
Post Updated at 7 Sep, 2024 – 5:59 PM
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামের অন্যতম শিআর বা নিদর্শন। এটি একটি বিশেষ ধরনের ইবাদত। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে শরিয়তনির্দেশিত পন্থায় শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পশু আল্লাহ তাআলার নামে জবাই করা।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সকল নবীর শরিয়তেই কুরবানির বিধান ছিল। তবে সব যুগে কুরবানির পদ্ধতি এক রকম ছিল না। আমাদের শরিয়তে যে কুরবানি, তার মূলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কুরবানি। তাই একে সুন্নতে ইবরাহীমীও বলা হয়। আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পশু জবাই করে কুরবানি আদায় করে থাকি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন এভাবে—
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যে নামাজ আদায় করো এবং কুরবানি করো। [সূরা কাউসার, আয়াত ২]
আরেক আয়াতে কুরবানির পশুকে ‘শিআর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—
وَ الْبُدْنَ جَعَلْنٰهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآىِٕرِ اللهِ لَكُمْ فِیْهَا خَیْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَیْهَا صَوَآفَّ، فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَ الْمُعْتَرَّ، كَذٰلِكَ سَخَّرْنٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.
আমি কুরবানির উট (ও জন্তু)কে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম ‘শিআর’ (নিদর্শন) বানিয়েছি। তোমাদের জন্যে তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং তা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় তোমরা তার উপর আল্লাহর নাম নাও (অর্থাৎ জবাই করো)। তারপর যখন তা কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন তা থেকে নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও, এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [সূরা হজ, আয়াত ৩৬]
কুরবানি যেমন আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্য শিক্ষা দেয়, আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজের সকল চাহিদা ও ভালোবাসা বিসর্জন দেয়ার শিক্ষা দেয়, তেমনি তা আমাদেরকে তাকওয়ার শিক্ষাও দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.
আল্লাহর কাছে এসবের (অর্থাৎ কুরবানির পশুর) রক্ত-মাংস কিছুই পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি সেগুলো (পশুগুলো) তোমাদের জন্যে বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর। কারণ, তিনি তোমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। আর তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও। [সূরা হজ, আয়াত ৩৭]
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই গুরুত্বের সঙ্গে কুরবানির বিধান পালন করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.এর হাদীস—
أَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِالمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلّ سَنَةٍ.
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর কাটিয়েছেন। এ দশ বছরের প্রতি বছরই তিনি কুরবানি করেছেন। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৯৫]
কুরবানি আল্লাহ তাআলার নিকট কতটা পছন্দনীয়—এর কিছুটা ধারণা আমরা এ হাদীস থেকে পেতে পারি—হযরত আয়েশা রা.এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ ، إِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ القِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا ، وَأَنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ ، فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا.
ইয়াউমুন নাহর (অর্থাৎ ১০ যিলহজ)-এ বান্দা যত আমল করে, তার মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় হচ্ছে পশু কুরবানি করা। সন্দেহ নেই, তা কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। আর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা সন্তুষ্টিচিত্তে কুরবানি করো। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৩]
Comments (13)
মিতু আক্তারsays:
May 20, 2025 at 8:19 AMআসসালামু আলাইকুম,
জনাব আমার বাবা জমি ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা লোন করে,। জমির মূল্য অর্ধেক পরিশোধ হয়েছে, বাকি টাকা ঈদের পরে পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করা হবে। এখন জমি ক্রয়ের জন্য যে গচ্ছিত টাকা-(২ লাখ) জমা আছে এই টাকার জন্য কুরবানি ওয়াজিব হবে কি না…???
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
May 20, 2025 at 4:49 PMওয়াআলাইকুমুস সালাম
এ দুই লক্ষ টাকা ছাড়া তার কাছে যদি কুরবানির নেসাবে হিসাব করা হয় এমন আর কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে শুধু এ টাকার জন্যে কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
মোঃ আলমগীর আলীsays:
May 22, 2025 at 11:04 AMএকজন ব্যক্তির কতো পরিমাণ অর্থ সম্পদ হলে কোরবানি জায়েজ হবে
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
May 26, 2025 at 1:26 PMকুরবানি কার ওপর ওয়াজিব – শিরোনামে আমাদের ব্লগে একটি লেখা আছে। দয়া করে এটা পড়ে নিন।
এনামুল হকsays:
May 22, 2025 at 4:44 PMআসসালামু আলাইকুম হযরত
আমাদের এলাকায় কুরবানির মাংস ভাগের একটা রীতি প্রচলন আছে। তা হচ্ছে, কুরবানির মাংস ৩ ভাগ করে ১ ভাগ নিজের জন্য, ১ ভাগ আত্মীয়দের জন্য আর ১ ভাগ মালতে দেওয়া হয়।
মালত বলতে আমাদের এলাকায় বুঝানো হয় একটি নির্দিষ্ট পাড়া বা মহল্লাকে। যেখানে ওই পাড়া বা মহল্লার যত লোক কুরবানি দিবে তারা সবাই মাংসের ১ ভাগ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবে। এরপর সবগুলো মাংস একসাথে মিশ্রিত করে ওই পাড়া বা মহল্লার যতগুলো ঘর বা পরিবার আছে (যারা কুরবানি করেছে বা করেনি সবাই অন্তর্ভুক্ত) সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই মালত পদ্ধতি কতটুকু ইসলামি আইনসিদ্ধ?
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
May 26, 2025 at 1:25 PMওয়াআলাইকুমুস সালাম
এ পদ্ধতি শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কুরবানির গোশত বণ্টন একান্তই কুরবানিদাতার নিজস্ব বিষয়। তিনি চাইলে পুরো কুরবানির গোশতও নিজের প্রয়োজনে রেখে দিতে পারেন। চাইলে যে কোনো পরিমাণ দান করতে পারেন, যে কাউকে দান করতে পারেন। চাইলে কোনো একজন গরীব আত্মীয় বা প্রতিবেশিকে একটু বেশি পরিমাণে দিতে পারেন। সম্পূর্ণই তার ইচ্ছাধীন। কুরবানির মতো একটি ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে, শরিয়ত যে বিষয়টিকে ঐচ্ছিক রেখেছে, তা কারও ওপর সামাজিকভাবে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
امان اللهsays:
May 23, 2025 at 12:31 PMমাশা-আল্লাহ,
সুন্দর আলোচনা।
মো: আব্দুল মান্নান।says:
May 25, 2025 at 12:53 PMআসসালামু আলাইকুম জনাব আমি কুরবানী দেওয়ার জন্য টাকা জমাই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে আমার দুই মাস যাবত চাকরি নেই এখন আমি ওই টাকা সংসারে খরচ করতাছি। তাহলে কি আমার কুরবানী দেওয়া কি জরুরী না আমার সমস্যা সমাধান করা জরুরী। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি ।
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
May 26, 2025 at 2:20 PMওয়াআলাইকুমুস সালাম। আপনার কাছে যদি নেসাব পরিমাণ টাকা থেকে থাকে, তাহলে তো কুরবানি করা ওয়াজিব হবে। কিন্তু যদি এর কম থাকে, তাহলে ওয়াজিব নয়।
MD Sabbir Sheikhsays:
May 26, 2025 at 12:36 PMআস্সালামুআলাইকুম কুরবানির কত দিন আগে চুল নক, এবং শরিলের অবানচিৎ লোম কাটা থেকে বিরতো থাকতে হবে।
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
May 26, 2025 at 2:00 PMওয়াআলােইকুমুস সালাম
যিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকেই এগুলো কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
Md hafeezsays:
May 29, 2025 at 6:03 AMআসসালামু আলাইকুম, আমার একটি প্রশ্ন কেউ যদি ঋণ থাকে তারপর যদি তার হাতে টাকা হয় আগের ঋণ পরিশোধ করতে হবে নাকি কোরবানি আগে দিতে হবে
মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:
June 2, 2025 at 1:05 PMকুরবানি ওয়াজিব হলে তা তো আদায় করতেই হবে।