
Post Updated at 21 May, 2025 – 11:10 AM
গত কয়েক বছর ধরেই বাইতুল্লাহর তাওয়াফের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা চলছে। মাতাফে যে কেউ যে কোনো সময় যেতে পারে না। সেখানকার কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তানুসারে, মাতাফে যেতে হলে ইহরাম বেঁধেই যেতে হবে। ইহরাম ছাড়া কেউ মাতাফে যেতে পারবে না। এ আইন অবশ্য শুধু পুরুষদের জন্যে, নারীরা আগের মতোই এখনো মাতাফে যেতে পারেন।
এ আইনের ফলে হজ-উমরার সফরে প্রথমবার তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যাওয়ার পর আর মাতাফে যাওয়া যায় না। তাওয়াফ করতে চাইলে মসজিদে হারামের দোতলা দিয়ে তাওয়াফ করতে হয়। দোতলা দিয়ে তাওয়াফ করতে গেলে তুলনামূলক অনেক বেশি সময় লাগে, কষ্টও বেশি হয়। আবার নিচতলার মাতাফে তাওয়াফ করলে বাইতুল্লাহর কাছাকাছি থাকার যে আবেগ ও তৃপ্তি, তাও দোতলায় একটু কম অনুভূত হতে পারে।
অবশ্য হারামাইন কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তও অযৌক্তিক নয়। এর ফলে উমরা আদায়কারীরা অনেকটা নির্বিঘ্নে তাদের উমরার ফরয তাওয়াফটি সম্পন্ন করতে পারেন। ইহরাম ছাড়া যেহেতু মাতাফে যাওয়া যায় না, তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে তাওয়াফকারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে। এতে সহজেই উমরা সম্পাদন করা যায়।
কিন্তু যারা দূর-বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে হজ বা উমরা করতে যান, তাদের জন্যে এ আইনটি মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর। অনেক দিনের সঞ্চিত আবেগ, দীর্ঘ সফর, মোটা অঙ্কের ব্যয়- এ সবকিছু উপেক্ষা করে একজন হজ বা উমরাআদায়কারী যখন মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান, এবং একবার তাওয়াফ-সাঈ করে হালাল হয়ে যান, তখন আর তিনি মাতাফে যেতে পারেন না। মাতাফে যেতে না পারা মানে কাছ থেকে বাইতুল্লাহ দেখা যাবে না, বাইতুল্লাহর পাশে তাওয়াফ করা যাবে না। দূর থেকে দেখতে হবে, দূর থেকে তাওয়াফ করতে হবে। রুকনে ইয়ামানিতে স্পর্শ করা, হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া, মুলতাযাম স্পর্শ করা ইত্যাদি কোনো কিছুরই সুযোগ থাকে না।
ফলে কেউ কেউ আবেগের বশবর্তী হয়ে ইহরামের নিয়ত না করেই ইহরামের কাপড় পরেন এবং কর্তৃপক্ষের আইনকে পাশ কাটিয়ে মাতাফে প্রবেশ করেন। সন্দেহ নেই, এমনটা যারা করেন, তারা বাইতুল্লাহ শরীফের প্রতি প্রবল ভালোবাসার কারণেই করে থাকেন। তা সত্ত্বেও এমনটা না করাই বাঞ্ছনীয় ও কাম্য। কারণ এতে সেখানকার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করা হয় এবং অনেকটা তা ধোঁকা দেয়ারও নামান্তর।
কারও মনে এ প্রশ্ন আসতেই পারে- দোতলা দিয়ে একবার তাওয়াফ করতে যে সময় লাগে, সে সময়ে অনায়াসে নিচতলায় দুই-তিনটি তাওয়াফ করা যাবে। তাই আইন পাশ কাটিয়ে যদি বেশি তাওয়াফ করা যায়, তাহলে মন্দ কী! এ ভাবনা থেকেও কেউ কেউ ইহরামের নিয়ত না করেই শুধু ইহরামের চাদর পরে মাতাফে চলে যান। এ ক্ষেত্রে মনে রাখার কথা হলো, তাওয়াফের সংখ্যা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কত বেশি সংখ্যক তাওয়াফ করা হলো, এটা বিবেচ্য নয়। দেখার বিষয় হলো, আপনি কত বেশি সময় তাওয়াফে কাটালেন। এ বিবেচনায় দোতলা দিয়ে তাওয়াফ আর মাতাফে তাওয়াফের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। বরং দোতলার তাওয়াফ একটু বেশি কষ্টকর হওয়ার কারণে এতে সওয়াব বেশিও পাওয়া যেতে পারে।
অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন- দোতলা দিয়ে তাওয়াফ করতে গেলে অনেক কষ্ট হবে, অনেক পথ হাঁটতে হবে ইত্যাদি। মানসিক এ দুর্বলতার কারণেও অনেকে ইহরামের নিয়ত না করেই ইহরামের কাপড় পরে মাতাফে প্রবেশ করেন। অথচ একটু হিম্মত করলেই দোতলার তাওয়াফ কোনো কঠিন বিষয় থাকে না। মাসআলা হলো, তাওয়াফের সাত চক্কর যদি এক নাগাড়ে কেউ শেষ করতে না পারে, তাহলে মাঝে বিরতি দিয়েও সাত চক্কর আদায় করা যাবে, অসুবিধা নেই। আর দোতলা দিয়েই আল্লাহ তাআলার এমন অনেক বান্দারা তাওয়াফ করেন, যারা বয়সে প্রবীন, এমনকি বৃদ্ধও। স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গেই তারা সেখানে তাওয়াফ করে থাকেন। তাই প্রয়োজন শুধু একটু হিম্মতের।
আর যদি কেউ নিচের মাতাফেই তাওয়াফ করতে চান, তাহলে তিনি মাঝেমধ্যে মসজিদে আয়েশা থেকে নফল উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে আসতে পারেন। এ নফল উমরার যদিও বিশেষ কোনো ফযিলত নেই, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা ও ধোঁকা দেয়া থেকে বেঁচে থাকা যাবে। কিন্তু কিছুতেই ইহরামের নিয়ত না করে শুধুই ইহরামের চাদর গায়ে জড়িয়ে মাতাফে প্রবেশ করা উচিত নয়।
Leave a Reply