Post Updated at 11 Dec, 2024 – 3:53 PM
গত দুই পর্বে কুরআনে বর্ণিত সফল মুমিনের গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে মোট এগারটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা উঠে এসেছে। এছাড়াও কুরআনে সফল মুমিনের আরো কিছু গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। এ পর্বে বাকি সেই গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করব।
১. বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ করা
সফল মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ গুণ- সর্বদা আল্লাহ যিকির করা, তার স্মরণে হৃদয়কে উজ্জীবিত রাখা। কখনোই তাঁর যিকির থেকে উদাসীন না থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হও।’ [সূরা আনফাল, আয়াত : ৪৫, সূরা জুমুআহ, আয়াত : ১০]
আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। একজন মুমিন সর্বদাই তার স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। কারণ স্রষ্টার স্মরণ থেকে উদাসীনতাই সৃষ্টিকে বিপথগামী করে। তাই চলাফেরা, ওঠা-বসা, নিদ্রা-জাগরণ সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকাই বুদ্ধিমান ও সফল মুমিনের বিশেষ গুণ। প্রকৃত বুদ্ধিমানের গুণাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১]
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিনয় ও ভীতি সহকারে যিকির করতে হবে। হৃদয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব ধারণ করে বিনীত ও ভীত হয়ে তার যিকির ও স্মরণে মগ্ন থাকতে হবে। আল্লাহ কুরআনে তাঁর রাসূলকে আদেশ করে বলেন-
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
এবং সকালে ও সন্ধ্যায় নিজ প্রতিপালককে স্মরণ করো বিনয় ও ভীতির সাথে, অনুচ্চস্বরে। আর যারা গাফলতিতে নিমজ্জিত তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। [সূরা আ‘রাফ, আয়াত : ২০৫]
বান্দা যখন হৃদয়ে পূর্ণ বিনয়-কাতরতা ও ভীতি নিয়ে আল্লাহর যিকির করবে তখন এই যিকির তার প্রশান্তির কারণ হবে। এই যিকিরের মাধ্যমে সে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করবে। তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র তৃপ্তি ও প্রাপ্তিতে পূর্ণ হবে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘জেনে রেখো, কেবল আল্লাহর যিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ [সূরা রা‘দ, আয়াত : ২৮]
আল্লাহ তাআলার যিকির বা স্মরণ করার অর্থ অনেক ব্যাপক। নামায, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তাসবীহ-তাকবীরসহ যিকিরের অন্য সকল প্রকারই এর মধ্যে শামিল। আর যিকির তখনই স্বার্থক হবে যখন বান্দার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সকল বিষয়ে এই যিকিরের প্রভাব পড়বে।
অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করা যেমন মুমিনের বৈশিষ্ট্য তেমনি আল্লাহর যিকির থেকে উদাসীন থাকা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। কারণ মানুষের কাজ মূলত তার হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি। যে প্রকৃত মুমিন, যার অন্তর আল্লাহর বিশ্বাসে পূর্ণ সে আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে আর যে মুনাফিক, যার ঈমান কপটতা মিশ্রিত সে আল্লাহকে সামান্য স্মরণ করে, তাও লোক দেখানোর জন্য। যেমন আল্লাহ বলেন-
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلًا
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, অথচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছেন। তারা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখায় এবং আল্লাহকে খুব সামান্যই স্মরণ করে।’ [সূরা নিসা, আয়াত : ১৪২]
২. আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ করা
আল্লাহর তাআলার নেয়ামতরাজি স্মরণে রাখাও সফল মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাঁর নেয়ামত স্মরণ করার আদেশ দিয়ে বলেন:
فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘অতএব তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ [সূরা আরাফ, আয়াত : ৬৯]
আয়াতে নেয়ামতের স্মরণ করা বলতে বোঝানো হচ্ছে- বান্দার উচিত তার ওপর আল্লাহর যাবতীয় নেয়ামতের কথা স্মরণে রেখে তার আজ্ঞাবহ হওয়া। তাঁর বিধিবিধানের সম্পূর্ণ অনুগত হয়ে তাঁর নেয়ামতের পূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় করা। তবেই বান্দা সেই পুরস্কার লাভ করে সফল হবে যা তার রব প্রস্তুত রেখেছেন তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্য।
আল্লাহর এই আদেশ পূর্ববর্তী উম্মতের জন্যও ছিল। তিনি তাদেরকেও তাঁর নেয়ামত স্মরণে রাখার আদেশ করেছেন। বনী ইসরাঈলকে আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ
‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার সেই নেয়ামত স্মরণ কর যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি।’ [সূরা বাকারা, আয়াত : ৪০]
বিভিন্ন নেয়ামতের উল্লেখসহ এই আদেশ বিবৃত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে-
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَآتَاكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ
‘এবং (স্মরণ করো!) যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নবী প্রেরণ করেছিলেন, তোমাদেরকে রাজক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন এবং বিশ্বজগতের কাউকে যা দেননি তোমাদের তা দান করেছিলেন।’ [সূরা মায়িদা, আয়াত : ২০]
যদি কেউ আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ থেকে উদাসীন থাকে এবং সেই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করে, আল্লাহ তাআলা তার থেকে সেই নেয়ামত ছিনিয়ে নেন এবং তাকে শাস্তির সম্মুখীন করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَن يُبَدِّلْ نِعْمَةَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
‘যে ব্যক্তি তার নিকট আল্লাহর নেয়ামত এসে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে ফেলে, (তার মনে রাখা উচিত যে,) আল্লাহ শাস্তি বড় কঠিন।’ [সূরা বাকারা, আয়াত : ২১১]
নেয়ামতের অস্বীকারকারীদের সংখ্যা যদি বেশিও হয়, তারা যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো সম্প্রদায় হয় তবুও আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। বরং সকলেকেই একই সাথে শাস্তির সম্মুখীন করেন। যেমন করেছেন ইতিপূর্বে ইউনুস আ. এর সম্প্রদায়ের সঙ্গে। সেই ঘটনার বর্ণনা কুরআনে এভাবে এসেছে-
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
‘আল্লাহ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যা ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ। চতুর্দিক থেকে তার জীবিকা আসত পর্যাপ্ত পরিমাণে। অতঃপর তা(-র অধিবাসীরা) আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির পোশাক আস্বাদন করালেন।’ [সূরা নাহল, আয়াত : ১১২]
আল্লাহর নেয়ামত আদায় করা যেমন মুমিনের গুণ তেমনি আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞ হওয়া কাফেরের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা কাফেরের কার্যকলাপের বর্ণনা দিয়ে বলেন:
يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ
‘তারা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ চেনে, তবুও তা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।’ [সূরা নাহল: ৮৩]
৩. গুনাহ হয়ে গেলে তওবা করা
মুমিন যদি কখনও সফলতার পথ থেকে ছিটকে পড়ে, মুমিন-গুণাবলির বিপরীত কিছু করে বসে, আল্লাহর নাফরমানিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার করণীয় কী? সফলতার সেই পথ কি তার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল? না, তার জন্য তখন সফলতা পুনরুদ্ধারের একটি দুয়ার খোলা আছে, তওবার দুয়ার। তাই সে মুহূর্তে তার কর্তব্য হবে তওবা করে রবের পথে ফিরে আসা, গুনাহের ওপর অটল না থাকা। তাই তওবা সফল মুমিনের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে মুমিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৩১]
মনে রাখতে হবে, এ তওবা হতে হবে উত্তমরুপে। তওবার যে শর্তসমূহ রয়েছে তা পূর্ণরুপে আদায় করে তওবা করতে হবে। নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দিল থেকে একনিষ্ঠভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে ঐ কাজ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তবেই আল্লাহ তাকে আবৃত করে নেবেন রহমের চাদরে। সে আবার পেয়ে যাবে সফলতার হারানো সেই পথ।
ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ
হে মুমিনগণ, আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর। আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সমূহ পাপ মোচন করে দেবেন। [সূরা তাহরীম, আয়াত : ৮]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ
‘আল্লাহ অবশ্যই সেই সব লোকের তওবা কবুল করেন যারা অজ্ঞতাবশত কোনো গুনাহ করে ফেলে, তারপর জলদি তওবা করে নেয়।’ [সূরা নিসা, আয়াত : ১৭]
সুতরাং কোনো গুনাহ হয়ে গেলে খুব দ্রুত খাঁটি মনে আল্লাহর কাছে তওবা করাই সফল মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
৪. আত্মার পরিশুদ্ধি
আত্মার পরিশুদ্ধিও সফল মুমিনের অন্যতম গুণ। কারণ আত্মা হচ্ছে মানুষের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মূল। আত্মার সংশোধন মানে পুরো মানব সত্তার সংশোধন। আর যদি আত্মা পরিশুদ্ধ না হয় তাহলে বাহ্যিক কিছু দিন নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও একসময় আত্মাই দেহের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নিজের অধীনে নিয়ে নিবে। আল্লাহ বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
‘সেই সফল যে নিজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আর ব্যর্থ সে যে তা ধ্বংস করে।’ [সূরা শামস, আয়াত : ৯-১০]
আত্মার পরিশুদ্ধি মানে- অন্তরে যে ভালো কাজের আগ্রহ ও প্রেরণা জাগে তাকে আরও উজ্জীবিত করে সে অনুযায়ী কাজ করা আর যেসব মন্দ চাহিদা দেখা দেয় তা দমন করে চলা। এভাবে নিরবচ্ছিন্ন সাধনা চালাতে থাকলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে। সে আত্মা ‘আননাফসুল মুতমাইন্না’ বা প্রশান্ত চিত্তে পরিণত হয়।
লোভ ও কার্পণ্য থেকে আত্মাকে পবিত্র রাখা আত্মার পরিশুদ্ধির অন্যতম অংশ, যেমনটি এসেছে অন্য আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘যারা স্বভাবগত কার্পণ্য থেকে মুক্তি লাভ করে, তারাই তো সফল।’ [সূরা হাশর, আয়াত : ৯]
সুতরাং সফল তারাই যারা লোভ-লালসা, কার্পণ্য ত্যাগ করে অন্যকে প্রাধান্য দিতে পারে; অন্যের ভালো চাইতে পারে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
৫. রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ ও নিঃশর্ত আনুগত্য
রাসূলের অনুসরণ ও আনুগত্য এমন এক বিষয় যা পূর্বে উল্লেখিত সকল বিষয়কে ধারণ করে। বরং ধারণ করে পুরো শরিয়তকে। সত্যিকার অর্থে পরিপূর্ণ সফল মুমিন হতে হলে রাসূলের অনুসরণ ও আনুগত্য করতেই হবে, রাসূলের দেখিয়ে দেওয়া পথ ও পদ্ধতিতে শরিয়তের সকল বিষয়ের অনুগত হতে হবে।
সূরা আ‘রাফে আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘সুতরাং যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁকে সম্মান করবে, তাঁর সাহায্য করবে এবং তাঁর সঙ্গে যে নুর অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করবে তারাই সফল।’ [সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭]
আয়াতে বলা হচ্ছে, রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি সেই ঈমানের দাবিগুলো যারা যথাযথভাবে পূরণ করবে অর্থাৎ রাসূলকে সম্মান করবে, তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর প্রতি ওহীর যে নূর অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করবে, তারাই সফল। এ আয়াতে পুরো শরিয়তকেই পরিপূর্ণভাবে মানার কথা বলা হয়েছে। কারণ শরিয়তের পুরোটাই রাসূলের প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিল হয়েছে।
আনুগত্যের বিষয়টি এসেছে অন্য একটি আয়াতেও। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রাসূল তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেন, তখন তাদের কথা কেবল এটাই হয় যে, তারা বলে আমরা (হুকুম) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আর তারাই সফল।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৫১]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর আনুগত্য রাসূলের আনুগত্যের পূর্বশর্ত, যা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে পরের আয়াতেই, যেখানে বলা হয়েছে-
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করে চলে, তারাই সফল।’ [সূরা নূর, আয়াত : ৫২]
আরও এসেছে-
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে মহাসাফল্য অর্জন করবে।’ [সূরা আহযাব, আয়াত : ৭১]
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের বিষয়টি আল্লাহ তাআলা চিত্রিত করেছেন চমৎকার এক উদাহরণের মাধ্যমে। ঘোষনা দিয়েছেন- তাদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির। তাদেরকে অভিহিত করেছেন আল্লাহর দল হিসেবে। তিনি বলেছেন:
لا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘যে সব লোক আল্লাহ ও আখেরাত দিবসে ঈমান রাখে, তাদেরকে তুমি এমন পাবে না যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখছে। হোক না তারা তাদের পিতা বা তাদের পুত্র বা তাদের ভাই কিংবা তাদের স্বগোত্রীয়। তারাই এমন, আল্লাহ যাদের অন্তরে ঈমানকে খোদাই করে দিয়েছেন এবং নিজ রূহ দ্বারা তাদের সাহায্য করেছেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর দল। স্মরণ রেখো, আল্লাহর দলই সফল হয়।’ [সূরা মুজাদালাহ, আয়াত : ২২]
আরেক আয়াতে যেন আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত সকল গুণের কথা একসাথে আলোচনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ ۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘সুতরাং তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো এবং শোনো ও মানো। আর (আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী) অর্থ ব্যয় করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম। যারা তাদের অন্তরের লোভলালসা থেকে মুক্তি লাভ করেছে তারাই সফল।’ [সূরা তাগাবুন: ১৬]
আল্লাহ তাআলার খাঁটি বান্দা হতে হলে সফলতার এসব মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতেই হবে, এর বিকল্প নেই।
Leave a Reply