Press ESC to close

হজের সফরে নারীরা কোথায় নামায আদায় করবেন

Post Updated at 21 May, 2025 – 5:08 PM

স্বাভাবিক সময়ে বাড়িতে থাকাকালে নারীদের জন্যে যেমন মসজিদে না গিয়ে নিজ ঘরে নামায আদায় করাই উত্তম, একই কথা হারামাইনের সফরেও প্রযোজ্য। সেখানেও নারীরা শুধুই নামায আদায়ের জন্যে হোটেল থেকে বের হয়ে মসজিদে যাবে না। তারা নিজ নিজ হোটেলে বা বাসাতেই নামায আদায় করবে। এটাই তাদের জন্যে উত্তম। হ্যাঁ, তাওয়াফ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে যদি মসজিদে হারামে থাকাবস্থায়ই নামাযের সময় হয়ে যায়, তাহলে সেখানে নারীদের জন্যে নির্ধারিত স্থানে নামায আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নেই।

হাদীস শরীফে নারীদের মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করার কথাও অবশ্য বর্ণিত আছে। যেমন,

সাহরি, ইফতার ও নামাজের সময়সূচীর জন্য ডাউনলোড করুন মুসলিমস ডে অ্যাপ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

তোমরা রাতের বেলা নারীদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দাও। [বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৮৯৯]

বাহ্যত এ হাদীস থেকে নারীদের মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার বিষয়টিই সাব্যস্ত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীদের কেউ কেউ মসজিদের জামাতে শরিক হতেন। সেই সাথে এই হাদীসে পুরুষদেরকে নিষেধ করা হচ্ছে তাদের অধীনস্থ নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিতে। বলা হচ্ছে, তোমরা তাদেরকে অনুমতি দাও।

অপরদিকে যে হাদীসগুলোতে নারীদের মসজিদে যাওয়ার কথা আছে, সেগুলোতে যদি গভীরভাবে লক্ষ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও পুরুষদেরকে বলেছেন তাদের অধীনস্থ নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা না দিতে, কিন্তু সেসবের কোনো একটিতেও তিনি তাদেরকে মসজিদে যেতে কোনোরূপ উৎসাহিতই করেননি। আর আদেশ করার তো প্রশ্নই আসে না। পাশাপাশি তাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতিকেও করা হয়েছে শর্তসাপেক্ষ। যেমন, কোনো ধরণের সুগন্ধি ব্যবহার না করা, রাতের বেলা যাওয়া, কোনো ধরনের ফেতনার আশংকা না থাকা ইত্যাদি। আর হাদীস থেকে  প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নারীদেরকে মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন। সহীহ ইবনে খুযায়মার হাদীস-

হযরত আবু হুমায়দ সাঈদী রা. এর স্ত্রী থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন,

 

হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে নামায আদায় করতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, আমি তো জেনেছি, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে চাচ্ছ। কিন্তু ঘরের কোণের নিভৃত কক্ষে নামায পড়া তোমার জন্যে ঘরের বড় কামরায় নামায পড়া থেকে উত্তম; ঘরের বড় কামরায় নামায পড়া তোমার বাড়িতে (অর্থাৎ ঘরের বাইরে কিন্তু বাড়ির ভেতরে আঙিনায়) নামায পড়া থেকে উত্তম; বাড়িতে নামায পড়া তোমার এলাকার মসজিদে নামায থেকে উত্তম; আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া আমার এ মসজিদে তোমার নামায পড়া থেকে উত্তম।

 

তখন তাঁর আদেশেই তার জন্যে তার ঘরের কোণে অন্ধকার স্থানে একটি নামাযের স্থান তৈরি করা হলো। আর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানেই নামায আদায় করলেন। [হাদীস নং ১৬৮৯]

এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মহিলা সাহাবীকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। কিন্তু তিনি তাকে উৎসাহিত করেছেন আপন ঘরের কোণে নামায আদায় করতে। হাদীস শরীফে আছে, আমার এ মসজিদে এক রাকাত নামায মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাযের চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৯০] কোনো কোনো বর্ণনায় অবশ্য পঞ্চাশ হাজার রাকাতের কথাও আছে। আর সে নামাযটি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে পড়া হয়! এ জন্যেই হয়তো সে নারী সাহাবী মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতসব ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল তাকে বললেন, নারীদের জন্যে এ মসজিদে এসে নামায পড়ার তুলনায় নিজ মহল্লার মসজিদে, নিজ মহল্লার মসজিদের তুলনায় বাড়ির উঠানে, উঠানের তুলনায় ঘরে, ঘরের তুলনায় ঘরের কোনো ছোট নির্জন কক্ষে নামায পড়া উত্তম।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, মসজিদে হারামে নামায আদায় করলে এক লক্ষ গুণ বেশি সওয়াব হয়। মসজিদে নববীতে নামায আদায় করলে পাওয়া যাবে এক হাজার গুণ সওয়াব। নারীরা যদি বাসায় কিংবা হোটেলে নামায আদায় করে, তাহলে এ বিশাল ফযিলত থেকে মাহরুম থেকে যাবে! একই কথা বাড়িতে থাকাকালে মহল্লার মসজিদে জামাতে শরিক হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জামাতে নামায আদায় করলে একাকী নামায আদায়ের তুলনায় ২৭গুণ বেশি সওয়াব হয়।

এ থেকে বাহ্যত নারীদের মসজিদে গিয়ে নামায আদায়ের বিষয়টিই অধিক ফযিলতপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু কথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন- নারীদের জন্যে মসজিদে নামায আদায়ের তুলনায় নিজ ঘরের নির্জন কক্ষে নামায আদায় করা উত্তম। আর স্বাভাবিক কথা- যেটা উত্তম, তাতেই সওয়াব বেশি পাওয়া যাবে।

এ থেকে বোঝা যায়, মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করবে পুরুষেরা। এতে তারা একাকী নামায আদয়ের তুলনায় সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব পাবে। আর নারীরা নিজ নিজ ঘরেই নামায আদায় করবে। এতে তারা কী পরিমাণ সওয়াব পাবে, তা যদিও হাদীসে স্পষ্ট করা হয়নি, কিন্তু এটাই যেহেতু উত্তম এবং এ মর্মে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে, তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়- জামাতের তুলনায় ঘরের নামাযেই মহিলারা সওয়াব বেশি পাবে। এটা হতে পারে না- ঘরে নামায পড়া উত্তম হওয়ার পরও তাতে সওয়াব কমই পাওয়া যাবে আর জামাতের নামায উত্তম না হওয়ার পরও জামাতে নামায আদায় করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যাবে।

তবে কোনো নারী সফরের হালতে, কিংবা কোনো প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়ার পর বাইরে থাকাকালেই যদি নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে তারা মসজিদে নামায আদায় করে নেবে। কেউ কেউ বাসায় ফিরে এসে নামায আদায় করার অপেক্ষায় থেকে নামায কাযা করে ফেলে। এটা ভুল। মসজিদে যদি নারীদের নামাযের পৃথক জায়গা থাকে, তাহলে তো সেখানে তারা নামায আদায় করবে। আর যদি আলাদা জায়গা না থাকে, তাহলে  পর্দা রক্ষা করে পুরুষদের অংশেই তারা নামায পড়তে পারবে।

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ৩,২৬৬,৫৭৪

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন