Press ESC to close

কুরবানির পশু জবাইয়ের মাসায়েল

Post Updated at 27 May, 2024 – 7:53 AM

নিজে জবাই করা

সম্ভব হলে নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। তবে নিজে জবাই করতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়েও জবাই করানো যাবে। [বাদাইয়ুস সানায়ে‘, ৫/১১৮]

জবাইকারীকে কেউ সহযোগিতা করলে

জবাইকারীকে যদি কসাই বা অন্য কেউ মূল জবাইয়ের কাজে সহযোগিতা করে এবং প্রথম জবাইকারীর অবশিষ্ট কাজ পূর্ণ করে, তবে তাকেও অবশ্যই ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। প্রথম জবাইকারী যদি জবাই সম্পন্ন না করে থাকেন, (অর্থাৎ দুই শাহ রগ, শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী- এ চারটির কমপক্ষে তিনটি কাটা না হয়) আর সহযোগিতাকারী বিসমিল্লাহ না বলেই ছুরি চালিয়ে দেন, তবে এ জবাই শুদ্ধ হবে না এবং এ পশুর গোশতও হালাল হবে না।

জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ না বললে

জবাইয়ের সময় জবাইকারী ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলবেন। যদি একাধিক ব্যক্তি মিলে জবাই করে, অর্থাৎ একজন জবাই শুরু করার পর আরেকজন তাকে সহযোগিতা করে, তবে তাকেও বিসমিল্লাহ বলে ছুরি চালাতে হবে। ইচ্ছাকৃত কেউ যদি বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করে, তবে সে জবাইকৃত পশু খাওয়া হালাল হবে না। আর যদি কোনো মুসলমান জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে অবশ্য সে পশু হালালই থাকবে, হারাম হবে না।

জবাইয়ের সুন্নত তরিকা

জবাইয়ের সুন্নত তরিকা হচ্ছে—জবাইকারী কিবলামুখী হয়ে জবাই করবেন। পশুকে বামপার্শ্ব করে শোয়ানো হবে এবং তার মাথা থাকবে দক্ষিণদিকে। [বাদাইয়ুস সানায়ে‘, ৫/১১৮]

নারী ও বাচ্চাদের জবাই

নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা—তারা যদি ভালোভাবে জবাই করতে জানে, তাহলে তারাও কুরবানির পশুও জবাই করতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

জবাইয়ের সময় পশুকে অতিরিক্ত কষ্ট না দেয়া

জবাইয়ের আগে ছুরি ভালোভাবে ধার করে নেবে। জবাইয়ের সময় পশু যেন অতিরিক্ত কষ্ট না পায়। এক পশুকে আরেক পশুর সামনে জবাই করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবে। পশুর সামনে ছুরি ধার দেবে না। পশুকে শুইয়ে দিয়ে ছুরি ধার করার জন্যে সময় ক্ষেপন করবে না। মোট কথা, জবাইয়ের সময় এমন কিছুই করা যাবে না, যাতে পশু অতিরিক্ত কষ্ট পেতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ

আল্লাহ তাআলা সবক্ষেত্রেই ‘ইহসান’ বা সহজতা অবলম্বন করাকে ফরজ করেছেন। তাই যখন তোমরা (পশু) হত্যা করবে, তখন উত্তম ও সহজভাবে তা করবে। যখন জবাই করবে, সেক্ষেত্রেও সহজতা অবলম্বন করবে। (জবাইয়ের আগে) ছুরি ধার করে নেবে এবং জবাইয়ের পশুকে (সহজভাবে জবাই করে) আরাম দেবে।  [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮১৫]

জবাইয়ের সময় কুরবানিদাতাদের নাম পাঠ

যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে, জবাইয়ের আগে তাদের নাম পড়া জরুরি নয়। যিনি জবাই করবেন, তিনি যদি কুরবানিদাতার নাম না জানেন, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পশুকে শুইয়ে দিয়ে নাম পড়ার জন্যে সময় নেয়া হচ্ছে। এটা নিতান্তই ভুল।

নিস্তেজ হওয়ার আগেই চামড়া খসানো

জবাইয়ের পর পশু পূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরুহ। এতে পশু অতিরিক্ত কষ্ট পায়। এটা গোনাহের কাজ।  [বাদাইয়ুস সানায়ে‘, ৫/১১৯]

কুরবানির দুআ

জবাইয়ের আগে কুরবানির দোয়াটি পড়া সুন্নত। না পারলে শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করলেও জায়েজ হবে। তবে ইচ্ছাকরে ‘বিসমিল্লাহ’ও যদি কেউ না বলে তাহলে জায়েজ হবে না।

জবাইয়ের পারিশ্রমিক

জবাইয়ের পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া দুটোই জায়েয। তবে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির পশুর কোনো অংশ—গোশত চামড়া ইত্যাদি দেয়া যাবে না।

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Comments (3)

  • محمد رقيب الاسلامsays:

    June 16, 2024 at 12:16 pm

    আাস্সালামু শায়েখ আমার জানার বিষয় হচ্ছে : গরু নিস্তেজ হওয়ার আগে স্পাইনাল কর্ড “১”খোচা দিয়ে কেটে ফেললে কি সেই গরুর গোশত খাওয়া হারাম? (অর্থাত : গলাই খাদ্যনালির পরে যে রগটা থাকে)।

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      June 16, 2024 at 2:09 pm

      ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
      এমনটা করা মাকরুহ। তবে গোশত খাওয়া হারাম হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ১,৯৪৭,৭৩২

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন