Press ESC to close

নফল নামাযের ফযিলত

Post Updated at 26 Aug, 2024 – 7:55 PM

একজন মুমিনের উপর দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে—ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বাইরেও আরো কিছু নামায আছে। যেমন, তাহাজ্জুদের নামায, ইশরাক নামায, আওয়াবীন নামায, তাহিয়াতুল মাসজিদ, তাহিয়াতুল ওজু, সালাতুত তাসবীহ, সালাতুত হাজাত ইত্যাদি। এগুলো নফল নামায। আল্লাহ তাআলার বিশেষ নৈকট্য লাভের জন্য নফল নামায অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কিয়ামতের দিন মুক্তির জন্যও তা সহায়ক হবে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلاَتُهُ ، فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ ، فَإِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ ، قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ : انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ ، ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذَلِكَ.

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামায ঠিক থাকে, তাহলে সে সফল এবং কামিয়াব। আর যদি তা ঠিক না থাকে তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত এবং অকৃতকার্য। যদি তার ফরয ইবাদতে ঘাটতি থাকে, আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদের) বলবেন, দেখো আমার বান্দার কোনো নফল ইবাদত আছে কিনা, যা দ্বারা তার ফরযের ঘাটতি পূর্ণ হবে। তারপর বান্দার সমস্ত আমলের ক্ষেত্রে অনুরুপ হিসাব হবে।

(তিরমিযী হাদীস নং ৪১৩, নাসায়ী হাদীস নং ৪৬৬)

আজকে আমরা কয়েকটি নফল নামায সম্পর্কে জানব।

তাহাজ্জুদ নামায

আল্লাহর সান্নিধ্য হাসিল করার জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ অত্যন্ত জরুরি। কুরআন কারীমে শুধুমাত্র একটি নামাযের নামসহ উল্লেখ আছে। সেটা হল তাহাজ্জুদ নামায। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ مِنَ الَّیْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ ۖۗ  عَسٰۤی اَنْ یَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا ۝۷۹

আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদ’-এ পৌঁছাবেন।

(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৭৯)

এখানে অতিরিক্ত ইবাদত বলে উদ্দেশ্য হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি এ নামাযও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আবশ্যক ছিল। আমাদের জন্য যদিও আবশ্যক না, তবে যে মুমিন আল্লাহ তাআলার খুব কাছে যেতে চায়, তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহাজ্জুদের নামাযের ফযিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হাদীসও রয়েছে। যেমন,  হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ

ফরয নামাযের পর শ্রেষ্ঠ নামায হল রাতের নামায (তাহাজ্জুদ নামায)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩)

 

ইশরাক নামায

সকালবেলা সূর্য উদিত হওয়ার পর যে নফল নামায পড়া হয় তাই ইশরাক নামায। মুসলিম শরীফের এক হাদীস থেকে এই নামাযের ফযিলত ও গুরুত্ব বোঝা যায়। হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى

তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি সাদ্‌কা রয়েছে। প্রতিটি সুবহানাল্লাহ সাদ্‌কা, প্রতিটি আলহামদুলিল্লাহ সাদ্‌কা, প্রতিটি লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাদ্‌কা, প্রতিটি আল্লাহু আকবার সাদ্‌কা, আমর বিল মা’রুফ (সৎকাজের আদেশ) সাদ্‌কা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সাদ্‌কা। আর সকাল বেলা (ইশরাকের) দু রাকআত নামায আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০)

ইশরাক নামাযের অনেক ফযিলত রয়েছে।  একটি হাদীস হযরত আনাস রা . থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ

যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামায পড়ল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে বসে তাঁর যিকির করল, তারপর দুই রাকাত নামায পড়ল, সে পরিপূর্ণ একটি হজ এবং একটি ওমরাহ এর সওয়াব পাবে।

(তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬)

আমরা কতজন আছি যারা প্রায় ওমরাহ পালন করতে পারি, আর কয়জনইবা প্রতিবছর হজ করতে পারি। অথচ আমরা যদি প্রতিদিন ফজরের নামায পড়ে সেখানে বসেই কিছুক্ষণ ইবাদত করি, এরপর সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত নামায পড়তে পারি তাহলে একটি কবুল হজ ও ওমরাহর সওয়াব পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলার কাছে যে কোনো কিছুর অভাব নেই!

আমরা অনেক সময় নফল নামায বা মাসনুন ইবাদতগুলো অবহেলা করি এই বলে—এগুলো তো নফল! এগুলো না করলে গুনাহ হবে না! আমাদের এ চিন্তা আমাদেরকে কত বরকত থেকে মাহরুম করছে, কত সওয়াব থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি! কত আমাল থেকে বিরত থাকছি যা করলে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন আমার জন্য সহজ হয়ে যেত! এ জন্য ছোট ছোট আমলও আলসেমি করে কিংবা ছোট মনে করে ছেড়ে না দিই।

আমরা যদি সময়ের ভগ্নাংশগুলো হেফাজত করি, তাহলে বড় বড় সময় এমনই হেফাজত হয়ে যাবে। তখন সময়ে বরকত পাওয়া যাবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নফলের প্রতি যত্নবান হবে এবং ইহতিমাম করবে, তার ফরজ নামাজ কাযা হতে পারে না।

এ জন্য সবসময় নিজের মধ্যে এ চিন্তা জাগ্রত রাখা উচিত, ফরয নামাযের ব্যাপারে কোনো অবহেলা করা নয় এবং সাধ্যমত বেশি করে নফল নামায পড়তে হবে। সেটা বাস্তাবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমীন!!

[লেখাটি প্রস্তুত করেছেন : মাওলানা সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক, মাদরাসাতুল হিকমাহ ঢাকা]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ১,৮৭২,২৫০

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন