Post Updated at 8 Nov, 2023 – 3:15 PM

গোসলের ফরজ কয়টি?

গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:

  1. ভালোভাবে কুলি করা, যাতে সমস্ত মুখে পানি পৌঁছে যায়।
  2. নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
  3. সমস্ত শরীর ধৌত করা।

গোসলের সুন্নত পদ্ধতি

  • প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।
  • এরপর লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে। হাতে ও লজ্জাস্থানে কোনো নাপাকি থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় প্রথমে হাত, এরপর লজ্জাস্থান ধোয়া সুন্নত।
  • এরপর দেখতে হবে শরীর বা কাপড়ে কোথাও নাপাক কিছু লেগে আছে কি না। থাকলে তা ধুয়ে নিতে হবে।
  • এরপর ধারাবাহিকভাবে পরিপূর্ণ ওজু করবে। কিন্তু যদি কেউ এমন কোথাও দাঁড়িয়ে গোসল করে, যেখানে গোসলের পানি জমে থাকে, তাহলে পা ধুইবে না। গোসল শেষে পা ধুয়ে নেবে। এমন সংকট না হলে ওজুর সময়ই পা ধুয়ে নেবে।
  • এরপর তিনবার করে পানি ঢালবে। প্রথমে মাথায়, এরপর ডান কাঁধে, পরে বাম কাঁধে।
  • পানি এমনভাবে ঢালবে যেন পুরো শরীরে পানি গড়িয়ে পড়ে।

গোসল সম্পর্কিত কিছু মাসআলা

মাসয়ালা : গোসল করার পূর্বে নিয়ত করা কোনো জরুরি বিষয় নয়। নিয়ত করুক বা না করুক, যদি কেউ পানি ঢেলে পুরো শরীর ভিজিয়ে দেয়, কিংবা বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে যায়, এমনকি যদি নদী বা পুকুর থেকে ডুব দিয়ে ওঠে, আর এর সঙ্গে ভালোভাবে কুলি করে নেয় এবং নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়, তাহলেই গোসল হয়ে যাবে। গোসলের সময় কোনো কালেমা পড়া কিংবা কালেমা পড়ে পানিতে ফুঁ দেয়ারও কোনো নিয়ম নেই। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে―পুরো শরীরে পানি পৌঁছেছে কিনা। যদি একটি লোমের জায়গাও শুকনো থাকে, তাহলেও গোসল হবে না।

মাসয়ালা : গোসলের সময় ভুলে কোনো অঙ্গ ধোয়া না হলে, কিংবা গোসলের পরও যদি কোনো অঙ্গ শুকনো থেকে যায় তাহলে শুধু ঐ অঙ্গটি ধুয়ে নিলেই হবে। আবার নতুন করে গোসল করতে হবে না। তবে যদি শুকনো অঙ্গটি ভেজা হাতে মাসেহ করে নেয় তাহলে যথেষ্ট হবে না। বরং তা ধুয়ে নিতে হবে।

মাসয়ালা : উপরে বর্ণিত নিয়মে গোসলের আগে ওজু করা সুন্নত। যদি কেউ ওজু না করে তাহলেও গোসল হয়ে যাবে। গোসল করার পর আর ওজু করার প্রয়োজন নেই। তবে ফরজ গোসল হলে অবশ্যই ভালোভাবে কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে। এদুটি গোসলের ফরজ। এদুটি ছাড়া গোসল সম্পন্ন হবে না।

মাসয়ালা : মেয়েদের চুলে যদি বেণি করা থাকে, তাহলে বেণি খোলা জরুরি নয়। বরং চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছালেই হবে। তবে সবগুলো চুলের গোড়াতেই পানি পৌঁছাতে হবে। আর যদি বেণি না থাকে, তাহলে চুলের গোড়া ও চুল সবই ধুয়ে নিতে হবে। কিছুই শুকনো রাখা যাবে না। বেণি রেখে যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব না হয় তাহলে বেণি খুলে ফেলতে হবে। আর তখন চুল ও চুলের গোড়া সবই ধুয়ে নিতে হবে।

