Post Updated at 7 Apr, 2023 – 11:57 AM
সিয়াম একজন মুমিনের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়। সিয়াম আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম। আমাদের পূর্বসূরিগণ সারা বছর অপেক্ষায় থাকতেন সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্য অর্জন করার জন্য। একজন মুসলমান হিসেবে সিয়ামের মাসয়ালাসমূহ জানা খুবই জরুরি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলোতে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু আমাদের অনেকেই মনে করেন, এতে সিয়াম ভেঙে যায়। এমন কয়েকটি কাজ :
- ভুলে পানাহার করা
- স্বপ্নদোষ হওয়া
- হিজামা করানো
- রক্ত বের করা
- চোখে সুরমা মাথায় তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা
- অনিচ্ছাকৃত বমি
- নিজ স্ত্রীকে চুমু দেয়া ইত্যাদি।
হাদীস ও আসারের (সাহাবীগণের বাণী ও আমল) আলোকে রোজার মাসআলা জানতে মাসিক আলকাউসার পত্রিকার এই লেখাটি পড়তে পারেন।
সিয়ামরত অবস্থায় উপরোক্ত কাজসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা নিচে তুলে দলিলসহ তুলে ধরা হলোঃ
ভুলে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় না
কেউ যদি ভুলে পানাহার করে ফেলে তবে এতে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। তবে স্মরণ আসামাত্রই সর্বপ্রকার আহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه؛ فإنما أطعمه الله وسقاه
সিয়াম পালনরত অবস্থায় যদি কেউ ভুলে পানাহার করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন। [বুখারি -১৮৩১, মুসলিম -১১৫৫]
স্বপ্নদোষ (Wet Dream) হলে রোজা ভঙ্গ হয় না
সিয়ামরত ব্যক্তির স্বপ্নদোষ (Wet Dream) হলে এতে তার সিয়ামের কোন সমস্যা হয় না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন –
ثلاث لا يفطرن الصائم الحجامة والقيء والاحتلام
তিনটি জিনিস সিয়াম ভঙ করে না- শিঙা লাগানো (হিজামা), বমি করা ও স্বপ্নদোষ হওয়া। [তিরমিযি-৭১৯]
হিজামা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না
সিয়ামরত থাকাকালীন হিজামা বা cupping করলে সিয়ামের কোন সমস্যা হয় না। উপরোক্ত হাদীসটি এর দলিল।
এর পাশাপাশি হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
احتجم وهو محرم واحتجم وهو صائم
অর্থাৎ – (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় হিজামা করিয়েছেন এবং তিনি সিয়ামরত অবস্থায়ও হিজামা করিয়েছেন। [বুখারি-১৮৩৬]
তবে হিজামার কারণে যদি সিয়ামপালনকারী ব্যক্তি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে তা মাকরুহ হবে। হযরত আনাস ইবনে মালিক রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনারা কি সিয়ামপালনকারীদের জন্য হিজামাকে মাকরুহ মনে করেন? তিনি উত্তরে বললেন, না, তবে তার দুর্বল হয়ে পড়ার আশংকা থাকলে ভিন্ন কথা। [বুখারী, ১৯৪০]
শরীর থেকে রক্ত বের করলে রোজা ভঙ্গ হয় না
রক্তপরীক্ষা কিংবা কাউকে রক্ত দান করার জন্যে ইচ্ছাকৃত শরীর থেকে রক্ত বের করা প্রয়োজন হতে পারে। হিজামাতেও ইচ্ছাকৃত রক্ত বের করা হয়। এতে যেহেতু রোজা ভাঙে না, তাই রক্তপরীক্ষা বা অন্য কোনো কারণে রক্ত বের করলেও রোজা ভাঙবে না। কোনো ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হলেও রোজা ভাঙবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এত পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরুহ হবে, যাতে রোজাদার দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। উপরোক্ত সহীহ বুখারীর ১৯৪০ নং হাদীসটিই এর দলিল।
চোখে সুরমা মাথায় তেল ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হয় না
চোখে সুরমা ব্যবহারে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে :
كَانَ يَكْتَحِلُ وَهُوَ صَائِمٌ
রোজা রেখে তিনি সুরমা ব্যবহার করতেন। [আবু দাউদ-২৩৭৮]
একইভাবে চোখে কোনো ওষুধ ব্যবহার করলেও রোজা ভাঙবে না। মাথায়-শরীরে তেল ব্যবহার করলেও রোজা ভাঙবে না।
অনিচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয় না
কেউ যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তবে তাতেও সিয়ামের কোন সমস্যা হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من ذرعه القيء وهو صائم فليس عليه القضاء ، ومن استقاء فعليه القضاء
অনিচ্ছাকৃত যে ব্যক্তি সিয়ামরত অবস্থায় বমি করবে, তাকে কাযা করতে হবে না। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক বমি করবে তাকে কাযা করতে হবে। [আবু দাউদ-২৩৮০ ,তিরমিযি -৭২০]
উপরে যে হাদীসে বলা হয়েছে, বমি সিয়ামের কোনো ক্ষতি করে না, সেখানেও অনিচ্ছাকৃত বমিই উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃত বমি যদি মুখ ভরেও হয়, তবুও রোজা ভাঙবে না। এমনকি ইচ্ছাকৃত বমিও যদি সামান্য হয়, মুখ ভরে না হয়, তবুও সিয়াম ভাঙবে না। হ্যাঁ, ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলে সিয়াম ভেঙে যাবে।
আর মুখ ভরে বমি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এত বেশি পরিমাণ বমি হওয়া, যা মুখে আটকে রাখা যায় না।
নিজ স্ত্রীকে চুমু দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না
উত্তেজনা ব্যতিরেকে নিজ স্ত্রীকে চুমু দেয়া জায়িজ। এতে সিয়ামের কোন সমস্যা হয় না।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন-
يقبل وهو صائم ويباشر وهو صائم ،وکان املککم لإربه
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়ামরত অবস্থায় চুমু খেতেন এবং সিয়ামরত অবস্থায় আলিঙ্গন করতেন। তবে নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল তোমাদের সকলের চেয়ে বেশি। [বুখারি-১৯২৭]
তবে যুবকদের এটা থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। কেননা হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত-
أن رجلا سأل النبي ﷺ عن المباشرة للصائم فرخص له وأتاه آخر فسأله فنهاه فإذا الذي رخص له شيخ والذي نهاه شاب
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিয়ামরত অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বনের ব্যপারে প্রশ্ন করলে তিনি অনুমতি দেন। অপর একজন এরূপ প্রশ্ন করলে তাকে নিষেধ করেন। তখন আমরা দেখলাম যে, যাকে অনুমতি দিলেন তিনি ছিলেন বৃদ্ধ আর যাকে নিষেধ করেন তিনি ছিলেন যুবক। [আবু দাউদ-২৩৮৭]
উম্মাহর অনেক মুহাক্কিক আলেম বলেন, মূলত এখানে বয়সের চেয়ে কারো উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাব্যতা দেখে হুকুম নির্ধারিত হবে। সাধারণত বৃদ্ধ লোকের উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে আর যুবককে নিষেধ করা হয়েছে ; যেহেতু যুবকদের শারীরিক উত্তেজনা প্রবল থাকে। তবে কেউ যদি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে আত্মবিশ্বাস রাখে তবে তার জন্য জায়িজ।
Leave a Reply