Post Updated at 5 Jun, 2023 – 12:39 PM

হজের সময় সংঘটিত হওয়া কিছু সাধারণ ভুল নিচে তুলে ধরা হলো :

১. ইহরামের পূর্বেই টুপি ছাড়া নামাজ পড়া

ইহরাম হলো হজের নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) পাঠ করা। এ দুটি কাজের মাধ্যমেই ইহরাম সম্পন্ন হয়। ইহরাম বাঁধার পূর্বে সেলাইবিহীন কাপড় পরে নিতে হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পূর্বেই ইহরাম বাঁধা যদিও উত্তম, কিন্তু বর্তমান সময়ে বিমানের ফ্লাইট অনাকাক্সিক্ষতরূপে বিলম্বিত হয়ে যেতে পারে বিধায় এয়ারপোর্টের ভেতরের আনুষ্ঠানিকতা সারার পর যখন ফ্লাইট মোটামুটি নিশ্চিত হয়, তখনই ইহরাম বাঁধা নিরাপদ। তবে কেউ চাইলে ইহরামের কাপড় বাড়ি থেকেও পরে আসতে পারেন, এয়ারপোর্টে বা হজক্যাম্পে এসেও পরতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ইহরামের কাপড় পরাই ইহরাম নয়। তাই সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরার পরও যতক্ষণ হজের নিয়ত ও তালবিয়ার মাধ্যমে ইহরাম সম্পন্ন না হবে, ততক্ষণ যে কোনো ধরনের নামাজ টুপি মাথায় দিয়েই পড়বেন। ইহরামের পূর্বে খালি মাথায় নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকুন। তবে ইহরাম বাঁধার পর থেকে হালাল হওয়া পর্যন্ত টুপি মাথায় দেওয়া নিষিদ্ধ।

 

২. ইহরাম অবস্থায় কাবাঘর কিংবা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা

ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা, এমনকি স্পর্শ করাও নিষেধ। বায়তুল্লাহ শরীফের গায়ে ও গিলাফে এবং হাজরে আসওয়াদে সুগন্ধি দেয়া থাকে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে না জেনে অনেকে ইহরাম অবস্থাতেই বায়তুল্লাহর গিলাফ, দেয়াল কিংবা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেন। এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

৩. দলবদ্ধভাবে তওয়াফ করা

কাবাঘরের তওয়াফ অত্যন্ত বরকতপূর্ণ একটি আমল। তওয়াফ একাকী করাই নিয়ম। অর্থাৎ প্রত্যেকে যার যার মতো করে তওয়াফ করবে। অনেককে দেখা যায়, বড়-সড় দল নিয়ে একসঙ্গে তওয়াফ করে। এতে অন্যদের তওয়াফের গতিতে ব্যাঘাত ঘটে। অনেকে আবার তওয়াফের সময় দলবদ্ধভাবে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকে। এতেও অন্যদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বিনষ্ট হয়। তওয়াফ নামাজের মতোই পবিত্রতা ও ধ্যান-খেয়ালের সঙ্গে আদায় করতে হয়।

৪. রমল করতে গিয়ে অন্যদের কষ্ট দেয়া

রমল হলো তওয়াফের সময় একটু দ্রুতবেগে বীরের মতো কাঁধ হেলিয়ে চলা। উমরার তওয়াফ এবং হজের তওয়াফের শুধু প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত। নফল তওয়াফে রমল করার কোনো বিধান নেই। আর রমল কেবল পুরুষই করবে, নারীরা নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে, রমল করতে গিয়ে যেন অন্য তওয়াফকারীদের কোনোরূপ কষ্ট না হয়। বিশেষত হজের সময় যেহেতু অস্বাভাবিক ভিড় হয়, তাই তখন রমল করলে অন্যদের কষ্ট হবেই। ফলে তখন রমল করা যাবে না। সুযোগ পেলে সামান্য লাফিয়ে লাফিয়ে চলা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, রমল না করলেও তওয়াফ হয়ে যাবে, কিন্তু রমল করতে গিয়ে কাউকে কষ্ট দেয়া জায়েজই নয়।

