Press ESC to close

হযরত ওয়ায়েস করনী (রহ) এর দাঁত ভাঙ্গার মিথ্যা গল্প

Post Updated at 7 Aug, 2025 – 11:49 AM

হযরত ওয়ায়েস করনী (রহ) একজন তাবেয়ী ছিলেন। ৩৭ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমসাময়িক হওয়ার পরেও তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করতে পারেন নি। তাই তিনি সাহাবী নন। তার বৃদ্ধা মায়ের সেবাযত্ন করার জন্য তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে সাক্ষাত করতে আসতে পারেন নি। কিন্তু তিনি সাহাবীদের সাক্ষাত পেয়েছেন। তাই তিনি একজন তাবেয়ী ছিলেন।

আমাদের সমাজে হযরত ওয়ায়েস করনী (রহ) সম্পর্কে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। এমন অনেক কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচার হয়েছে যেগুলোর নির্ভরযোগ্য কোনো ভিত্তি নেই।

সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গল্পটি হচ্ছে এরকমঃ

ওহুদ যুদ্ধে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি দাঁত ভেঙে গেল। তখন ওয়ায়েস করনী বিষয়টি জানতে পারলেন এবং যারপরনাই ব্যাথিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। এ ঘটনা শুনে তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি ভাবলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত মোবারক যখন শহীদ হয়েছে তো আমার এ দাঁতের কী অর্থ! তিনি নিজের একটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। পরক্ষণে চিন্তা করলেন, আমি যে দাঁত ভেঙেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হয়ত এ দাঁত ভাঙেনি, অন্য দাঁত ভেঙেছে। তাই ভেবে তিনি নিজের আরেকটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। এভাবে তিনি নিজের সবগুলো দাঁত ভেঙে ফেললেন।

নাউযুবিল্লাহ! উপরের বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

ওয়েস করনী (রহ) সম্পর্কে অন্য আরেকটি মিথ্যা কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুব্বা মোবারক ওয়েস করণীকে (রহ) দেয়ার জন্য তিনি (সা) বলে গিয়েছিলেন। তাই তাকে সেই জুব্বা প্রদান করা হয়েছে। এটিও মিথ্যা। এর কোনো সঠিক ভিত্তি নাই।

সুস্থ মস্তিষ্কে নিজের অঙ্গহানী করা ভয়ংকর এক কবিরা গুনাহ। কারো প্রতি মহব্বতে নিজের হাত কাটা, দাঁত ভাঙ্গা বা এ জাতীয় কাজ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসার উদাহরণ হচ্ছে ঐ সাহাবী, যিনি ওহুদের যুদ্ধে অসুস্থতার জন্য অংশ নিতে পারেন নি। কিন্তু যখন খবর আসল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত শহীদ হয়ে গিয়েছেন, তিনি সেই অবস্থায় তলোয়ার নিয়ে ওহুদের ময়দানের দিকে ছুটে চললেন যুদ্ধে অংশ নিতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শহীদ হওয়ার সংবাদে তাঁর প্রতি ভালবাসার কারণে নিজের তলোয়ার নিজের বুকে বিদ্ধ করে তিনি আত্মহত্যা করেন নি। একই ভাবে ওয়ায়েস করনী (রহ), তিনিও এমন ভয়ংকর কবিরা গুনাহ করেন নি। এ সংক্রান্ত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ইতিহাসের কোনো গ্রন্থে নেই।

ওয়ায়েস করনী (রহ) সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ইয়ামান থেকে ওয়ায়েস নামে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। ইয়ামানে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তার রোগ ভাল করে দেন, কিন্তু তার শরীরের একটি স্থানে এক দিনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান সাদাই থেকে যায়। তোমাদের কেউ যদি তার সাক্ষাৎ পায় সে যেন তাকে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে বলে।

 

  • সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২

ওয়ায়েস করনীর সাথে সাহাবীদের সাক্ষাতের ঘটনাও হাদীস শরীফে এসেছে। কিন্তু কোথাও এমন কিচ্ছার কথা নেই। সহীহ মুসলিমে এসেছে, ওমর রা.-এর সাথে ওয়ায়েস করনীর সাক্ষাত হলে তাকে সনাক্ত করার জন্য তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলে দেয়া সব আলামত জিজ্ঞাসা করেন। এ বর্ণনায় আছে ওমর রা. নবীজীর কথা অনুযায়ী তাকে নিজের জন্য ইস্তিগফার করতে বলেন, তিনি ওমর রা.-এর জন্য ইস্তিগফার করেন। পরবর্তী বছর হজ্বের মৌসুমে ওয়ায়েস করনী যে এলাকায় বসবাস করছিলেন সেখান থেকে এক ব্যক্তি এলে ওমর রা. তার (ওয়ায়েস করনীর) খোঁজ খবর নেন। (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২)

আল্লাহ আমাদেরকে হাদীসের নামে জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবীগণ (রাঃ), তাবেয়ীগণ (রহ) ও সকল ওলি-বুজুর্গদের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা থেকে আমাদেরকে আল্লাহ রক্ষা করুন। আমীন।

রেফারেন্সঃ
১। মাসিক আলকাউসারঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/1189/
২। মাসিক আলকাউসারঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/1341/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ৩,৮১৮,৬৫৫

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন