Press ESC to close

কেরাত সংক্রান্ত মাসআলা

Post Updated at 30 Jan, 2025 – 12:07 PM

কতটুকু কেরাত ফরয

ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাত এবং সুন্নত-নফল ও ওয়াজিব নামাযের প্রত্যেক রাকাতে পবিত্র কুরআন থেকে কমপক্ষে এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরয। [সূরা মুযযাম্মিল, ৭৩ : ২০; রদদুল মুহতার, ২/১৩৩]

সাহরি, ইফতার ও নামাজের সময়সূচীর জন্য ডাউনলোড করুন মুসলিমস ডে অ্যাপ

ওয়াজিব কেরাত

ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাত এবং ওয়াজিব-সুন্নত-নফল নামাযের সকল রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং অন্য জায়গা থেকে অন্তত ছোট তিন আয়াত কিংবা এর সমপরিমাণ বড় কোনো আয়াত তেলাওয়াত করা ওয়াজিব।  ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নত, ওয়াজিব নয়। এ দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মেলানো সুন্নতও নয়। বরং না মেলানোই নিয়ম। অবশ্য ভুলবশত যদি কেউ মিলিয়ে ফেলে তাহলে অসুবিধা নেই। এ কারণে তাকে সাহু সিজদা আদায় করতে হবে না। এ দুই রাকাতে যদি কেউ সূরা ফাতেহা না পড়ে কোনো তাসবিহ পড়ে কিংবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলেও নামায হয়ে যাবে, তবে একটি অনুত্তম কাজ হবে।

আউযুবল্লিাহ ও বিসমিল্লাহ কখন পড়বে

প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ দুটোই পড়বে। এটা সুন্নত। এরপর প্রতি রাকাতেই সূরা ফাতেহার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়বে এবং যে কোনো রাকাতে কোনো সূরার শুরু থেকে পড়লেও বিসমিল্লাহ পড়বে। এটা মুসতাহাব। তবে সূরা ফাতেহার পর কোনো সূরার শুরু থেকে না পড়লে বিসমিল্লাহ পড়ার প্রয়োজন নেই, আবার পড়লেও অসুবিধা নেই। [রদ্দুল মুহতার, ২/১৯২]

কেরাত কখন জোরে পড়বে, কখন আস্তে পড়বে

ফজর মাগরিব ও ইশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে ইমাম জোরে কেরাত পড়বেন। একাকী নামায আদায়কারী জোরেও পড়তে পারেন, আস্তেও পড়তে পারেন। আর জোহর ও আসর নামাযে ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী সকলেই আস্তে আস্তে কেরাত পড়বেন। মাগরিবের শেষ রাকাত এবং ইশার শেষ দুই রাকাতেও সকলকেই সূরা ফাতেহা আস্তে পড়তে হবে। জুমার নামায, ঈদের নামায এবং রমজান মাসে বিতির ও তারাবির জামাতে প্রতি রাকাতেই জোরে কেরাত পড়তে হবে। 

 

জোরে ও আস্তে কেরাত পড়ার অর্থ

কেরাত জোরে পড়ার অর্থ কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজ করে পড়া, যেন পেছনের কাতারের কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর আস্তে পড়ার অর্থ মাখরাজ আদায় করে জিহ্বা ও ঠোঁট নাড়িয়ে উচ্চারণ করে পড়া। তবে নিজ কানে তা শোনা জরুরি নয়। [রদ্দুল মুহতার, ২/২৫৩]

সুন্নত বা মুসতাহাব কেরাত

সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলানোর ক্ষেত্রে যে কোনো নামাযে যে কোনো সূরা বা আয়াত পড়া যেতে পারে, অসুবিধা নেই। অমুক নামাযে অমুক সূরাই পড়তে হবে- এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে কোনো কোনো নামাযে কিছু নির্দিষ্ট সূরার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, ফজর ও মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাযে সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস পড়া, জুমার দিন ফজরের ফরয দুই রাকাতে সূরা সাজদাহ ও সূরা দাহর পড়া, জুমা ও ঈদের দুই রাকাতে সূরা আ’লা ও সূরা গাশিয়াহ পড়া ইত্যাদি। এসব নামাযে এ সূরাগুলো পড়া মুসতাহাব। তবে যদি এমনভাবে এর ওপর আমল করা হয় যে, মনে হবে- অন্য সূরা এখানে পড়াই যাবে না, তাহলে তা অনুচিত হবে। আবার এটাও সমীচীন নয় যে, সূরা বড় হওয়ার অজুহাতে কখনোই এ মুসতাহাব কেরাতগুলো পড়া হবে না।

ফরয নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কোন কোন সূরা বা কেরাত পড়তেন- এ বিষয়ে হাদীস শরীফে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন, ফজরের নামাজে সূরা কাফ, সূরা রূম, সূরা সাফফাত, সূরা রাহমান ইত্যাদি নানা সূরার পড়ার কথা রয়েছে। এমনকি হযরত আবু বকর রা. ফজরের দুই রাকাতে সূরা বাকারা কিংবা সূরা আলে ইমরানের মতো বড় সূরাও পূর্ণ তেলাওয়াত করতেন। কখনো আবার ফজরের কেরাতও ছোট হতো। আর অন্যান্য নামাযের কেরাত স্বাভাবিকভাবে ফজরের কেরাতের চেয়ে ছোট হতো। মাগরিবের কেরাত সবচেয়ে বেশি ছোট হতো। আবার এ নামাযগুলোতে, এমনকি মাগরিবেও বড় সূরা তেলাওয়াতের কথা বর্ণিত আছে। এসব হাদীসকে সামনে রেখে ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেছেন : ফজরের নামাযে সূরা ফাতেহার পর দুই রাকাতে চল্লিশ আয়াত, জোহরের নামাযে চল্লিশ আয়াত বা এর কাছাকাছি, আসর ও ইশায় বিশ রাকাত আর মাগরিবের প্রতি রাকাতে পাঁচ-ছয় আয়াত বিশিষ্ট কোনো ছোট সূরা পড়বে। [আলমাবসূত, ১/১৬২, ইদারাতুল কুরআন ওয়াল উলূমিল ইসলামিয়া করাচী কর্তৃক প্রকাশিত সংস্করণ]

হাদীস ও আসার সামনে রেখেই পরবর্তী কালের ফকীহগণ বলেছেন : মুস্তাহাব হলো, ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকে পড়া, আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাসসাল থেকে পড়া এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল থেকে পড়া। তবে ইমাম কুদূরী রাহ.-সহ অন্যান্য ফুকাহায়ে কেরাম এও বলেছেন যে, যোহরেও আছর ও ইশার মতো আওসাতে মুফাসসালই পড়বে।

তিওয়ালে মুফাসসাল হচ্ছে সূরা হুজুরাত থেকে সূরা ইনশিকাক পর্যন্ত, আওসাতে মুফাসসাল হচ্ছে সূরা বুরুজ থেকে সুলা কাদর পর্যন্ত, আর কিসারে মুফাসসাল সূরা বায়্যিনাহ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত।

মোট কথা, এখানে বেশ প্রশস্ততা রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যে নির্দিষ্ট যে সূরাগুলোর কথা বলা হলো, সেগুলো পড়লেও মুসতাহাব আদায় হবে, আবার এখানকার কোনো সূরার পরিমাণ অন্য জায়গা থেকেও পড়া যেতে পারে। একইভাবে আয়াতসংখ্যার ভিত্তিতে যে মতটি উল্লেখ করা হয়েছে, এর ওপরও আমল করা যেতে পারে। [এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে মাসিক আলকাউসারের অক্টোবর ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নামাযের মাসনূন কেরাত’ লেখাটি পড়ুন। লেখাটির লিংক : https://www.alkawsar.com/bn/article/2459/ ]

সূরার তারতীব ঠিক রাখার বিধান

সূরা ফাতেহার পর যে সূরা মেলানো হয়, তাতে কুরআন শরীফের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পড়াই নিয়ম। অর্থাৎ আগের সূরা আগের রাকাতে পড়া, পরের সূরা পরের রাকাতে পরা। এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়লে আগের সূরা আগে পড়া, পরের সূরা পরে পড়া। যদি কেউ ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত এ ধারাবাহিকতা লঙ্ঘন করে তাহলে তা মাকরুহ হবে।  তবে যদি কেউ ভুলবশত ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে, তাহলে এজন্যে সাহু সিজদা দিতে হবে না। অবশ্য নফল নামাযে এ ধারাবাহিকতার লঙ্ঘন দূষনীয় নয়। [শারহুল মুনয়াহ, ৪৯৪]

প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়লে

নামাযে সূরার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা উত্তম। তাই প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে দ্বিতীয় রাকাতেও একই সূরা পড়া উচিত, যাতে ধারাবাহিকতা ভঙ্গ না হয়। [রদ্দুল মুহতার, ২/২৬৮]

কোন রাকাতের কতটুকু কেরাত

সূরা ফাতেহার পর যেখানে সূরা মিলাতে হয়, সেখানে প্রতি রাকাতেই কমপক্ষে ছোট তিন আয়াত কিংবা এর সমপরিমাণ তেলাওয়াত করতে হয়। এটা কেরাতের সর্বনিম্ন পরিমাণ। কেরাতের সর্বোচ্চ কোনো সীমা নেই। তবে দ্বিতীয় রাকাতের কেরাত প্রথম রাকাতের কেরাতের চেয়ে বড় না হওয়া ভালো। 

যে কেরাত পারে না

যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কেরাতই না পারে, তাশাহহুদ-দরুদ শরীফ-দুআয়ে মাছুরা ইত্যাদিও না পারে, তাহলে সে সর্বত্রই সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ- এসব তাসবিহ পড়তে থাকবে এবং সূরা ও দুআ সহীহশুদ্ধভাবে শেখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এর আগ পর্যন্ত সে এভাবেই তাসবিহের মাধ্যমে নামায পড়তে থাকবে। 

কেরাতের ভুল

কেরাত অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে যদি তাজবীদ সংক্রান্ত কোনো ভুল হয়, তাহলে অবশ্য নামায হয়ে যাবে। কিন্তু যদি এক শব্দের পরিবর্তে আরেক শব্দ পড়া হয়, ভুলবশত দুই জায়গার দুই আয়াত বা আয়াতাংশকে মিলিয়ে পড়া হয়- এ জাতীয় ভুলের কারণে কখনো কখনো নামায ভেঙে যেতে পারে। আবার এ জাতীয় ভুল হলেই যে নামায ভেঙে যাবে- বিষয়টি এমনও নয়। তাই কখনো এমন হয়ে গেলে  তখন আলেমদের শরণাপন্ন হবে। 

কেরাতের ভুলে কখন নামায ভঙ্গ হয়

অনেকে মনে করেন, নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ কেরাত পড়ার পর যদি কেরাতে কোনো ভুল হয়, তাহলে এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়। কেরাতের যে ভুলে নামায ভেঙে যায়, তা যখনই হোক, তিন আয়াত পরিমাণ পড়ার আগে হোক কিংবা পরে, নামায ভেঙে যাবে। উল্লেখ্য, কেরাতের সবরকম ভুলে নামায ভাঙ্গে না।

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ২,২১০,১৯২

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন