Press ESC to close

শীয়া মতবাদঃ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা – বই রিভিউ

Post Updated at 9 Aug, 2025 – 7:50 AM

শীয়া সম্প্রদায় নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনা করার সময় একদল লোক পাওয়া যায়। যারা কিনা বুঝে বা না বুঝে বলে থাকেনঃ “আমি শীয়া-সুন্নী বুঝি না। আমি বুঝি ইসলাম। শীয়া-সুন্নীর পার্থক্যের কথা কুরআন হাদীসের কোথায় লিখা আছে? ইসলামে শীয়া-সুন্নী বলে কিছু নাই। সব মুসলিম ভাই ভাই। মুসলিমদের উচিত নিজেদের মধ্যকার ঐক্য বজায় রাখা… … …”। এই কথাগুলো যে কত বড় ভুল, অবান্তর, বাস্তবতা বিবর্জিত এবং একই সাথে ইসলামী আক্বিদার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক; তার প্রমাণ “শীয়া মতবাদঃ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা” নামক বইয়ের লাইনে লাইনে পাওয়া যাবে।

বইটি লিখেছেন মিশরের বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক, ইতিহাসবিদ ও চিকিৎসক ড. রাগেব আস-সারজানী। ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করা এই দাঈ ১৯৮৮ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে ইউরোসার্জারি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি কুরআন হিফজ করেন। মাস্টার্স ও ডক্টরেট করেন যথাক্রমে ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালে। লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০ এর উপরে।

আরবি ভাষায় লিখিত “আশশীয়া নিদাল আল দালাল” নামক কিতাবটির বাংলা অনুবাদই হচ্ছে “শীয়া মতবাদঃ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা”। বইটি অনুবাদ করেছেন মতিঝিলের জামিয়া দীনিয়া শামসুল উলুম মাদরাসা (পীরজঙ্গি মাদরাসা) এর সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা ওমর ফারুক।

শীয়া ধর্মের ভ্রান্ত আক্বিদা ও বিশ্বাস

১. শীয়াদের কালিমা মুসলিমদের শাহাদাত থেকে ভিন্ন। তাদের কালিমা হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ আলীউন ওয়ালিউল্লাহি ওয়াসিয়্যু রাসূলুল্লাহি ওয়া খালিফাতুহু বিলা ফাসলিন

২. শীয়াগণ তাদের আযানে ‘আশহাদু আন্না আলীউন ওয়ালিউল্লাহ ও হুজ্জাতুল্লাহ এবং হাইয়া আলা খাইরিল আমাল’ যুক্ত করেছে

৩. শীয়াদের প্রত্যেক সালাতের শেষে বলতে হয়ঃ হে আল্লাহ! আবু বকর, ওমর, উসমান, মুআবিয়া, আয়েশা, হাফসা, হিন্দ এবং উম্মুল হাকামের উপর অভিশম্পাত করুন (নাউযুবিল্লাহ)

৪. নিজেদের বিশ্বাস গোপন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেয়া ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যা বলা, প্রতারণা বা প্রবঞ্চনা ইত্যাদি মতৎ কাজ বলে বিবেচিত হবে

৫. তাকিয়া (ভান ধরা) শীয়া ধর্মের নয় দশমাংশ। তাকিয়া হচ্ছে এমন একটি আক্বিদা যার দ্বারা তারা বুঝিয়ে থাকে যে, শীয়াদের জন্য প্রতিকুল পরিবেশে তারা এমন কথা বলতে থাকবে যা তাদের আক্বিদা বিরোধী। অর্থাৎ তারা তাদের প্রকৃত ধর্ম বিশ্বাসকে গোপন রেখে বিপরীত বিশ্বাসের অনুরূপ বক্তব্য দিতে পারবে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে পরিস্থিতি তাদের অনুকুলে চলে আসলে তখন তারা আবার তাদের আক্বিদা বিশ্বাস নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলবে। এই দ্বিমুখী নীতি বা ভান ধরে থাকার আক্বিদার নাম তাকিয়া। যাকে শীয়া ধর্মের দশ ভাগের নয় ভাগ হিসাবে তাদের ধর্মগুরুরা বলে থাকেন বা বইপুস্তকে লিখে থাকেন। তাদের এই ভান ধরে থাকার আমলের জন্য অসংখ্য মুসলিম শীয়াদের বিষবাষ্প দ্বারা প্রভাবিত