মাসয়ালা : বেণি পাকানো চুল ধুইতে হয় না―এ বিধান শুধুই মহিলাদের জন্যে প্রযোজ্য। যদি কোনো পুরুষ চুলে বা দাড়িতে বেণি করে তাহলে গোসলের সময় তাকে বেণি খুলে চুল-দাড়ি ধুয়ে নিতে হবে। অন্যথায় গোসল হবে না।

মাসয়ালা : কারও দেখার সম্ভাবনা নাই―এমন  জায়গায় প্রয়োজন হলে পুরো নগ্ন অবস্থায়ও গোসল করা যেতে পারে। তবে গোসলের সময়ও যথাসম্ভব সতর ঢেকে রাখাই উত্তম। নগ্ন হয়ে গোসল করলে সেসময় কেবলার দিকে মুখ করবে না। আর যদি সতর ঢাকা থাকে, তাহলে কেবলামুখী হয়ে গোসল করাতেও কোনো সমস্যা নেই।

Comments
  1. আসসালামুয়ালাইকুম। ওজু করে গোসল করার সময় যদি গোপন অংগে হাত লেগে যায় তাহলে গোসলের পর আবার ওজু করতে হবে কিনা? কারণ, গোপন অঙ্গে হাত লেগে গেলে ওজু ভংগ হয়!

    1. ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
      না ভাই, এতে ওজু ভাঙ্গে না।

  2. জাযাকাল্লাহু খাইরান। অনেক উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমরা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও ছোটখাটো জিনিস জানিনা। আপনার লেখা থেকে সবাই উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ । মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে নেক হায়াত দান করুন। আমিন।

  3. আসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ। অনেক জরুরী বিষয় জানতে পারলাম। আমি জানতে চাই- নগ্ন হয়ে গোসলের পর অথবা গোসলের সময় হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে পুণরায় অজু করতে হবে ?

    1. সতর খুলে যাওয়ার সাথে ওজু নষ্ট হওয়ার কোনো সম্পর্ক নাই। হাটুর উপরে কাপড় উঠলে বা সম্পূর্ণ সতরও খোলা হলে ওজু নষ্ট হবে না। তাই আপনার প্রশ্নের সিনারিওতে, গোসলের পর পুনরায় ওজু করার প্রয়োজন নেই।
      কোন কোন কারণে ওজু নষ্ট হয়, আর কোন কোন কারণে ওজু নষ্ট হয় না সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে এই ব্লগ পোস্ট থেকে

  4. ফরজ গোসলে ওজু না করলে কি গোসল হবে? আর ওজু বাদ থাকলে কি গোসল পরই নামাজ পড়া যাবে কি?

    1. গোসলের শুরুতে ওজু করা সুন্নত। তবে যদি ওজু না করেও পুরো শরীর ভালো করে ধোয়া হয় এবং ফরজগুলো আদায় করা হয় তবে গোসল হয়ে যাবে এবং নামাজ‌ও পড়া যাবে।

  5. প্রশ্ন ১: অনেক সময় কাপড়ে বীর্য লেগে থাকে। কিন্তু কোথায় লেগে আছে সেটা জানা সম্ভব হয়না। কারন সেটা শুকিয়ে যায়।

    এই অবস্থায় ফরয গোসলের ক্ষেত্রে সেই কাপড়ের নাপাকি দুর করা সম্ভব হয়না। তো সেই কাপড় পড়েই ফরয গোসল করা যাবে কি? নাকি অন্য আরেকটা কাপড় পড়ে ফরয গোসল করতে হবে?

    প্রশ্ন ২: বদ্ধ বাথরুমে উলঙ্গ হয়ে ফরয গোসল করা যাবে কি?

    1. উত্তর ১ : নাপাকি চিহ্নিত করতে না পারলে সম্ভাব্য নাপাক জায়গাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভালো করে পানি ঢেলে গোসল করুন। কাপড় পরিবর্তন করে গোসল করার প্রয়োজন নেই।
      উত্তর ২. যাবে, তবে উত্তম হলো বদ্ধ বাথরুমেও কাপড় পরেই গোসল করা।

  6. Assalamualaikum ouarahamatullah barakathu

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