিলsays:
March 24, 2024 at 4:43 AMআলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু জানতে পারলাম
আল,আমিনsays:
October 28, 2024 at 7:22 PMআলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু জানতে পারলাম