৫. সাঈর সময় ইজতিবা করা

উমরার তওয়াফের সময় গায়ের কাপড়টি ডান বগলের নীচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর পরতে হয়। একে ইজতিবা বলে। তবে এটি শুধু তওয়াফের সময়ই সুন্নত। তওয়াফের পর সাফা-মারওয়ায় সাঈর সময় ইজতিবার কোনো বিধান নেই। তাই তা থেকে বেঁচে থাকুন।

৬. মাকামে ইবরাহীমের সামনে তওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে গিয়ে তওয়াফকারীদের কষ্ট দেয়া

নফল হোক কিংবা ফরজ হোক, প্রত্যেক তওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাত মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে পড়া সুন্নত। তবে হজের মৌসুমে সেখানে যথেষ্ট ভিড় থাকে। এ ভিড়ের মধ্যেই কেউ কেউ নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। এতে নামাজের একাগ্রতাও নষ্ট হয়, অন্য তওয়াফকারীদের তওয়াফেও ব্যাঘাত ঘটে। তাই মাকামে ইবরাহীম বরাবর একটু পেছনের দিকে সরে গিয়ে এমনকি মাতাফের একেবারে শেষদিকে নামাজ পড়লে একদিকে যেমন সহজেই অন্যদেরকে এ কষ্ট দেয়া থেকে বেঁচে থাকা যায়, আবার মাকামে ইবরাহিমকে সামনে রেখে এ দুই রাকাত নামাজ পড়ার সুন্নতও আদায় হয়। বরং যদি পুরো মাতাফ জুড়েই ভিড় থাকে, তাহলে মসজিদে হারামের যে কোনো জায়গায় এই দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেয়াই যথেষ্ট।

৭. তওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ না পড়ে পুনরায় তওয়াফ শুরু করে দেওয়া

তওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। তাই সাত চক্করের মাধ্যমে যখন এক তওয়াফ পূর্ণ হবে, তখন আগে দুই রাকাত নামাজ পড়–ন, এরপর আবার তওয়াফ শুরু করুন। এক তওয়াফের নামাজ না পড়েই আরেক তওয়াফ শুরু করে দেয়া ঠিক নয়। তবে উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান যেহেতু হানাফি মাজহাব অনুসরণ করে আর হানাফি মাজহাব অনুসারে সুবহে সাদেকের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এই তওয়াফের নামাজ পড়া যাবে না, তাই এই সময় দুটিতে যদি কেউ তওয়াফ শেষ করে তাহলে দুই রাকাত নামাজ না পড়েই সে আরেক তওয়াফ শুরু করতে পারবে। পরবর্তীতে প্রত্যেক তওয়াফের জন্যে দুই রাকাত করে নামাজ পড়ে নিতে হবে।

৮. তওয়াফের সময় কাবার দিকে তাকানো কিংবা ফেরা

কাবাঘরের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও একটি বরকতপূর্ণ আমল। কিন্তু তওয়াফের সময় বিধান হচ্ছে, কাবাঘর সর্বদা বাম দিকে থাকবে। কাবাঘরের দিকে সিনা ঘোরানো কিংবা তাকানো নিষিদ্ধ। রুকনে ইয়ামানিতে যদি হাতে স্পর্শ করার সুযোগ থাকে, তাহলে তখন কাবাঘরের দিকে ফেরা যাবে, কিন্তু সঙ্গেসঙ্গেই আবার কাবাকে বামদিকে রেখে সামনের দিকে চলতে হবে। এরপর হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে সম্ভব হলে চুমো খাওয়া, অন্যথায় পাথরের দিকে ফিরে দূর থেকেই হাতে ইশারা করে হাতে চুমু খেতে হবে। অনেকে তওয়াফ চলাকালীন কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেকে আবার একটু সুযোগ পেলেই তওয়াফের মাঝে কাবার গায়ে জড়িয়ে ধরে। এসব থেকে বিরত থাকা উচিত। অবশ্য কখনো যদি অনিচ্ছাকৃত কাবাঘরের দিকে নজর পড়ে, তাহলে এতে সমস্যা হবে না।

৯. হজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার জন্যে ধাক্কাধাক্কি করা

তওয়াফের নিয়ম হলো, প্রতি চক্করের শুরুতে হজরে আসওয়াদে চুমু খেয়ে তওয়াফ শুরু করা এবং সাত চক্কর শেষ করে আবার হজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া, আর যদি ভিড়ের কারণে চুমু খাওয়া কষ্টকর হয় তাহলে দূর থেকে পাথরের দিকে হাতে ইশারা করে হাতেই চুমু খাওয়া। অনেককে দেখা যায়, ভিড় ঠেলে অনেক কসরত ও ধাক্কাধাক্কি করে হজরে আসওয়াদে চুমু দিতে যান। কখনো দেখা যায়, ভিড় ঠেলে চুমু খাওয়া শেষে আর বেরিয়ে আসার পথ পান না। এমন ধাক্কাধাক্কি পরিহার করা উচিত।

১০. রুকনে ইয়ামানিতে চুমু খাওয়া কিংবা ইসতিলাম করা

রুকনে ইয়ামানি অর্থাৎ হজরে আসওয়াদের আগের কোণে তওয়াফের সময় হাতে স্পর্শ করা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে এর পরিবর্তে অন্য কোনো কিছু করার বিধান নেই। অনেকে হজরে আসওয়াদের মতো এখানেও হাতে চুমু খায় কিংবা ইসতিলাম করে। কেউ কেউ আবার রুকনে ইয়ামানিতেই চুমু খায়। এগুলো নিয়মবহির্ভূত।

১১. তওয়াফ কিংবা সাঈর সময় নির্দিষ্ট দোয়া পড়া জরুরি মনে করা

তওয়াফ ও সাঈর সময় নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পড়া জরুরি নয়। নিজের মুখস্থ যে কোনো দোয়া পড়া যেতে পারে। যারা পারেন, তারা রুকনে ইয়ামানি থেকে হজরে আসওয়াদ পর্যন্ত জায়গাটুকু হাঁটার সময় ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনয়া হাসানাহ…’ দোয়াটি পড়তে পারেন। না পারলে কোনো সমস্যা নেই। এ দোয়াটিসহ আরও কিছু দোয়াকে অনেকে জরুরি মনে করে। কেউ সাত চক্করের জন্যে সাতটি দোয়াকে নিয়ম মনে করে। আর জরুরি নয় এমন একটি বিষয়কে জরুরি মনে করার কারণে দেখা যায়, কাফেলাপ্রধান তার কাফেলার হাজী সাহেবদের দোয়া পড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি প্রথমে পড়েন, পরে অন্যরা পড়ে। এর ফলে তাদের আমলটি যেমন নিয়মবহির্ভূত হয়, তেমনি অন্যদের তওয়াফের একাগ্রতাও নষ্ট হয়।

১২. কাবাঘরের যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরা

অনেকে সুযোগ পেলেই কাবাঘরের যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরে। অথচ এমনটি করা তওয়াফের সময় এবং তওয়াফের বাইরে কখনোই উচিত নয়। কাবাঘরের তিনটি স্থানে স্পর্শ করার বিধান রয়েছে। এক. হজরে আসওয়াদ, দুই. রুকনে ইয়ামানি, তিন. মুলতাজাম অর্থাৎ হজরে আসওয়াদ থেকে কাবাঘরের দরজা পর্যন্ত স্থান। হজরে আসওয়াদে স্পর্শ করা এবং চুমু খাওয়া সুন্নত। রুকনে ইয়ামানিতে উভয় হাতে শুধুই স্পর্শ করা সুন্নত। আর তওয়াফ শেষ করার পর মুলতাজামে উভয় হাত বুক গাল জড়িয়ে ধরার কথা হাদীসে এসেছে। এছাড়া কাবাঘরের অন্য কোনো স্থান বা গিলাফ ধরার কোনো বিধানও নেই, এতে কোনো সওয়াবও নেই।

১৩. হুইল চেয়ারে তওয়াফ বা সাঈ করা

অনেককে দেখা যায়, হেঁটে তওয়াফ বা সাঈ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হুইল চেয়ারে করে তওয়াফ-সাঈ করে থাকে। সাধারণত ধনী লোকদেরকেই এমনটি করতে দেখা যায়। হেঁটে তওয়াফ-সাঈ করার সামর্থ্য থাকলে হুইল চেয়ারে করে তওয়াফ-সাঈ আদায় হবে না।

১৪. চুল যদি ছোট থাকে তবুও হালাল হওয়ার সময় মাথা না মুণ্ডিয়ে চুল ছোট করা

ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে মাথার চুল মু-াতে হয় কিংবা ছোট করতে হয়। ছোট করলে কমপক্ষে হাতের এক কর বা এক ইঞ্চি পরিমাণ ছোট করতে হবে। যদি আগে থেকেই চুল এর চেয়ে ছোট থাকে, তাহলে মু-িয়ে ফেলতে হবে। অনেককে দেখা যায়, ছোট ছোট চুলই আরেকবার ছোট করে কেটে নেয়। এভাবে ছ্টো করা যথেষ্ট নয়। বরং চুল যদি এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটা সম্ভব না হয়, তাহলে মু-িয়ে ফেলতে হবে।

১৫. অর্ধেক মাথা মুণ্ডানো

কেউ কেউ প্রথমে উমরার ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্যে অর্ধেক মাথা মুণ্ডায়। পরবর্তীতে হজের সময় আবার অর্ধেক মাথা মুণ্ডানোর নিয়ত করে রাখে। এটি ভুল। মাথা মুণ্ডালে পুরো মাথাই মুণ্ডাতে হবে। অবশ্য যদি মাথা না মুণ্ডিয়ে চুল ছোট করে তাহলে অধিকাংশ চুল ছোট করাই যথেষ্ট, পুরো মাথার প্রতিটি চুল ছোট করতে হবে না।

১৬. মিনার জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ

মিনায় শোয়ার জন্যে একজন হাজী সাহেবের জন্যে যতটুকু জায়গা বরাদ্দ থাকে, তা খুবই কম। মিনার মাঠে অনেক সময়ই এ নিয়ে হাজী সাহেবদের মাঝে বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, হজের মূল কার্যক্রম মিনা থেকেই শুরু হয়। তাই এসময় যেন শয়তান ধোঁকায় ফেলে নিজেদের মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে হজকে প্রাণহীন করে না ফেলে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

১৭. আরাফার মাঠে কথাবার্তা আনন্দফূর্তিতে মেতে থাকা

আরাফার মাঠের অবস্থানের মূল সময় সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর থেকে শুরু হয়। অনেককে দেখা যায়, এ বরকতময় সময়েও অনর্থক কথাবার্তা আনন্দফূর্তিতে মেতে থাকে। বিশেষত যুবক ও কম বয়সের হাজী সাহেবগণ এ ভুলে জড়িয়ে পড়েন। এ থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৮. তালবিয়া না পড়া

ওমরার ইহরামের পর থেকে তাওয়াফ শুরু করা পর্যন্ত এবং হজের ইহরাম বাঁধার পর থেকে পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করার নিয়ম। এসময় তালবিয়াই সবচেয়ে উত্তম আমল। কিন্তু অনেকেই তালবিয়া পড়েন না। মিনা-আরাফা-মুজদালিফা সর্বত্রই তালবিয়া পাঠ করা উচিত। ১০ জিলহজ পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে হয়।

১৯. আরাফার মাঠের গোসলের সময়

আরাফার দিন গোসল করা সুন্নত। তবে সে সুন্নতের সময় শুরু হয় সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর থেকে। কিন্তু অনেকেই সকাল বেলা গোসল সেরে ফেলেন এবং এ গোসলকেই সুন্নত মনে করে থাকেন। এটি ভুল। সুন্নত গোসলের জন্যে নির্ধারিত সময়েই গোসল করতে হবে। তবে এও লক্ষ রাখতে হবে, সুন্নত গোসল আদায় করতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যেন খুব বেশি সময় ব্যায় না হয়। এমন পরিস্থিতিতে গোসল না করে ইবাদতে মশগুল হয়ে যাওয়াই ভালো।

২০. আসরের পরপরই গাড়িতে ওঠার জন্যে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়া

আসরের পরের সময়টি দোয়া কবুলের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। অথচ অনেক হাজী সাহেব এসময় গাড়িতে ওঠার জন্যে হুড়োহুড়ি করতে থাকেন। এতে হজের বরকত নষ্ট হয়। কখনো অবশ্য কাফেলাপ্রধানের চাপেও মাঠ ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসে থাকতে হয়। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে গাড়িতে বসেই দোয়া-দরুদ পড়তে থাকুন। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত গাড়িগুলো আরাফার মাঠের ভেতরেই থাকে।

২১. সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার মাঠ ত্যাগ করা

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করা আবশ্যক। সৌদি সরকারের কড়াকড়ির কারণে গাড়িগুলো যদিও সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার মাঠ ত্যাগ করে না, কিন্তু যারা হেঁটে মুজদালিফায় যান, তাদের কেউ কেউ সূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফার মাঠ ছেড়ে যান। এমন করলে পুনরায় আরাফার মাঠে ফিরে যেতে হবে, অন্যথায় দম দিতে হবে।

২২. মুজদালিফা থেকে কংকর সংগ্রহ করাকে জরুরি মনে করা

মুজদালিফার অবস্থানের পরবর্তী আমল শয়তানের স্তম্ভগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা। প্রথম দিন একটি স্তম্ভে, আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন তিনটি স্তম্ভে। মুজদালিফায় অনেক পাথর রয়েছে। সেখান থেকে পাথর সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে এটি কোনো জরুরি বিষয় নয়। মিনার মাঠ ও রাস্তাঘাটেও পাথর পাওয়া যায়। মিনা থেকে হোক আর মুজদালিফা থেকে হোক, কোনো এক জায়গা থেকে নিয়ে পাথর নিক্ষেপ করলেই হবে। কেউ কেউ অবশ্য এমনও মনে করেন, গুনে গুনে তিন দিনের মোট ৪৯টি পাথর মুজদালিফা থেকে নিতে হবে। একটি পাথর বেশি নিলে তা মুজদালিফায় রেখে যেতে হবে আর কম নিলে মুজদালিফা থেকে নিয়ে যেতে হবে। এসব কথা ভিত্তিহীন।

২৩. কংকর না মেরে জুতা কিংবা বড় পাথর ইত্যাদি নিক্ষেপ করা

আবেগের বশবর্তী হয়ে কেউ কেউ ছোট পাথরের পরিবর্তে বড় পাথর কিংবা জুতা নিক্ষেপ করে। এমনটি করা ঠিক নয়। নিয়ম হলো, ছোলার মতো ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করা।

২৪. প্রত্যেক স্তম্ভে কংকর মারার পর দোয়া করা

প্রথম দুই স্তম্ভে শয়তানকে কংকর মারার পর কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করার নিয়ম আছে। এ সময় দোয়া কবুল হয়। কিন্তু তৃতীয় স্তম্ভে পাথর মারার পর সেখানে আর দেরি না করে সরে যেতে হয়। এখানে দোয়া করার নিয়ম নেই। প্রথম দিন কেবল এ তৃতীয় স্তম্ভেই পাথর মারতে হয়। অনেকে তিন স্তম্ভে পাথর মারার পরই দোয়া করেন। এটা ঠিক নয়।

