Post Updated at 12 Mar, 2023 – 5:59 AM
ফরজ-ওয়াজিব নামাজের পর যেসব নফল নামাজের ফজিলত নিয়ে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেসবের অন্যতম সালাতুদ দুহা। নিয়মিত সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন আমাদের উচিত এ সালাত আদায় করা। তাহলে আস্তে আস্তে এটি সারা মাসের ইবাদতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।
সালাতুদ দুহা আমাদের কাছে ইশরাক ও চাশতের নামাজ বলে পরিচিত। হাদীস শরীফে এই সালাতকে “সালাতুদ দুহা” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো হাদীসে অবশ্য ইশরাক শব্দটিও এসেছে। সালাতুদ দুহা সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের নিষিদ্ধ সময়ের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। এই সময়ের মধ্যে যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে আলেমগণ ইশরাক বা চাশত নামে অভিহিত করেছেন। অবশ্য আওয়াবিন শব্দটিও হাদীসে এসেছে। এ সংশ্লিষ্ট হাদীসটি এই পোস্টের শেষে পাওয়া যাবে।
সালাতুদ দুহা বা চাশত ও ইশরাকের নামাজ কত রাকাত?
সালাতুত দুহা সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়ার ব্যাপারে হাদীস পাওয়া যায়। এছাড়াও হাদীসের আলোকে এর চেয়ে বেশি পড়ার ব্যাপারেও অনুমোদন রয়েছে। যে যার সাধ্যমত ২ রাকাত থেকে উপরের দিকে যত বেশি পারা যায় এ সালাত আদায় করতে পারেন।
চাশত ও ইশরাকের নামাজের নিয়ম
এটি অন্যান্য যে কোনো নফল নামাজের মতই ২ রাকাত করে পড়া উত্তম। এই সালাতের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সূরা-ক্বিরাত নাই। সূরা ফাতিহার সাথে যে কোনো সূরা দিয়েই এই নামাজ পড়া যাবে। এ সালাতের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। ফজরের দুই রাকাত সুন্নত বা ফরজ নামাজ যেভাবে আদায় করা হয় সেভাবেই এই সালাত আদায় করতে হয়। দুই রাকাত করে পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। কোনো সালাতের জন্যেই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া জরুরি নয়। আপনি সালাতুদ দুহার জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়েছেন, এটা আপনার মনে থাকাই নিয়ত। সালাতুদ দুহা-সহ কোনো সালাতেই মুখে উচ্চারণ করে আরবি বা বাংলায় নিয়তের কিছু বাক্য পড়া জরুরি নয়।
সালাতুদ দুহা, চাশত ও ইশরাক নামাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?
মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ সালাতুল ইশরাক ও সালাতুত দুহা বা চাশতের নামাজের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং দুটিকে পৃথক পৃথক নামাজ বলেছেন। কোনো কোনো হাদীস থেকেও এর সপক্ষে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জামে তিরমিযীর ৫৯৮ নং হাদীসটির কথা বলা যেতে পারে। যারা দুটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামাজ বলেন, তাদের মতে, ইশরাকের নামাজ পড়া হয় সূর্যোদয়ের নিষিদ্ধ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, আর সালাতুত দুহা পড়া হয় দিনের এক চতুর্থাংশ অতিক্রান্ত হওয়ার পর। দ্বিপ্রহরের নিষিদ্ধ সময়ের পূর্ব পর্যন্ত এ নামাজের সময় থাকে। অবশ্য আমাদের অ্যাপে প্রথম মতটির ভিত্তিতেই সময় নির্দেশ করা হয়েছে।
সালাতুদ দুহা বা ইশরাক-চাশতের নামাজের গুরুত্বের উপর অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। নিচে সালাতুদ দুহার ফজিলতের ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হলো।
সালাতুদ দুহা বা চাশত-ইশরাকের নামাজ – হাদীস ১
বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেতে শুনেছি:
মানুষের শরীরে তিনশ ষাটটি গ্রন্থি রয়েছে। তার প্রতিটি জোড়ার জন্য সদাকা করা উচিৎ। লোকজন বলল, কেউ কি এতো সদাকা করতে সক্ষম, হে আল্লাহর নাবী! তিনি বললেনঃ তুমি মসজিদের (মেজেতে থাকা) শ্লেষ্মা পুতে দিবে (অর্থাৎ মসজিদের নোংরা পরিষ্কার করবে) এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলবে। তুমি যদি তা নাও পার তাহলে দুই রাক’আত সালাতুদ দুহা আদায় করবে, এতেই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।
(আবু দাউদ ৫২৪৪)
সালাতুদ দুহা বা চাশত-ইশরাকের নামাজ – হাদীস ২
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
প্রতিদিন সকালে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গিঁটের উপর সদাকা ওয়াজিব হয়। আর প্রতিটি তাসবীহ্ অর্থাৎ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা একটি সদাকা। প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ ‘আলহম্দুলিল্লা-হ’ বলা একটি সদাকা। প্রতিবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি সদাকা। প্রতিটি ‘আল্লাহু আকবর’ একটি সদাকা। আমর বিল মা’রুফ অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ একটি সদাকা। ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখাও একটি সদাকা। তবে দুই রাকাত সালাতুদ দুহা যদি সে আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলোর সমান হতে পারে।
(সহীহ মুসলিম ৭২০)
সালাতুদ দুহা বা চাশত-ইশরাকের নামাজ – হাদীস ৩
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
আমার বন্ধু [অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আমাকে তিনটি কাজ করতে উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো হ’ল – প্রতি মাসে তিনটি করে সওম (রোযা) পালন করা (হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ), দুই রাকাত সালাতুদ দুহা আদায় করা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিত্র সলাত আদায় করা।
(সহীহ মুসলিম ৭২১)
সালাতুদ দুহা বা চাশত-ইশরাকের নামাজ – হাদীস ৪
মু’আযাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতুদ দুহা কয় রাক‘আত আদায় করতেন? জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি ‘দুহা’ বা চাশতের সলাত সাধারণতঃ চার রাক‘আত আদায় করতেন এবং(কখনো) ইচ্ছামত আরো বেশী আদায় করতেন।
(সহীহ মুসলিম ৭১৯)
সালাতুদ দুহা বা চাশত-ইশরাকের নামাজ – হাদীস ৫
যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবাবাসীদের কাছে গেলেন। সে সময় তারা নামাজ আদায় করছিলেন। এ দেখে তিনি বললেনঃ ‘সলাতুল আও্ওয়াবীন’ এর উত্তম সময় হ’ল যখন সূর্যতাপে বালু গরম হাওয়ার কারণে উটের বাচ্চাগুলোর পা উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
(সহীহ মুসলিম ৭৪৮)
আল্লাহ আমাদের সকলকে নিয়মিত সালাতুদ দুহা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।