
Post Updated at 7 Aug, 2025 – 12:47 PM
ঢাকার একটি লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত ‘বার চাঁদের ফযীলত’ নামক পুস্তকে দরূদের ফযীলত বর্ণনা করতে নিচের কিসসাটির অবতারণা করা হয়েছে-
দরূদ শ্রবণকারী মাছের গল্প
“একবার এক সওদাগরের একখানি বাণিজ্য-তরী নীল নদী দিয়া যাইতেছিল। সেই জাহাজে এরূপ একজন লোক ছিল, যে প্রত্যহ হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে দরূদ পাঠ করিত। একদা সে দরূদ পাঠ করিতেছিল; এমন সময় দেখিতে পাইল, জাহাজের গা ঘেঁষিয়া নদীর একটি মাছ কান পাতিয়া তাহার দরূদ পাঠ শুনিতেছে। যখন তাহার দরূদ পাঠ শেষ হইল তখনই মাছটি পানিতে ডুবিয়া গেল।
ঘটনাক্রমে সেই মাছটি এক জেলের জালে ধরা পড়িল। অতঃপর জেলে মাছটিকে বিক্রয় করার জন্য বাজারে উপস্থিত করিল। সেদিন হযরত ওমর রা. বা মতান্তরে আবু বকর সিদ্দীক রা. এই উদ্দেশ্যে বাজারে আসিয়াছিলেন যে, একটি বড় মাছ পাওয়া গেলে উহা কিনিয়া আনিবেন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করিয়া উহা খাওয়াইবেন। বাজারে এই মাছটিকে দেখিয়া তিনি খুব খুশি হইলেন এবং ইহা ক্রয় করিয়া নিয়া স্ত্রীকে বলিলেন, এই মাছটিকে খুব ভালোভাবে রান্না করিও; আজ ইনশাআল্লাহ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করিব।
বিবি সাহেবা মাছটির আঁশ ছাড়াইয়া ভালোভাবে ধুইয়া পরিষ্কার করিয়া নানারকম মসলা মাখিয়া উহাকে রান্না করিবার জন্য চুলায় তুলিয়া হাঁড়ির নিচে আগুন দিতে লাগিলেন। কিন্তু আগুন জ্বলিল না। বহু চেষ্টা করিয়া কোনমতে আগুন ধরাইলেই আবার উহা নিভিয়া যাইত। এভাবে বহুক্ষণ যাবৎ চেষ্টা করিয়াও আগুনকে উত্তপ্ত করিতে না পারিয়া স্বামীকে ব্যাপারটি অবগত করিলেন। তিনিও খুব চেষ্টা করিলেন। কিন্তু কোনোই ফল হইল না। অবশেষে মজবুর হইয়া তাঁহারা হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এই ঘটনা বিবৃত করিলেন। তিনি মাছের অবস্থা অবগত হইয়া বলিলেন, দুনিয়ার আগুন তো দূরের কথা দোযখের আগুনও ইহাকে জ্বালাইতে পারিবে না। কারণ, কোনো ব্যক্তি যখন দরূদ পাঠ করিতেছিল তখন এই মাছটি মনোযোগ সহকারে উহা শুনিতেছিল। উহার বরকতেই তোমরা ইহাকে রান্না করার জন্য আগুন জ্বালাইতে পার নাই।”
মাছের দরূদ শ্রবণ সম্পর্কিত গল্পটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন
এটি একটি বানোয়াট কিসসা। কিসসাটির মাঝেই তা বানোয়াট হওয়ার বিভিন্ন আলামত বিদ্যমান। মাছটি দরূদ শুনতে পেল নীলনদে আর ওমরা রা. বা আবু বকর রা. মদীনার বাজারে তা কিনতে গেলেন! কিসসাটি কোন যামানার ঘটনা হিসাবে দাবি করা হচ্ছে তাও মাথায় রাখুন! আবার সাহাবী মাছ কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে যাচ্ছেন; মদীনার বাজার কি এমন ছিল যে, সচারচর সেখানে মাছ পাওয়া যেত? এছাড়াও আরো অসামঞ্জস্য কথাবার্তা আছে ঘটনাটিতে।
মূলত এটি শিয়াদের বানানো একটি কিসসা। শিয়াদের মাধ্যমে পাক-ভারত উপমহাদেশে এজাতীয় অনেক বানোয়াট কথা প্রসিদ্ধ হয়েছে।
শিয়াদের বেশ কিছু ওয়েবসাইটে এই কিসসাটিই একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে। সেখানে ওমরা রা. বা আবু বকর রা.-এর কথা নেই। তেমনি নবীজীকে দাওয়াত করার বিষয়টিও নেই। সেখানে আছে, কোনো এক ব্যক্তি একটি মাছ কেনে; রান্না করার জন্য প্রস্তুতও করে; কিন্তু দেখে যে, আগুনে তার কিছুই হচ্ছে না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিষয়টি জানালে তিনি মাছটিকে জিজ্ঞাসা করেন-কেন এমনটি হচ্ছে। তখন মাছটি বলে, এক ব্যক্তিকে ‘আপনার ও আপনার আহলে বাইতের উপর’ দরূদ পড়তে শুনে সে খুব প্রভাবিত ও আনন্দিত হয় এবং সেও ‘নবীজী ও তাঁর আহলে বাইতের উপর’ বেশি বেশি দরূদ পড়তে থাকে এবং একটি গায়েবী আওয়ায পায়- ‘হে মাছ! আল্লাহ তোমার দেহের জন্য আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন। আগুন তোমাকে পোড়াতে পারবে না।’ একারণেই এমনটি ঘটেছে।
যাইহোক, এটি একটি জাল ও বানোয়াট কিসসা; যা শিয়াদের কর্তৃক জালকৃত।
তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ, “বার চান্দের ফযীলত”, “মোকসেদুল মোমিন” ইত্যাদি বানোয়াট বই-পুস্তক পড়া ও কেনা থেকে বিরত থাকুন। কোনো বই কেনা ও পড়ার আগে আলেমদের থেকে ঐ বইয়ের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মিথ্যা বানোয়াট কিসসা কাহিনী থেকে নিজেদের ঈমান-আমলকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
রেফারেন্সঃ
মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি ২০২১
https://www.alkawsar.com/bn/article/2751/
Leave a Reply