২৫. কংকর-কুরবানি-মাথা মুণ্ডানো এ ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা

দশ তারিখে মুজদালিফায় অবস্থান শেষে তিনটি আমল করতে হয়। এক. কংকর নিক্ষেপ, দুই. কুরবানি, তিন. মাথা মু-ানো। হানাফি মাযহাব অনুসারে, এই তিনটি আমলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব।

২৬. দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই পাথর মারা

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে যোহরের নামাজের সময় হওয়ার পর পাথর মারার সময় শুরু হয়। এর পূর্বে পাথর মারলে তা আদায় হবে না। কেউ কেউ সকাল বেলা পাথর মেরে চলে আসেন। এতে ওয়াজিব আদায় হবে না।

২৭.সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্যকে দিয়ে পাথর নিক্ষেপ করানো

শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা হজের একটি ওয়াজিব আমল। ১০-১২ জিলহজ পর্যন্ত তিন দিনই এ আমলটি করতে হয়। প্রথম দিন সাতটি, পরের দুই দিন ২১ টি করে মোট ৪৯ পাথর মারতে হয়। কেউ যদি ১২ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় কাটান, তবে তিনি আরও ২১ টি পাথর মারবেন। এ ওয়াজিব আমলটি নিজেই করতে হবে। সামান্য কোনো অজুহাতে, যেমন, ভিড় বা অন্য কিছু, এ আমলটি অন্যকে দিয়ে করানো জায়েজ নয়। এমন অজুহাতে যদি অন্যকে দিয়ে কেউ পাথর নিক্ষেপ করায়, তবে নিজে গিয়ে আবার পাথর মারতে হবে , নতুবা তার ওপর দম ওয়াজিব হবে।

হ্যাঁ, যদি কেউ এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে, তার জন্যে এখন বসে বসে নামাজ পড়া জায়েজ, অথবা তার জন্যে নিজে গিয়ে পাথর মারা অতিশয় কষ্টকর, কিংবা সে পাথর মারতে গেলে তার রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সে অন্যকে দিয়ে পাথর মারাতে পারে। অন্যথায় নয়।

অন্য কারও পক্ষ থেকে পাথর মারতে হলে তার অনুমতি লাগবে। অনুমতি ছাড়া কেউ অন্যের পাথর মেরে আসলে তাতে ওয়াজিব আদায় হবে না। হ্যাঁ, ব্যক্তি যদি পাগল বা অচেতন কিংবা ছোট বাচ্চা হয়, তবে তার অনুমতি ছাড়াও তাদের অভিভাবকেরা তাদের পক্ষ থেকে পাথর মারতে পারবেন।

২৮. কোনো ওজর ছাড়াই মিনার দিনগুলোতে মক্কায় অবস্থান করা

১০ জিলহজ মুযদালিফা থেকে ফেরার পর থেকে ১২ জিলহজ মিনা থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত রাতগুলো মিনায় কাটানো সুন্নত। কোনো ওজর ছাড়া রাতগুলো মিনার বাইরে কাটানো মাকরুহ। অনেকেই ১০ জিলহজ পাথর মেরে মক্কায় চলে আসেন। কুরবানি ও তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করেন। এরপর সে রাতটিও মক্কাতেই কাটিয়ে দেন। পরের দিন মক্কা থেকে গিয়ে পাথর মারেন। এতে করে ১০ তারিখ দিবাগত রাতটি মিনায় কাটানোর সুন্নত ছুটে যায়। অবশ্য রাতের অধিকাংশ সময় যদি মিনায় কাটানো হয়, তবুও মিনায় রাত কাটানোর সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আর তাওয়াফ-সাঈ ইত্যাদির জন্যে যদি মক্কায় বিলম্ব হয় এবং রাত কেটে যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই।

কেউ কেউ আবার পুরো সময়ই মক্কার বাসা থেকে গিয়ে পাথর মারেন। কোনো ওজর ছাড়া এমনটি করা উচিত নয়।

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