৬. শীয়াদের মতে মুতা বিয়ে বৈধ। এটি হলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাময়িক বিয়ে। যেখানে বিয়ের শর্তেই তার মেয়াদ উল্লেখ থাকে। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর বিয়ে কোনো ঘোষণা ছাড়াই তালাক হয়ে যায়। এটি ছিল মূলত জাহেলী যুগের একটি রেওয়াজ। যা ইসলামের প্রাথমিক যুগেও বৈধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সহীহ মুসলিমের হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি (সা) এর স্পষ্ট হাদীস দ্বারা এটি হারাম করা হয়। কিন্তু শীয়া ধর্মের বিশ্বাস হচ্ছে উক্ত মুতার বিয়ের সওয়াব সালাত ও সাওম থেকেও বেশি। তারা আরো বিশ্বাস করে একবার মুতায় অংশ নিলে সে ব্যক্তি হযরত হুসাইনের (রা) সমান মর্যাদা লাভ করবে। দুইবার মুতায় অংশ নিলে হযরত হাসান (রা) এর সমান মর্যাদা লাভ করবে। তিনবার হলে আলী (রা) এবং চারবার হলে স্বয়ং রাসূল (সা) এর সমান মর্যাদা লাভ করবে। (নাউযুবিল্লাহ)

৭. শীয়ারা বিশ্বাস করে নবী (সা) গোপনে আলী (রা) কে ৭০ ফুট লম্বা একটি পান্ডুলিপি হস্তান্তর করেছেন। যাতে প্রত্যেকটি হালাল-হারাম এমন কি আঁচড় দেয়ার শাস্তির কথাও বর্ণিত আছে। একে আলীর সহিফা বলা হয়।

৮. শীয়া ধর্মের অনুসারিরা বিশ্বাস করে যে, মুসলিমদের কাছে যে কুরআন আছে তা অসম্পম্পূর্ণ এবং তাতে বিকৃতি সাধন করা হয়েছে। শীয়াদের কুরআন, মুসলিমদের কুরআনের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বড়। তাদের বিকৃত কুরআনের আয়াতের সংখ্যা ১৭০০০ এর বেশি।

৯. শীয়া ইমামদের কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় বৈধ

১০. শীয়াদের বিশ্বাস হলোঃ নবীজির (সা) মৃত্যুর পরে সর্বোচ্চ ১৩ জন সাহাবী ছাড়া বাকি সবাই মুরতাদ হয়ে ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়েছে। এই কয়েকজন সাহাবী ছাড়া বাকি সকল সাহাবীগণকে শীয়ারা কাফের মনে করে

১১. আমরা যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা পোষণ করি। তারা নবী-রাসূলের নাম বলার পর বলে থাকি “আলাইহিস সালাম” সংক্ষেপে (আঃ)। আর সাহাবিগণের নামের শেষে আমরা “রাদিয়াল্লাহু আনহু” সংক্ষেপে (রাঃ) লিখে থাকি। অপর দিকে শীয়া ধর্মের অনুসারীরা পারতপক্ষে সাহাবিদের নামের শেষে (রাঃ) লিখে না, কারণ তারা সাহাবীগণকে কাফের বলে অপবাদ দেয়। আর হযরত আলী, হাসান, হুসাইন (রা) প্রমুখ সাহাবীগণের নামের শেষে “আলাইহিস সালাম” সংক্ষেপে (আঃ) লিখে থাকে। যা আমরা শুধু নবী-রাসূলগণের নামের শেষে লিখে থাকি।

১২. তাদের জঘন্যতম একটি বিশ্বাস হচ্ছেঃ নবীজির (সা) প্রাণপ্রিয় স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা) ও হযরত হাফসা (রা) নবীজিকে (সা) বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে

১৩. শীয়ারা হযরত আয়েশাকে (রা) বিশ্বাসঘাতক, মুনাফিক মনে করে

১৪. শীয়ারা ১২ জন ইমামের ধারনায় বিশ্বাসে। কুরআনের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তারা এই ধারনার প্রবর্তন করেছে। তারা মনে করে ইমামগণ নবীদের মতই আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত। তাদের ১২ জন ইমামকেই তারা নবীজির (সা) সমমর্যাদার অধিকারী মনে করে। তাদের মতে ইমামগণের নিকট নবীদের মত ওহি আসে। ইমামগণের জ্ঞান ও মর্যাদা তাদের কাছে নবীদের চেয়েও বেশি। ইমামগণের ইমামত মেনে নেয়ার জন্যেই নবীদের নবুয়ত দান করা হয়েছে। তারা আরো মনে করে নবীগণের জন্মলাভ হয়েছে ইমামগণের নূর থেকে। ইমামগণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের ঈমান এবং নিফাক সম্পর্কে অবগত। তাদের কাছে কারা জান্নাতে যাবে আর কারা জাহান্নামে যাবে তাদের একটি লিস্ট রয়েছে

১৫. শীয়াদের মধ্যে অনেকগুলো দল উপদল রয়েছে। তাদের একেক দলের বিশ্বাস ও কর্মকান্ডে বৈচিত্রময় শিরক ও বিদআতের ছড়াছড়ি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী দল হচ্ছে ইছনা আশারিয়া বা ‘বার ইমামপন্থি’ দল। যারা ১২ জন ইমামের ইমামত বা নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। তাদের তালিকার সর্বশেষ ইমাম হলেন মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আসকারী। তার ইমামত বর্তমান সময় পর্যন্ত জারি রাখার জন্য তারা অদ্ভুত এক পদ্ধতি বা বিশ্বাসের আবিষ্কার করেছে। তিনি ছোট শিশু অবস্থাতেই ইরাকের কোনো এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করেছেন। সময় হলে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন। ইনার বয়স বর্তমানে ১২০০ বছর। তার আধ্যাত্মিক দিক নির্দেশনায় শীয়াদের বর্তমান নেতারা পরিচালিত। শীয়াদের ইমামরা যেহেতু নিষ্পাপ এবং ওহীপ্রাপ্ত। তাই তাদের অনুসরণ শীয়াদের কাছে ফরজ। আর শীয়া নেতারা যেহেতু ইমামদের নির্দেশনায় পরিচালিত। তাই এই নেতাদের নির্দেশও তাদের কাছে পালন করা ফরজ। তাদের নেতারাও নিষ্পাপ এবং পবিত্র। এভাবেই চলছে ইরানের শীয়া নেতৃত্ব।

পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার আশংকায় এই পোস্টে শুধুমাত্র শীয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আকিদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরছি। বিস্তারিত রিভিউ পড়তে চাইলে ভিজিট করুন আমার ব্যক্তিগত ব্লগের এই লিংকেঃ
https://hellohasan.com/2021/07/09/শীয়া-মতবাদ-বই-রিভিউ

শীয়া সম্প্রদায়ের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

উক্ত বইতে শীয়া সম্প্রদায়ের আক্বিদাগুলো কিভাবে ডালপালা ও বিভিন্ন রঙ ছড়িয়ে আজকের এ পর্যন্ত এসেছে তার বিবরন সংক্ষেপে দেয়া হয়েছে। লেখক উল্লেখ করেছেনঃ হিজরতের পর ১০০ বছরেরও বেশি সময় পার হওয়ার পর শীয়া মতবাদটির বিস্তার শুরু হতে থাকে। শীয়াগণ ১২ জন ইমামে বিশ্বাসী। সেই ইমামদের তালিকায় প্রথম দিকের ৬-৭ জন ইমামের প্রত্যেকের আক্বিদা-বিশ্বাসই ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রত্যেকেই হক্বপন্থী আলেম ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেই সাহাবীগণের (রা) প্রতি অত্যন্ত ভাল ধারনা পোষণ করতেন।

হযরত হুসাইন (রা) এর নাতি হযরত যায়েদ (রহ)-কে একদল লোক হযরত আবু বকর ও ওমর (রা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাঁদের জন্য দুআ করেন। সেই দলটি তখন যায়েদের (রহ) দুআকে প্রত্যাখ্যান করে বেড়িয়ে যায়। ইতিহাসে তারা রাফেজাহ বা রাফেজী নামে পরিচিত। ১২২ হিজরিতে হযরত যায়েদ (রহ) শহীদ হন।

এরপর থেকে বিভিন্ন ঘটনা পরিক্রমার মাধ্যমে ইরানের অগ্নিপূজক শাঊবিয়া গোষ্ঠী ও একজন ইহুদী মায়মূন আল কাদ্দাহ এর মাধ্যমে চূড়ান্ত রকমের বিকৃত আক্বিদায় তারা বিশ্বাসী হয়। তাদের মধ্যে যেসকল বিকৃতি, কুফরি ও বিদআত রয়েছে তা তারা ধীরে ধীরে মহীরুহে পরিণত করেছে।

বইটিতে শীয়াদের প্রথম যুগ থেকে নিয়ে বর্তমানে ইরানের শীয়া শাসন পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংক্ষেপে স্থান পেয়েছে। উপরে উল্লেখিত আমার ব্লগের লিংকে আমি চেষ্টা করেছি বইয়ের ইতিহাসকে অল্প কিছু প্যারাগ্রাফের মাধ্যমে উপস্থাপন করার।

যারা শীয়া সম্প্রদায়ের আক্বিদা এবং তাদের ইতিহাস। তাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারনা পেতে ইচ্ছুক। এই বইটি হতে পারে তাদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য।

বই সম্পর্কে কিছু তথ্য

নামঃ শীয়া মতবাদঃ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা
লেখকঃ ড. রাগেব সারজানী
অনুবাদকঃ মাওলানা ওমর ফারুক
প্রকাশনায়ঃ রাহনুমা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০২০
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৯
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৪০ টাকা

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। শীয়াদের মনগড়া বিশ্বাসের ফাঁদে যেন কোনো মুসলিম পা না দেয়। বাংলাদেশের ও দেশের বাইরে যারাই তাদের ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাসী হয়ে গেছেন আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় ইসলামে দাখিল করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ৩,৮১৫,৭২৮

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন