Post Updated at 6 Mar, 2024 – 9:26 AM

রমজান মাস রহমত বরকত মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। সারা বছরের সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ মাস এ রমজান। হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব দেয়া হয়। আর একটি ফরজ ইবাদত করলে সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব দেয়া হয়। এ মাসেই রয়েছে কুরআনে কারীম নাযিলের রাত মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর, যে রাতকে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ মাসের শেষ দশকে রয়েছে ইতেকাফের আমল। ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানেই ইতিকাফ করতেন। এ মাস তারাবীর নামাজের মাস। সবমিলিয়ে এ মাস তাই প্রতিটি মুসলমানের কাছেই পরকালের জন্যে সঞ্চয় বাড়িয়ে নেয়ার মাস। মুসলমানগণ এ মাসটি অত্যন্ত যত্ন ও আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে কাটিয়ে থাকেন।

তবে আমাদের অনেকের কাছেই এমন সময় রমজান মাস উপস্থিত হয়, যখন আমাদের কোনো প্রস্তুতি থাকে না। অথচ গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কাজ শুরু করার আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেয়াই সচেতনতার দাবি। এতে সে কাজটি অধিকতর সুন্দরভাবে সম্পাদিত হয়। রমজান মাস আসার আগেই যদি কিছুটা হলেও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে এ বরকতময় মাসটি আমরা অনেক সুন্দরভাবে কাটাতে পারব। তা না হলে মাস তো স্বাভাবিক গতিতেই  শেষ হয়ে যাবে। আর তখন আমাদের কেবল আফসোস করতে হবে- রমজান মাস চলে গেল, অথচ তেমন কোনো ইবাদতই করতে পারলাম না।

 

তাই আসুন, রমজান মাস শুরু হতে এখনো যতটুকু সময় বাকি আছে, এতটুকুতেই রমজান মাসের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সুযোগটুকু কাজে লাগাই। কে বলতে পারে, এ রমজানই কার কার জীবনের শেষ রমজান হয়ে যাবে!

রোজার বিস্তারিত মাসআলা সহ রোজা বিষকল মুসলিমস ডে ব্লগের সকল পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রমজানের প্রস্তুতি

রমজানের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে আমরা নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারি-

  1. রমজানের আগের মাস শাবান-এ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন। সামনের রমজানপূর্ব  দিনগুলোতে আমরাও নফল রোজা রাখতে পারি, যার যার সাধ্যমতো। বিশেষত সোম-বৃহস্পতিবারের রোজা রাখতে পারি। এ দুই দিন রোজা রাখা সুন্নত। তবে  রমজান শুরুর ১-২ আগে থেকে নফল রোজা রাখা বন্ধ করে দিতে হবে।
  2. রমজান মাস কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসের সঙ্গে পবিত্র কুরআনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তাই সকলেরই উচিত, এ মাসে কুরআন তেলাওয়াতে অধিক মনোযোগী হওয়া। যারা কুরআনের হাফেয, তারা নফল নামাজে অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করতে পারেন। যারা আংশিক হাফেয, তাদের পক্ষেও দীর্ঘ কেরাতে নফল নামাজ আদায় করা সম্ভব। আর দেখে দেখে তেলাওয়াত তো সকলেই করতে পারি। রমজান মাসের শুরু থেকেই যেন নিয়মিত অধিক পরিমাণে তেলাওয়াত করা যায়, এ জন্যে এখন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত কিছু সময় তেলাওয়াত করা উচিত। এতে রমজানের তেলাওয়াত সহজেই শুরু করা যাবে।
  3. তেলাওয়াত যেমন অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত, তেমনি অবহেলা ও উদাসীনতাবশত ভুল তেলাওয়াত ব্যক্তির জন্যে অভিশাপেরও কারণ। তাই যারা নিজেদের তেলাওয়াতের ব্যাপারে সন্দীহান, তাদের উচিত, তেলাওয়াত বিশুদ্ধ করে নেয়া। বিশেষত রমজান মাস আসার আগেই এ প্রস্তুতিটুকু সেরে নেয়া উচিত, যেন রমজান মাস শুরু হতেই বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা যায়। আর যারা তেলাওয়াত করতে শিখিনি, কিংবা ছোট বয়সে শিখলেও এখন ভুলে গেছি, তাদের উচিত, যে কোনোভাবেই হোক, বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখে নেয়া। মনে রাখতে হবে, এ শেখার জন্যে বয়স কোনো বাধা নয়। একটু যত্নবান হলে রমজান মাসেও শেখা হয়ে যেতে পারে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত। এ জন্যেও প্রস্তুতি  নেয়া উচিত।
  4. রমজান মাস তারাবীর নামাজের মাস। যারা খতমে তারাবী পড়ে থাকেন, তারা এক খতম কুরআন শোনার সৌভাগ্য লাভ করেন। রমজান মাসে নামাজে এক খতম কুরআন শোনার গুরুত্ব তো অনেক। বিশেষ করে যারা কুরআনে কারীম পড়তেই পারেন না, তাদের জন্যে কুরআন তেলাওয়াতের বরকত ও সৌভাগ্য লাভের এ এক মহাসুযোগ। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগানো উচিত। এখন থেকেই খতমে তারাবী পড়ার মানসিক প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
  5. সারা বছর অনেকের পক্ষেই শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সুযোগ হয় না। কিন্তু রমজান মাসে সাহরি খাওয়ার জন্যে শেষ রাতে আমাদের উঠতেই হয়। এ সময় দোয়া কবুল হয়। আমাদের উচিত, এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে মাসজুড়ে তাহাজ্জুদ নামাজে যত্নবান হওয়া। আরও ভালো হয়, যদি এখন থেকেই শেষ রাতে উঠে অল্প অল্প হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করি।
  6. যে ইবাদতগুলো সারা বছরই করা জরুরি, রমজান মাসে সেগুলোর প্রতি আরও অধিক যত্নবান হতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ যথাসময়ে আদায় করা, পুরুষেরা জামাতের সঙ্গে তাকবীরে ওলার সাথে আদায় করা, সুন্নতে মুআক্কাদাগুলো ঠিকঠাক আদায় করা- এসবের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। কেউ যদি পুরো রমজান মাস এভাবে কাটাতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই রমজান শুরুর আগে থেকেই এসবের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
  7. রমজান মাসেও দুনিয়াবি কাজকর্ম আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারি না। তবে যেসব কেনাকাটা রমজানের আগেই সেরে নেয়া যায়, তা শেষ করে ফেলা উচিত। এতে রমজান মাসকে অধিক পরিমাণে ইবাদতে কাটানো যাবে।
  8. রমজান মাস আসার আগেই নিজের অত্যাবশ্যকীয় কাজকর্ম আর ইবাদতবন্দেগির একটা রুটিন করে নেয়া উচিত,এতে সময়ে বরকত পাওয়া যায়।
  9. রোজা রেখে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা, মিথ্যা অশ্লীল ও অর্থহীন কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা রোজার প্রাণ। তাই আগে থেকেই এ জন্যে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত দোয়া করতে হবে, যেন আমাদের রোজাগুলো প্রাণহীন না হয়ে যায়, রোজা রেখে যেন আমরা গোনাহ থেকেও বাঁচতে পারি।
  10. রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বেশি পরিমাণে দানসদকা করতেন। তাই আমাদেরও উচিত, এ মাস আসার আগেই দানসদকার জন্যে সাধ্যমতো একটা বাজেট করা।
  11. রমজান মাসের শেষ দশক অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ। হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দশকে কোমড় বেঁধে ইবাদত করতেন। মসজিদে ইতেকাফ করতেন। অথচ আমরা অনেকেই এ দশকটি কাটিয়ে দিই ঈদের প্রস্তুতিতে। মনে রাখতে হবে, ঈদ তো প্রকৃত অর্থে তার জন্যেই, যে রমজান মাস অধিক পরিমানে ইবাদতে কাটায়। তাই আমাদের উচিত, দুনিয়াবি কাজকর্ম যথাসম্ভব ঘুচিয়ে এ দশকে ইতেকাফ করা। ইতেকাফ যারা করে, তাদের তো শবে কদর মিস হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। ইতেকাফ করতে না পারলেও অধিক পরিমাণে ইবাদত করা।
  12. ইফতারের বাহারি আয়োজন রমজানের একটি বড় বিষয়। অথচ এর না আছে শারীরিক উপকার, না আছে দীনি উপকার। ভাজাপোড়া জাতীয় ইফতার মুখরোচক বটে, তবে এতে রোজা রেখে যে শারীরিক উপকার লাভ করার কথা ছিল, তা আমরা নষ্ট করে দিচ্ছি। এর পাশাপাশি এ ইফতার আয়োজনে মা-বোনদের অনেক সময় কেটে যায়। বিশেষত বিকালের গুরুত্বপূর্ণ সময়।

তাই আসুন, রমজান মাস আসার আগেই যথাযথ প্রস্তুতি নিই। এতে আশা করা যায়, আমরা অধিক সুন্দরভাবে এ মাসটি কাটাতে পারব। হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, মুমিন তো ভালো কাজের নিয়ত করলেও সওয়াব পায়।

Comments
  1. ভুল কুরআন পড়া অভিশাপের কারণ কিভাবে হয়?? কেউ ত ইচ্ছা করে অবশ্যই ভুল কুরআন পড়বে না? এই হাদিস কোম জায়গা থেকে আনছেম?

    1. এক রকম ভুল হচ্ছেঃ আমি চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত শুদ্ধ করার। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে যায়। এটা এক রকম।
      আরেকটা হচ্ছেঃ আমি আরবি পড়া জানি না। শিখছিও না। বাংলা উচ্চারণ দেখে প্রায় প্রতি শব্দে শব্দে ভুল পড়ছি। এই ভুল শুধরানোর কোনো ইচ্ছাও নাই, বাস্তব কোনো উদ্যোগও নাই। কারণ পড়ছি তো বাংলা উচ্চারণ দেখে। জানা কথাই যে বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে বিকৃত অর্থ বা অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করা হবে। এটা আরেক রকমের ভুল।
      উভয় ভুল কি এক রকম?

      মাওলানা শিব্বীর আহমদ সাহেব স্পষ্ট করেই লিখেছেন উদাসীনতাবশত ভুল তিলাওয়াত ব্যক্তির জন্য অভিশাপের কারণ। একজন মানুষ উদাসীনতাবশত কুরআন ভুল পড়তেই থাকবে। এটা যে একটা ভয়ংকর বিষয়, তা বুঝার জন্য অনেক বেশি জ্ঞানী ও বিজ্ঞ মানুষ হওয়া জরুরি নয়।

  2. বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি

  3. আল্লাহুম্মা আমিন।

  4. আল্লাহুমা আমিন

  5. আল্লাহুম্মা আমিন

  6. বারাকাল্লাহ ফি হায়াতি

  7. আলহামদুলিল্লাহ

  8. বিষয়টি বুঝিয়ে বলার জন্য ধন্যবাদ।

  9. বারাক আল্লাহ ফি

  10. Assalamu alikum,,

  11. জাযাকাল্লাহু খইরন।

  12. اللهم امين

  13. সে যদি জানে কোরআান তোলাওয়াত ভুল পড়ছে তাহলে তার সেটা গুনাহ। Allah সবাইকে বুঝার তৌফিক করুন আমিন। আসালামুআলাইকুম

  14. Alhamdulillah

  15. আসসালামু আলাইকুম

  16. Good

  17. এবছর ফিতরাহ কত টাকা হবে

  18. 2024 ফিতরা কত টাকা হবে জানালে উপকৃত হবো

  19. আলহাদুলিল্লাহ ❤️

  20. মুসলিম ডে’স থেকে অনেক মূল্যবান মাসয়ালা মাসায়েল শিখার আছে, তদুপরি নামাজ ও সাহরীর /ইফতারীর সময়সূচী প্রত্যেকটা মুমিন বান্ধার জন্য অপরিহায্য নির্দেশিকাও বটে।
    আমি এই উদ্যোগের সার্বিক তরক্কী কামনা করি। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